চায়ে ত্বক পরিচর্যা

জনতার কণ্ঠ ডেস্ক: শুধু পান করাতেই কিন্তু চায়ের উপকারিতা সীমাবদ্ধ নয়। রূপচর্চাতেও এর ভূমিকা রয়েছে। ধোঁয়া ওঠা এক কাপ চা যেমন অত্যন্ত তৃপ্তিদায়ক, তেমনি এর রয়েছে নানা স্বাস্থ্যগুণ। তবে চায়ের সাহায্যে রূপচর্চা করারও কিন্তু আছে অনেক পরীক্ষিত উপায়। এই প্রচণ্ড গরম আবহাওয়ায় ত্বকে নানা সমস্যা দেখা দেয়। যাঁরা ঘরোয়া সমাধানে বিশ্বাসী, তাঁদের জন্য চা হতে পারে এই গরমের উপযুক্ত টোটকা। চায়ে রয়েছে অ্যান্টি-এজিং, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান; যা ত্বকের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে। সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মির হাত থেকে বাঁচতে ত্বকে ব্যবহার করা যেতে পারে গ্রিন টি।
চায়ে ত্বক পরিচর্যা: ত্বকের আসল ওষুধ হলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা। ত্বক অপরিষ্কার থাকলেই ব্রণ, এলার্জি কিংবা ফুসকুড়ি ওঠে। বাজারে নানা ধরনের ক্লিনজার পাওয়া যায়। ত্বকের ধরন বুঝে নিজের জন্য ফেসওয়াশ বেছে নিতে হবে। এর সঙ্গে এক টেবিল চামচ গ্রিন টি বা সাধারণ চা-পাতা নিয়ে মিশ্রণটি মুখে লাগাতে হবে। পাঁচ মিনিট পর ভেজা হাতে বৃত্তাকারে ঘষে ঠান্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। এ ক্লিনজার ত্বকে আর্দ্রতার ভারসাম্য বজায় রাখার পাশাপাশি ঘাম, ময়লা ও তেলতেলে ভাব দূর করে।
গ্রিন টি টোনার: গ্রিন টি প্রাকৃতিক টোনার হিসেবে কতটা উপকারী, এ কথা অনেকেরই অজানা। গ্রিন টি খাওয়ার পর টি-ব্যাগটি ফেলে না দিয়ে গরম পানিতে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে। ঠান্ডা হলে ভালো করে ছেঁকে এর সঙ্গে গোলাপজল, গ্লিসারিন ও অ্যালো ভেরার রস মেশাতে হবে। মিশ্রণটি একটি স্প্রে বোতলে নিয়ে ফ্রিজে রাখতে হবে। মুখ ধোয়ার পর টোনারটি প্রতিদিন লাগালে ত্বক হবে টান টান, সেই সঙ্গে রক্ত সঞ্চালনও বাড়বে।
ব্রণ দূর করতে: টমেটো পেস্ট, চায়ের লিকার ও সামান্য কাঁচা হলুদ দিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে। এই ফেসপ্যাক মুখে লাগালে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়ে।
চা পান করে আমরা সাধারণত ফোটানো চা-পাতা ফেলে দিই। অনেকে গাছের গোড়ায়ও দেন। এই ফেলে দেওয়া চা-পাতা দিয়েই হতে পারে কার্যকর প্রাকৃতিক স্ক্রাবের কাজ। ব্যবহৃত গ্রিন টি, এক চামচ খাঁটি মধু এবং অল্প চালের গুঁড়া দিয়ে বানিয়ে নেওয়া যায় স্ক্রাব। টি-ব্যাগ থেকে পাতা বের করে নেওয়ার পর বাকি দুটো উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে মুখের ত্বকে ৫-১০ মিনিট বৃত্তাকারে ঘষে ধুয়ে ফেলতে হবে। দাগহীন উজ্জ্বল ত্বকের জন্য এই ফেসিয়াল স্ক্রাব বেশ উপকারী। এ ছাড়া চা-পাতা ব্যবহারের পর তা কড়া রোদে শুকিয়ে ম্যাসাজ ক্রিমের সঙ্গে মিশিয়ে ম্যাসাজ করলে খুব উপকার হয়। তবে স্ক্রাব প্রতিদিন ব্যবহার করতে হয় না। যেকোনো স্ক্রাব ১৫ দিনে একবার ব্যবহার করার নিয়িম। তবে যাঁরা নিয়মিত বাইরে বের হন, তাঁরা সপ্তাহে একবার ব্যবহার করতে পারেন।
অল্প চা-পাতা ফুটিয়ে ঠান্ডা করে নিতে হবে। এরপর তা বেটে ঘন মিশ্রণটি মাস্ক হিসেবে মুখে লাগাতে হবে। ১০-১৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। চায়ে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকে পুষ্টি প্রদান করে। ত্বক পরিষ্কার রাখতে এই মাস্ক বেশ কাজে দেয়।
চায়ে ত্বক পরিচর্যা: ঠোঁটের শুষ্কতা দূর করতে গ্রিন টির একটি ব্যাগই যথেষ্ট। অল্প গরম পানিতে এক ব্যাগ গ্রিন টি ডুবিয়ে ঠোঁটে চেপে রাখতে হবে। নিয়মিত ব্যবহারে শুষ্ক ভাব অনেক কমে যাবে। অন্যদিকে ত্বকের ট্যান পড়া বা পোড়া ভাব কমাতে চায়ের লিকার ব্যবহার করা যায়। ঠান্ডা কড়া লিকারে ফেস টাওয়েল ভিজিয়ে মুখে চেপে চেপে লাগাতে হবে কয়েকবার। চায়ে থাকা ট্যানিক অ্যাসিড ত্বকের কালো ভাব দূর করতে সাহায্য করে দ্রুত। যাঁদের সংবেদনশীল ত্বক এবং এই গরমে এলার্জি কিংবা জ্বালা ভাব হয়, তাঁরা সমাধান হিসেবে সরাসরি চা-পাতা মুখে লাগিয়ে ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে পারেন।
চোখের ফোলা ভাব দূর করতে: চোখের ফোলা ভাব নিয়ে অনেকেই বেশ বিপত্তিতে পড়েন। চায়ে থাকা ট্যানিন ও ক্যাফেইন এ সমস্যার সমাধান করতে সাহায্য করতে পারে। গ্রিন টি খাওয়ার পর ফেলে না দিয়ে সেই টি-ব্যাগ চোখের ওপর ১০ মিনিট রাখতে হবে। রোজ ব্যবহারে উপকার মিলবে। সেই সঙ্গে ডার্ক সার্কেলও চলে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *