জনতার কণ্ঠ ডেস্ক: ক্ষমা মানে অপরাধ মার্জনা করে দেওয়া। আল্লাহর কাছে প্রত্যেকেরই ক্ষমা প্রার্থনা করা অপরিহার্য কর্তব্য। কারণ স্বয়ং আল্লাহ ক্ষমা প্রার্থনার নির্দেশ দিয়েছেন, ‘তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা করো আল্লাহর কাছে। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা মুজ্জাম্মিল, আয়াত : ২০)
আল্লাহর কাছে একনিষ্ঠ চিত্তে ক্ষমা প্রার্থনা করলে তিনি ক্ষমা করে দেবেন। কেননা আল্লাহপাক কোরআনের শতাধিক আয়াতে নিজেকে ক্ষমাশীল বলে ঘোষণা করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমার বান্দাদের জানিয়ে দাও যে নিশ্চয়ই আমি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও অপরিসীম দয়ালু।’ (সুরা হিজর, আয়াত : ৪৯)
অন্য আয়াতে তিনি বলেন, ‘এর পরেও কি তারা আল্লাহর দিকে ফিরে আসবে না (অর্থাৎ তাওবা করবে না) এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে না? অথচ আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত : ৭৪)
বান্দার প্রতি আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ অসীম। আল্লাহ বলেন, ‘বলো, হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছ, আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহ সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা জুমার, আয়াত : ৫৩)
ক্ষমা লাভের উপায়: কোরআন ও হাদিসে আল্লাহর ক্ষমা লাভ করার অনেক উপায় বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি উপায় এখানে উল্লেখ করা হলো—
ঈমান ও নেক কাজের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা: যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে ও নেক আমল করবে, আল্লাহ তাদের ক্ষমার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘যারা ঈমান আনে ও সত্কর্ম করে, আল্লাহ তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ক্ষমা ও মহাপুরস্কারের।’ (সুরা ফাতহ, আয়াত : ২৯; সুরা মায়েদা, আয়াত : ৯)
অন্যত্র তিনি বলেন, ‘আর যারা ঈমান আনে ও সত্কর্মসমূহ সম্পাদন করে, তাদের জন্য আছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।’ (সুরা ফাতির, আয়াত : ৭)
আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা: আল্লাহর ক্ষমা লাভের জন্য তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘আর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৯৯)
তিনি আরো বলেন, ‘যে কেউ দুষ্কর্ম করে অথবা স্বীয় জীবনের প্রতি অবিচার করে, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী হয়, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল ও দয়ালু পাবে।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১১০)
অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘ক্ষমা প্রার্থনা করো তোমার জন্য এবং মুমিন নর-নারীদের পাপের জন্য। আল্লাহ তোমাদের গতিবিধি ও অবস্থান সম্বন্ধে অবগত আছেন।’ (সুরা মুহাম্মদ, আয়াত : ১৯)
অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহ বলেন, হে আদম সন্তান! যত দিন তুমি আমাকে ডাকবে এবং আমার কাছে ক্ষমার আশা রাখবে, আমি তোমাকে ক্ষমা করব, তোমার অবস্থা যা-ই হোক না কেন। আমি কারো পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! তোমার গুনাহ যদি আকাশ পর্যন্তও পৌঁছায় অতঃপর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব। আমি ক্ষমা করার ব্যাপারে কারো পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার দরবারে উপস্থিত হও এবং আমার সঙ্গে কাউকে শরিক না করে আমার সামনে আসো, আমি পৃথিবী পরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার কাছে উপস্থিত হব। (তিরমিজি, হাদিস, ৩৫৪০)
তাওবা করা
আল্লাহর ক্ষমা লাভের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে পাপ করার পরই তাঁর কাছে অনুতপ্ত হয়ে তাওবা করা। আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই তাঁর বান্দাদের তাওবা কবুল করেন ও পাপ মোচন করেন।’ (সুরা শুরা, আয়াত : ২৫)
তিনি আরো বলেন, ‘এর পরও কি তারা আল্লাহর দিকে ফিরে আসবে না (অর্থাৎ তাওবা করবে না) ও তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে না? অথচ আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত : ৭৪)
তাকওয়া বা আল্লাহভীতি অর্জন করা
আল্লাহর নির্দেশিত বিষয় প্রতিপালন ও নিষিদ্ধ বিষয় পরিহার করার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন করা, যা ক্ষমা লাভের অন্যতম উপায়। আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! যদি তোমরা আল্লাহভীরু হও, তাহলে তিনি তোমাদের জন্য সত্য-মিথ্যা পার্থক্য করার পথ বের করে দেবেন এবং এর ফলে তোমাদের পাপ মোচন করবেন ও তোমাদের ক্ষমা করে দেবেন। বস্তুত আল্লাহ হলেন মহা অনুগ্রহশীল।’ (সুরা আনফাল, আয়াত : ২৯) অন্যত্র তিনি বলেন, ‘যারা দৃষ্টির অগোচরে তাদের প্রতিপালককে ভয় করে, তাদের জন্য আছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।’ (সুরা মুলক, আয়াত : ১২)
আল্লাহ আমাদের তাওফিক দিন। আমিন।