জনতার কণ্ঠ নিজস্ব প্রতিবেদক : ডিএমপি কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, যেসব এলাকায় কমিউনিটি পুলিশ সক্রিয় ছিল সেসব এলাকায় কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের ঘটনা ঘটেনি। আমাদের সমাজে হিন্দু-মুসলিম-খ্রিস্টান সবাই মিলে থাকবো। সবাই মিলে না থাকলে সমাজ টিকবে না।
শনিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে শহীদ এসআই শিরুমিয়া মিলনায়তনে ‘কমিউনিটি পুলিশিং ডে-২০২১’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এ বছর ‘কমিউনিটি পুলিশিং ডে’র স্লোগান- ‘মুজিববর্ষে পুলিশ নীতি, জনসেবা আর সম্প্রীতি’।
কমিউনিটি পুলিশের উদ্দেশ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার বলেন, এলাকাবাসীর সঙ্গে সমন্বয় করে অপরাধীদের নিয়ে আপনারা চিন্তা করুন এবং এলাকার প্রভাবশালীকে নিয়ে অপরাধীদের কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় সেটা দেখেন। অপরাধ করে ফেললে কিভাবে তাকে বিচারের আওতায় আনা যায় সেটা নিয়ে ভাবুন।
তিনি বলেন, করোনাকালীন গত দুই বছর আমরা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিদিন দুপুরে ছয় হাজার মানুষকে খাবার দিয়েছি। আমরা খাবার নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছি ক্ষুধার্ত কাউকে দেখলেই খাবার দিয়েছি, অসুস্থদের দেখলে আমাদের বিশেষ অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছি। আমাদের দুটি অ্যাম্বুলেন্স ২৪ ঘণ্টা রোগীদের নিয়ে হাসপাতালে গেছে।
তিনি আরও বলেন, ডিএমপির অ্যাম্বুলেন্সে একজন ড্রাইভার ছিলেন। তিনি নিজের জীবনকে বাজি রেখে ৩০০ করোনা আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে নিয়েছেন।
শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, আমরা পুলিশের চাকরি করি কিন্তু দায়িত্বের বাইরে গিয়েও অপরাধী দমনে আমরা প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছি। তথ্য সংরক্ষণ আছে যাতে কোনো ধরনের অপরাধ সংঘটিত হতে না পারে। অপরাধ সংঘটিত হলেও আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি।
আমাদের পুলিশের দুটি চোখ দিয়ে যা দেখি তার সঙ্গে যদি আপনাদের সমাজে বসবাস করা শত শত মানুষ তার চোখ যুক্ত করে তাহলে সমাজের ছোটোখাটো ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকেই সব ধরনের অপরাধ দমন করা সম্ভব হবে। এই সমাজে আমরা বসবাস করি আসুন। আমরা এই সমাজকে সন্ত্রাস, মাদক, ইভটিজিংমুক্ত করে গরে তুলি।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ, মুখ্য আলোচক হিসেবে ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। এছাড়াও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
দেশে সাইবার ক্রাইম ধারণার বাইরে বেড়ে যাচ্ছে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
দেশে সাইবার ক্রাইম ধারণার বাইরে বেড়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট বড় আকারে করতে হবে।
শনিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে শহীদ এসআই শিরুমিয়া মিলনায়তনে ‘কমিউনিটি পুলিশিং ডে-২০২১’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এ বছর ‘কমিউনিটি পুলিশিং ডে’র স্লোগান- ‘মুজিববর্ষে পুলিশ নীতি, জনসেবা আর সম্প্রীতি।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পুলিশ বাহিনীতে সাইবার ইউনিট আমরা করেছি কিন্তু সেটা ছোট আকারে আছে। দেশে সাইবার ক্রাইম (অপরাধ) যেভাবে উন্মোচিত হচ্ছে তা ধারণার বাইরে বেড়ে যাচ্ছে। সাইবার অপরাধ দমনে আমরা সেভাবেই আমাদের পুলিশকে তৈরি করছি। সাইবার ইউনিট বড় আকারে করতে হবে, আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। আমাদের অনেক দূর হেঁটে যেতে হবে।
তিনি বলেন, টেকনোলজির ব্যবহারের ভালো দিকও আছে আবার খারাপ দিকও আছে। তবে আমাদের ভালো দিকটা বেছে নিতে হবে।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সম্প্রতি দেখেছি, যে ধরনের উসকানি আসছিল, যেভাবে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছিল একটা ভায়োলেন্সের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল সেটাও কিন্তু আমাদের জনগণ ও পুলিশ এক হয়ে প্রতিরোধ করেছে। আমরা সেই জায়গা থেকে নিস্তার পেয়েছি। এক কথায় বড় ধরনের ঘটনা ঘটে যেতে পারতো। কারণ যে যার ধর্ম আমরা হৃদয় দিয়ে পালন করি।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের পুলিশ বাহিনী সেই এলাকার জনগণের সঙ্গে মিলে অপরাধীদের ধরে নিয়ে আসছে। তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এখন জনগণও তাদের ধিক্কার দিচ্ছে। এটাই কমিউনিটি পুলিশিংয়ের দায়িত্ব। আমরা যেটা চাচ্ছি সেই কাজটি পুলিশ ও জনগণ করে দিচ্ছে। আজ বাহিনীতে দুই লাখের ওপর পুলিশ সদস্য। আমরা সঠিক সময় সঠিক কাজটি করছি বলে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারছি।
সরকারের এই মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, পুলিশ বাহিনী তোমরা জনতার পুলিশ হও। আজ ধীরে ধীরে পুলিশ জনতার পুলিশ হতে চলছে। দেশে যখন জঙ্গিরবাদের উত্থান হয়েছে, আগুন সন্ত্রাসের উত্থান হয়েছে, সম্প্রতি যে অতিমারির দৃশ্যটি দেখলাম- ছেলে তার বাবা-মাকে হাসপাতালে ফেলে রেখে এসেছে। এই পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাই তাদের দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করেছেন। তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা কাজ করছেন। সেজন্যই আমরা অনেক কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পেরেছি।
‘প্রধানমন্ত্রী দিকনির্দেশনায় দেশ যে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, নিরাপত্তার দায়িত্বে পুলিশ ছিল বলে আমরা সেই জায়গায় যেতে পেরেছি। পৃথিবীর অনেক দেশই কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সুফল পেয়েছে, আমাদের দেশেও তা পাচ্ছি।’
কমিউনিটি পুলিশের অনেক দায়িত্ব উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শান্তি রক্ষার জন্য তো ঘরে ঘরে পুলিশ দিতে পারি না। ঘরে ঘরে যে জনগণ আছেন তারা যদি রিয়েল টাইম ইনফরমেশন দিতে পারেন তাহলে অনেক ঘটনা থেকেই আমরা বাঁচতে পারি। অনেক ঘটনা ঘটবে না।
কমিউনিটি পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা যারা বিভিন্ন জায়গায় পুলিশকে সহযোগিতা করছেন, সেভাবে সহযোগিতা করুন। আপনারা কমিউনিটিকে সজাগ রাখুন। কেউ ক্রাইম করার আগেই তাকে বলুন, ক্রাইম করলেই জেলে যেতে হবে। ক্রাইম করলে তোমাকে কিন্তু চিহ্নিত করা হবে। আপনারা এই আবেদনটি রাখেন তারপর অবশ্যই ক্রাইমকে দমন করতে পারবো।
ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ, মুখ্য আলোচক ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও কথা সাহিত্যিক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। এছাড়া পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
সাইবার অপরাধ মোকাবিলায় পুলিশকে প্রস্তুত হতে হবে: পুলিশের সামনে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ সাইবার ওয়ার্ল্ডের স্যোশাল মিডিয়া বলে মনে করছেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘পুরোনো ধরনের অপরাধ কমছে। প্রতিনিয়ত সাইবার অপরাধ বাড়ছে। সাইবার ওয়ার্ল্ড দেশ ও মানুষের জন্য হুমকি তৈরি করছে। সাইবার অপরাধ মোকাবিলায় আমাদেরকে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।’
শনিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে শহীদ এসআই শিরুমিয়া মিলনায়তনে ‘কমিউনিটি পুলিশিং ডে-২০২১’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আইজিপি এসব কথা বলেন। এ বছর ‘কমিউনিটি পুলিশিং ডে’-এর স্লোগান ‘মুজিববর্ষে পুলিশ নীতি, জনসেবা আর সম্প্রীতি’।
বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘সাইবার অপরাধ মোকাবিলায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করবো। সাইবার ওয়ার্ল্ডের যে ঝুঁকি রয়েছে, সেই ঝুঁকি থেকে আমাদের দেশকে রক্ষা করতে হবে। প্রতিদিন টেকনোলজি আপডেট হয়। এ জন্য র্যাব-পুলিশকে টেকনোলজি আপডেটের সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘মজার বিষয় হলো—যে টেকনোলজিগুলো আবিষ্কার হয়েছে, সবই পশ্চিমাদের। আমরা এসবের ভালো দিকগুলো গ্রহণ করবো এবং ঝুঁকি মোকাবিলা করবো। সাইবার ঝুঁকির কাছে আত্মসমর্পণ কর যাবে না। এ কারণেই সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে স্পাত কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’
জনগণ, সরকার ও রাষ্ট্রের কাছে দায়বদ্ধ জানিয়ে বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘পেশাদারি, সেবামূলক, জনবান্ধব, নারী ও শিশুবান্ধব, সর্বোপরি মানবিক পুলিশিংয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। পুলিশিং কার্যক্রমে অধিকতর জনসম্পৃক্ততা ও অংশীদারত্বের মাধ্যমে তা অর্জন করা সম্ভব। কমিউনিটি পুলিশিংয়ের ধারণাকে আরও সমৃদ্ধি করতে চায়।’
পুলিশপ্রধান বলেন, ‘রাত তিনটার সময় অথবা ভোর পাঁচটার সময় একা একজন নারী মহাসড়ক, রাজপথসহ সব পথে হেঁটে যাবেন ভীতিমুক্ত পরিবেশে। ছোট্ট শিশুও হেঁটে যাবে। যখন আমরা এটা অর্জন করতে পারবো, তখন বুঝতে হবে আমরা ভীতি ও অপরাধমুক্ত একটি সমাজের কাছাকাছি এসেছি।’
‘তবে পুলিশের পক্ষে এটি এককভাবে সম্ভব নয়। এ কাজটি পার্টনারশিপের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে করতে হবে। পার্টনারশিপ করতে হবে সমাজের সঙ্গে, নাগরিকদের সঙ্গে। একেই বলা হয় পার্টনারশিপ ইন পুলিশিং’ যোগ করেন বেনজীর আহমেদ।
তিনি আরও বলেন, ‘আত্মমর্যাদাশীল জাতি হতে হলে আমাদেরকে আত্মমর্যাদাশীল সমাজ গঠন করতে হবে। সেই সমাজটা হতে হবে অপরাধমুক্ত এবং অপরাধের ভীতিমুক্ত। জিরো ক্রাইম কোনো সমাজে পাওয়া খুব কঠিন। ইউরোপের অনেক জেলখানা এখন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কারণ সেখানে কোনো অপরাধী পাওয়া যাচ্ছে না। তবে একটি কমন জেলখানা রাখা হয়েছে। যাতে করে কেউ পাওয়া গেলে তাদেরকে রাখা যাবে।’
বাংলাদেশে একাধিকবার জঙ্গি হামলার চেষ্টা হয়েছে জানিয়ে আইজিপি বলেন, ‘প্রতিবারই জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক আমরা সমূলে উৎপাটন করতে পেরেছি। এর একমাত্র কারণ হচ্ছে জনগণের সঙ্গে আমাদের মেলবন্ধন ছিল। প্রতিবার হামলার সময় দেশের মানুষ যেভাবে পুলিশকে সহযোগিতা করেছে, সেই সহযোগিতা না পেলে আমরা সফল হতে পারতাম না। আমাদের দেশের মানুষ শান্তিপ্রিয়, তারা শান্তি ভালোবাসে। জনগণ কখনোই রক্তপাত পছন্দ করে না এ কারণে জঙ্গিবাদ এ দেশে শেকড় গেঁড়ে বসতে পারে না।’
বেনজীর আহমেদ আরও বলেন, ‘মহামারির সময় আমরা অনেকেরই খুঁজে পায়নি। তখন বাংলাদেশ পুলিশ ফ্রন্ট ফাইটার হিসেবে এ সমাজ তথা দেশের জন্য কাজ করেছে। সন্তানের ভূমিকা পালন করেছে পুলিশ। অসুস্থকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে, মৃতকে দাফন ও সৎকারের কাজ করেছে।’