গ্রেপ্তারের সময় মরিয়মের দুর্দশার কথা শুনে হৃদয় ভেঙে যায় পুলিশ কর্মকর্তার

জনতার কণ্ঠ প্রতিনিধি: মরিয়ম বেগমের স্বামী জাকির হোসেন একটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে ১৬ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে পালিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। স্বামীর ঋণের জামিনদার ছিলেন মরিয়ম। ঋণের টাকা পরিশোধ না করায় মরিয়ম দম্পতির বিরুদ্ধে আদালতে ২০ লাখ টাকার মামলা করে ওই ব্যাংক। আদালতের পরোয়ানা জারি হলে পুলিশ মরিয়মকে গ্রেপ্তার করে। তবে গ্রেপ্তারের সময় মরিয়মের দুর্দশার কথা শুনে হৃদয় ভেঙে যায় পুলিশ কর্মকর্তার। কষ্ট সহ্য করতে না পেরে তিনি মরিয়মের তিন সন্তানের জন্য বাড়িতে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেন।

ঘটনাটি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার পশ্চিম সেনের টিকিকাটা গ্রামে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মরিয়ম বেগমের (৩৮) বাড়ি উপজেলার পশ্চিম সেনের টিকিকাটা গ্রামে। স্বামী জাকির হোসেন মরিয়মকে জামিনদার বানিয়ে ছয় বছর আগে মঠবাড়িয়ার একটি ব্যাংক থেকে ১৬ লাখ টাকা ঋণ নেন। ২০১৫ সালে জাকির হোসেন দ্বিতীয় বিয়ে করে মঠবাড়িয়া থেকে পালিয়ে যান। ঋণের টাকা পরিশোধ না করায় জাকির ও তাঁর প্রথম স্ত্রী মরিয়মের বিরুদ্ধে পিরোজপুর অর্থঋণ আদালতে ব্যাংকের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়।

সম্প্রতি জাকির ও মরিয়মের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। গত রোববার রাতে মঠবাড়িয়া থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) জাহিদ হোসেন পরোয়ানা নিয়ে মরিয়মের বাড়িতে যান। মরিয়মকে গ্রেপ্তার করার পর জাহিদ হোসেন জানতে পারেন, মরিয়ম কাঁথা সেলাই ও মানুষের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। শারমিন আক্তার (১৮), মো. রুম্মান (১১) ও জান্নাতি আক্তার (৮) নামে তাঁর তিনটি সন্তান আছে। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি মরিয়ম। মরিয়মের অভাব–অনটনের কথা শুনে এএসআই জাহিদ হোসেন মর্মাহত হন। পরদিন গতকাল সোমবার মরিয়মের তিন সন্তানের জন্য ১৫ কেজি চাল, ২ কেজি ডাল, ২ কেজি আলু, ২ লিটার তেল, ২ কেজি করে পেঁয়াজ, লবণ, চিনি এবং সাবান, মরিচ ও হলুদ কিনে বাড়িতে পৌঁছে দেন এএসআই জাহিদ হোসেন।

স্থানীয় লোকজন জানান, জাকির হোসেন ব্যাংকসহ বিভিন্ন এনজিও থেকে ৩০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করে বউকে নিয়ে এলাকা থেকে চলে যান। তাঁর কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। ঋণের জামিনদার প্রথম স্ত্রী হওয়ায় জাকিরকে না পেয়ে মরিয়মকে টাকার জন্য চাপ দেওয়া হয়। কিন্তু অসহায় মরিয়মের পক্ষে এত টাকার ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব ছিল না।

এএসআই জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আদালতের পরোয়ানা তামিল করতে গিয়ে মরিয়মের বাড়িতে যাই। তাঁকে গ্রেপ্তার করার সময় দুর্দশার কথা শুনে মনটা কষ্টে ভরে যায়। ভীষণ খারাপ লাগতে থাকে। গতকাল সকালে মরিয়মকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি কারাগারে যাওয়ায় তিন সন্তানকে আমি খাদ্যসামগ্রী দিয়েছি। মানবিক কারণে আমি তাঁদের এই সহায়তা দিয়েছি। যত দিন মরিয়ম কারাগারে থাকবেন, আমি আমার রেশন দিয়ে তাঁর পরিবারকে সহায়তা করব।’

টিকিকাটা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মরিয়ম বেগম দরিদ্র ও অসহায়। স্বামীর কারণে তাঁকে কারাগারে যেতে হয়েছে। আমি মরিয়মের জামিনের জন্য চেষ্টা করব।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *