ইতিহাসের পাতায় সেনানিবাসের বাড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক : বেগম খালেদা জিয়াকে সেনানিবাসের বাড়ি থেকে নির্দয়ভাবে উচ্ছেদ করেন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে উচ্ছেদ প্রক্রিয়াটি ছিলো অত্যন্ত অপমানজনক। ২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর শহীদ মইনুল রোডের বাড়ি থেকে এক কাপড়ে বের করে দেয়া হয় খালেদা জিয়াকে। বল প্রয়োগ করে বাড়ির ফটক ও শয়ন কক্ষের দরজা ভেঙে ফেলে নিরাপত্তাবাহিনী। তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে সেনানিবাস থেকে বের করে দেয়াই ছিলো হাসিনার মূল উদ্দেশ্য। ২০০৯ সালে ফেব্রুয়ারিতে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে দ্বিতীয় মেয়াদে অভিষেক শুরু হয় হাসিনার। সে সময়ই সেনা হত্যার ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে এপ্রিলে বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দেয়া হয় খালেদা জিয়াকে। বিষয়টি গড়ায় আদালতে। সকল আইন ও নিয়মনীতি অমান্য করে শেষ পর্যন্ত বাড়ি ছাড়া করেন । এই ঘটনার মধ্য দিয়ে নৈরাশ্যবাদী হাসিনা চরিতার্থ করেন দীর্ঘ দিনের লালিত প্রতিহিংসা। খালেদামুক্ত করেন সেনানিবাস।

এক যুগের ব্যবধানে খালেদা জিয়া ঠিকই সসম্মানে ফিরেছেন সেনানিবাসে। সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন তিনি। অপরদিকে গণঅভ্যুত্থানের মুখে শুধু গণভবন নয়, দেশছাড়া হয়েছেন হাসিনা।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর হাসিনার শ্যান দৃষ্টি পড়ে বাড়িটির উপর। তখন থেকেই বাড়িটি ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা চালায় আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু তাতে সফল না হওয়ায় ২০০১ সালের ২ জুলাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রীপরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ধানমন্ডিতে শেখ রেহানার নামে একটি বাড়ি বরাদ্দ দেয়। দখলী স্বত্ব নিয়ে জটিলতা থাকায় পরবর্তীতে বাড়িটির বরাদ্দ বাতিল করে দেয় বিএনপি সরকার। শেখ হাসিনা নিজে ১ টাকা মূল্যে রাষ্ট্রীয় আইকন গণভবন খরিদ করে নেয়ার উদ্যোগ নিলে তা ভন্ডুল হয়ে যায় গণপ্রতিবাদের মুখে। গণভবন হারানোর দুঃখবোধ থেকেই শেখ হাসিনা খালেদা জিয়াকে সেনানিবাসের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেন চেষ্টা করেন অন্তজ্বালা নিবারণের জন্য। শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে বলেন, খালেদা জিয়া বাড়িটি ছেড়ে দিলে বিডিআর হত্যাকাণ্ডে শহীদ পরিবারদেরকে সেখানে ফ্ল্যাট তৈরি করে দেয়া হবে। একটি শহীদ পরিবারকে উৎখাত করে অন্য শহীদ পরিবারকে সেখানে পুর্ণবাসন করার চিন্তা শুধু অযৌক্তিকই নয়, অনৈতিকও বটে। সরকার একবার বলেন খালেদা জিয়ার বাড়ি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে অবৈধভাবে । আবার বলেন তার নামে বরাদ্দকৃত বাড়িটির শর্ত বরখেলাপ করেছেন তিনি। এক একবার একেক ধরনের কথা বলেন।

খালেদা জিয়ার এই বাড়ি ছাড়া সেনানিবাস এবং ৫৬ হাজার বর্গমাইল আয়তনের বাংলাদেশে আর কোথাও কি কোনো জায়গা ছিল না পিলখানা শহীদদের ফ্ল্যাট তৈরির জন্য? খালেদা জিয়ার বাড়িটিই কেন বেছে নেয়া হলো? সেনানিবাসে থেকে রাজনীতি করা যাবে না এমন কোনো আইন বাংলাদেশের সংবিধানে নেই। অথচ আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী লেঃ কর্নেল (অবঃ) ফারুক খান সহ বহু নেতা রাজনীতি করছিলেন সেনানিবাস এলাকায় বসবাস করে। খালেদা জিয়ার নামে সেনানিবাসে যে বাড়িটি বরাদ্দ দেয়া হয় তাতে নাকি অনুমোদন ছিলো না মন্ত্রীসভার। অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই বছর ১ এপ্রিল লিখিত প্রশ্নোত্তরে জাতীয় সংসদকে জানিয়েছিলেন ১৯৮২ সালের ১৯ মার্চ এবং ২৫ মে অনুষ্ঠিত তৎকালীন মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকে জিয়াউর রহমানের স্ত্রী ও দু’পুত্রের জন্য শহীদ মইনুল রোডের বাড়ি ২.৭২ একর জমি সহ ১টাকা প্রিমিয়ামের বিনিময়ে বার্ষিক ১টাকা হারে খাজনা প্রদানের শর্তে বরাদ্দ দেয়া হয়। এ ধরনের অসঙ্গতিপূর্ণ বক্তব্যের মধ্য দিয়েই বোঝা যায় হাসিনার হীন উদ্দেশ্য কি ছিলো।

ফ্যাসিস্ট হাসিনা এতোটাই প্রতিহিংসাপরায়ণ যে, খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, এমনকি মৃত্যু নিয়েও বাহাস করতে কসুর করেননি। বিলম্বে হলেও খালেদা জিয়াকে সম্মানিত করেছে রাষ্ট্র। পক্ষান্তরে ৪৫ মিনিটের আল্টিমেটামে গণভবন ত্যাগ করে দেশছাড়া হন হাসিনা। এক-এগারোর ঘটনায় দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন হাসিনা। খালেদা জিয়া কারো ভয়ে দেশ ত্যাগ করেননি কখানো। এটাই সত্য, এটাই ইতিহাস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *