কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই’কে প্রযুক্তির এক দারুণ উপহার হিসেবে অভিহিত করা হলেও তা নিয়ে এখন আতঙ্কিত অভিভাবকরা। কারণ এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বহু মেয়ের নগ্ন ছবি বা ভিডিও তৈরি করা হচ্ছে। এতে উদ্বিগ্ন পিতামাতারা। সম্প্রতি ভারতের তেলেগু, কানাড়ার ছবির অভিনেত্রী রশ্মিকা মন্দনার এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল। এ ঘটনায় ওই অভিনেত্রী প্রচণ্ড ক্ষেপেছেন। তিনি এর বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা দাবি করেছেন। শোনা যাচ্ছে একইভাবে অন্য অভিনেত্রীদেরও ভিডিও বানানো হয়েছে। এবার স্পেনের এক গ্রামের মরিয়ম আল আদিব নামের এক নারী বলেছেন, তার কন্যাসহ গ্রামের বেশ কিছু মেয়ের ছবি নিয়ে একই রকম অশালীন ছবি বা ভিডিও বানানো হয়েছে। এ ঘটনায় শত শত অভিভাবক উদ্বিগ্ন। মরিয়ম বলেন, বিশ্বজুড়ে মা-বাবারা বলছেন, তাদের সন্তানদের টার্গেট করা হয়েছে।
ইন্টারনেট ওয়াচ ফাউন্ডেশন বলেছে, এই চর্চা যে এত বিস্তৃত হয়েছে তাতে তারা বিস্মিত নয়। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
স্পেনের আলমেন্দ্রালেজো শহর সেপ্টেম্বর মাসে সংবাদ শিরোনাম হয়। কারণ ওই সময়ে ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সী কমপক্ষে ২০টি মেয়ের অশালীন ছবি তাদের অজ্ঞাতে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত অন্যদের অভিভাবকদের সঙ্গে একটি গ্রুপ সৃষ্টি করেছেন মিস আল আদিব। এর ফলে একই ঘটনার শিকার মা-বাবারা যেন তাদের উদ্বেগ জানাতে পারেন সেই পথ করে দিয়েছেন তিনি। মরিয়ম আল আদিব ওয়েলস লাইভ-এ লিখেছেন, তার সঙ্গে অভিভাবকরা যোগাযোগ করছেন। তারা তাকে বলেছেন, একই ঘটনা তাদের সঙ্গেও ঘটেছে। তাদের কন্যাদের সঙ্গে ঘটেছে। আবার কেউ বলছেন এ ঘটনা তার সঙ্গেও ঘটেছে। কিন্তু আমি এর প্রেক্ষিতে কোনো সাপোর্ট পাইনি। অবশেষে আমাদেরকে সাপোর্ট করার জন্য আপনি এসেছেন, আমরা কতই না সৌভাগ্যবান। এমন কথা জানিয়ে শত শত মানুষ তাকে লিখছেন। মিস আদিব আরও লিখেছেন, যদি কোনো মেয়ে এসব ঘটনার শিকার হও, তাহলে তোমার পিতামাতাকে বিষয়টি অবহিত করো।
মরিয়ম আল আদিব বলেন, তার গ্রামে এ সমস্যায় পড়েছেন যেসব মা-বাবা তারা তার সঙ্গে যোগাযোগ করে একটি গ্রুপ সৃষ্টিতে সহায়তা করছেন, যেন অন্যদের বা তাদের ছেলেমেয়েদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে পারেন। তাদেরকে সহায়তা দিতে পারেন। এর ফলে অনেক মেয়ে সামনে এগিয়ে আসছে। তারা জানাচ্ছে তাদের সঙ্গে কি ঘটেছে। এখন এটা জানা গুরুত্বপূর্ণ যে, কত সংখ্যক মেয়ে এ বিষয়টি তার পিতামাতার সঙ্গে শেয়ার করার সাহস দেখায়নি। তিনি আরও বলেন, সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক, পর্নোগ্রাফি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা- এসব মিলে হলো ধ্বংসের এক অস্ত্র। গত সপ্তাহে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে সামিট হয়েছে বৃটেনে। সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রেভারম্যান প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে শিশুদের যৌন নির্যাতনের ঘটনা দমন করবেন। বৃটিশ সরকার বলেছে, প্রকৃত শিশু হোক বা অন্য যাই হোক যেকোনো বিবেচনায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে শিশুদের যৌনতায় উদ্বুদ্ধ বা তাদেরকে যৌন নির্যাতন করা বেআইনি। শিশুদের অনলাইনে যেকোনো রকম যৌন নির্যাতন মোকাবিলায় কোম্পানিগুলোকে ব্যবহার করতে হবে অনলাইন সেফটি অ্যাক্ট নামের আইন। এসব যৌন নির্যাতনের মধ্যে আছে গ্রুমিং, সরাসরি স্ট্রিমিং, শিশুদের যৌন নির্যাতনের ম্যাটেরিয়াল, শিশুদের ছবি বা মুখ ব্যবহার। এসব করলে আইনে বিপুল পরিমাণ জরিমানার বিধান আছে।
ইন্টারনেট ওয়াচ ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী সুসি হারগ্রেভস বলেন, জরুরি ভিত্তিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে শিশুদের যৌন নির্যাতনের বিষয়টির সমাধান করতে হবে। ভবিষ্যতে এমন সব ছবি বা ভিডিও সুনামির মতো আসতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। এটা হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু হচ্ছে। অক্টোবরে তার প্রতিষ্ঠান একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। তাতে দেখা যায়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে শুধু এক মাসে বানানো কমপক্ষে ২০,০০০ ছবি পেয়েছে তারা। এসব ছবি শিশুদের যৌন নির্যাতন পর্যায়ের। যারা এসব ছবি বানিয়েছে তারা বলেছে, বিভিন্ন পার্ক থেকে শিশুদের ছবি নিয়ে তা থেকে এসব বানানো হয়েছে।