গরমে অন্তঃসত্ত্বার বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন

জনতার কণ্ঠ ডেস্ক: ন্তঃসত্ত্বা নারীরা উচ্চ তাপমাত্রার প্রতি স্পর্শকাতর। লম্বা গরমের ফলে অন্তঃসত্ত্বাকালীন কিছু সমস্যার মুখে পড়তে হয়। অসাবধান হলে তা বড় বিপদও ডেকে আনতে পারে। তাই গরমের সময় দরকার তাঁদের বাড়তি যত্ন।

শরীরে পানি আসা বা ইডেমা: অতিরিক্ত গরমে শরীরে পানি আসতে পারে এবং আরও বেশি ফুলে যেতে পারে। পায়ের পাতা ও হাঁটুর নিচের অংশ পানি জমে ফুলে যেতে পারে। সাধারণত অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার প্রথম তিন মাস কেটে যাওয়ার পর এ সমস্যা দেখা দেয়। গোড়ালি, পা, আঙুল ও মুখ অতিরিক্ত ফুলে যাওয়া অনেক সময় উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ হতে পারে। তাই সতর্ক থাকতে হবে।

বিশ্রাম নেওয়ার সময় পায়ের নিচে বালিশ বা অন্য কিছু দিয়ে পা ওপরের দিকে তুলে রাখুন। এতে যেমন অন্তঃসত্ত্বা নারী মানসিকভাবে সুস্থ থাকবেন, তেমনি শরীরে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে না। তবে পা ওপরে উঠিয়ে রাখতে পারলে হৃদযন্ত্রে চাপ কম পড়ে। এ ক্ষেত্রে অন্তঃসত্ত্বার স্বাচ্ছন্দ্যকেই প্রাধান্য দিতে হবে।

অতিরিক্ত লবণ শরীরে পানি ধরে রাখে। তাই খাবারে বাড়তি লবণ পরিহার করুন। সোডিয়ামসমৃদ্ধ যেমন প্যাকেটজাত খাবার না খাওয়াই শ্রেয়। অতিরিক্ত সোডিয়াম কমানোর আরেকটি উপায় হলো পটাশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া। যেমন- কলা, অ্যাপ্রিকট, কমলা, মিষ্টিআলু, বিট ইত্যাদি। অতিরিক্ত গরমে শরীর বেশি ফুলে যেতে পারে। তাই গরমে ঠান্ডা ও আরামদায়ক স্থানে থাকার চেষ্টা করুন।

অতিরিক্ত গরমবোধ: অনেক অন্তঃসত্ত্বা নারী গরমে অতিরিক্ত ঘামেন এবং গরম বোধ করেন। এর কারণ হলো, অন্তঃসত্ত্বা নারীর শরীরে এক থেকে দেড় লিটার বেশি রক্ত প্রবাহিত হয়। এ কারণেই শরীরে উত্তাপ বোধ করেন। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে শরীরে আর্দ্রতা ধরে রাখতে প্রচুর পানি পান করতে হবে। সেই সঙ্গে ফলের রস ও তাজা সবজি খেতে হবে। অতিরিক্ত মিষ্টি পানীয় আরও বেশি তৃষ্ণার্ত করে তুলতে পারে। তাই অন্তঃসত্ত্বাকালীন এসব এড়িয়ে চলাই ভালো।

চুলকানি: গরমের কারণে চুলকানি বাড়তে পারে। চুলকানি রোধে ঢিলা জামাকাপড় পরা উচিত। এর ফলে জামাকাপড় আপনার ত্বকের সঙ্গে কম ঘর্ষণের আশঙ্কা থাকে। অন্তঃসত্ত্বাকালীন আঁটসাঁট পোশাক পরা একদম ঠিক হবে না। জামা পরে যেন আরামে নড়াচড়া করা যায়; শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া যায় সহজে। ঘাম টেনে নেয় এবং নিজেকে ফুরফুরে লাগে এমন কাপড়ের পোশাক বেছে নিতে হবে। সিনথেটিক কাপড় এড়িয়ে সুতি কাপড় ব্যবহার করার কথা ভাবতে পারেন। এগুলো আপনার ত্বকে বাতাস চলাচলে বাধা দেয় না। চুলকানির সঙ্গে ঠান্ডা পানির দা-কুমড়া সম্পর্ক। যে স্থানে চুলকানির সমস্যা আছে, সেখানে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নেবেন। দেখবেন, আস্তে আস্তে চুলকানি কমে যাবে। চুলকানির জায়গায় আইসপ্যাক বা ঠান্ডা পানিতে চোবানো কাপড় ৫/১০ মিনিট বা চুলকানি কমা পর্যন্ত দিয়ে রাখতে পারেন। ত্বক আর্দ্র রাখতে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো সুগন্ধিযুক্ত না হলেই ভালো। একজিমা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করতে হবে। যদি মনে হয়, আপনি ঘুমের মধ্যে চুলকাচ্ছেন, তবে ঘুমানোর সময় কটনের হাতমোজা পরে নিতে পারেন।

পানির বিকল্প নেই: গ্রীষ্ফ্মের অতিরিক্ত গরমে ঘামাচির সমস্যা বাড়ে। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে প্রচুর পানি পান করা উচিত। প্রতিদিন অন্তত দু’বার গোসল করা প্রয়োজন। অন্তত একবার গোসলের সময় সাবান মাখতে হবে। ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে প্রচুর পরিমাণে। ঘামাচি সাধারণত বেশি হয় শরীরের ভাঁজে, যেমন স্তনের নিচে। এটি প্রতিরোধে গোসলের পর ওই সব অংশ ভালোভাবে শুকিয়ে নিন।

নিয়মিত শরীরচর্চা: চিকিৎসক নিষেধ না করে থাকলে শরীরচর্চা চালিয়ে যেতে হবে গর্ভকালেও। পেশি ও পেশিবন্ধ যত নমনীয় থাকবে, গর্ভকালে শরীরের বাড়তি ওজন সামলানো তত সহজ হবে। রক্ত সঞ্চালন বাড়ে এমন ব্যায়াম করতে হবে নিয়মিত। হাঁটা ও সাঁতার কাটা এ সময়ে বেশ কার্যকরী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *