আল্লাহর জন্য রাজপ্রাসাদ ছেড়েছিলেন যে নারী
জুিমুররুদ খাতুন। একজন রাজকন্যা, প্রভাবশালী শাসকের স্ত্রী ও মা। ক্ষমতার শীর্ষে অবস্থান করেও যিনি সাধারণ জীবন যাপন করেন। অন্যায়ের প্রতিবাদে যিনি রাজপ্রাসাদ ত্যাগ করেন। জুলুমের রাজভোগের পরিবর্তে তিনি নিঃস্ব জীবন যাপন করাকেই উত্তম মনে করেন। জুমুররুদ খাতুন আধুনিক সিরিয়ার দামেস্কে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সাফওয়াতুল মুলুক জাওয়ালি ছিলেন দামেস্কের সেলজুক শাসক। তাঁর ভাই আবু নাসের শামসুল মুলুক দুকাকও পরবর্তী সময়ে শাসক নিযুক্ত হন। তিনি প্রথমে বুরি বিন তুগতেকিনকে বিয়ে করেন। জুমুররুদ খাতুন অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পুরুষদের খোজা করা বৈধ মনে করতেন না। ফলে রাজপ্রাসাদের কোনো খোজার সঙ্গে তিনি নির্জন হতেন না।
১১৩২ খ্রিস্টাব্দে জুমুররুদ খাতুনের ছেলে শামসুল মুলক ইসমাইল দামেস্কের শাসক হন। কিন্তু তিনি ন্যায়পরায়ণ না হওয়ায় মা তাঁকে পছন্দ করতেন না। জনগণের প্রতি ইসমাইলের অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে গেলে এবং সে ইমামুদ্দিন জাংকিকে দামেস্কের ক্ষমতা গ্রহণের আহ্বান জানলে জুমুররুদ খাতুন মামলুক সেনাদের সহযোগিতায় প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি ১১৩৫ খ্রিস্টাব্দে তাঁর বাহিনী ইসমাইলকে হত্যা করে। বড় ছেলে নিহত হওয়ার পর দ্বিতীয় ছেলে শিহাবুদ্দিন মাহমুদ সিংহাসনে আরোহণ করেন। এ সময় দামেস্কের স্বাধীনতা রক্ষা ও ছেলের রাজত্ব সুসংহত করতে তিনি ক্ষমতার অংশীদার হন এবং মা-ছেলে উভয়ের পক্ষে আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করেন। মুসলিম ইতিহাসে ক্ষমতার অংশীদার হিসেবে কোনো নারীর পক্ষে এমন শপথগ্রহণের ঘটনা খুবই বিরল। খলিফা তাঁকে বরখাস্ত না করে, কেবল ছেলের নিয়োগকে অনুমোদন দেন।
১১৩৮ খ্রিস্টাব্দে ইমামুদ্দিন জাংকি তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার আগ পর্যন্ত জুমুররুদ খাতুন পরোক্ষভাবে দামেস্ক শাসন করেন। মূলত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার আশায় তিনি বিয়েতে রাজি হন এবং বিয়ের পর আলেপ্পো চলে যান। ১১৩৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁর ছেলে নিহত হন। ছেলে নিহত হওয়ার নানা কারণে শাম থেকে মক্কায় হিজরতের সিদ্ধান্ত নেন। অন্যদিকে দামেস্কে তাঁর পরিবারও ক্ষমতাচ্যুত হয়।
ব্যক্তিগত জীবনে জুমুররুদ খাতুন একজন নেককার ও আল্লাহভীরু নারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি উস্তাদ আবু মুহাম্মদ তাউস ও আবু বকর কুরতুবি (রহ.)-এর কাছে কোরআন পাঠ করেন এবং নসর বিন ইবরাহিম মাকদিসি (রহ.)-এর কাছে হাদিস শ্রবণ করেন। জুমুররুদ খাতুন অধিক পরিমাণে নামাজ ও রোজা আদায় এবং দান-সদকা করতেন। আলেম ও বুজুর্গ ব্যক্তিদের ভালোবাসতেন। তিনি দামেস্কের বিখ্যাত খাতুন মসজিদ নির্মাণ করেন। মসজিদের আঙিনায় মাদরাসাও প্রতিষ্ঠা করেন। মাদরাসা-মসজিদ পরিচালনার জন্য বিপুল পরিমাণ সম্পদ ওয়াকফ করেন।
ইমামুদ্দিন জাংকির সঙ্গে জুমুররুদ খাতুনের সংসার ভেঙে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো পারিবারিক ও রাজনৈতিক অঙ্গীকার পূরণে ব্যর্থতা এবং জনসাধারণের প্রতি অবিচার। তিনি চাইলে ইমামুদ্দিনের প্রাসাদে আয়েশি জীবন যাপন করতে পারতেন। কিন্তু তা না করে তিনি হিজরতের সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমে মক্কায় যান এবং সেখানে এক বছর অবস্থান করেন। এরপর মদিনায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। শেষ বয়সে তিনি নিঃস্ব হয়ে যান। তবে অন্যের সহযোগিতা গ্রহণ না করে কাজ করে খেতেন। তিনি গম ও বার্লি চালনার কাজ করতেন। এতে যে সামান্য অর্থ পেতেন তা দিয়েই কষ্টেসৃষ্টে জীবন যাপন করতেন। বেশির ভাগ সময় তিনি ইবাদতে মগ্ন থাকতেন। ৫৫৭ হিজরিতে এই মহীয়সী নারী ইন্তেকাল করেন।