জনতার কণ্ঠ ডেস্ক: দুধ এবং দুধের সর যুগে যুগে ত্বক ও চুলের যত্নে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ঘরোয়াভাবে তো বটেই, বাণিজ্যিক পর্যায়েও।
সেই আদিকাল থেকেই দুধ ও দুধের সর রূপচর্চায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বর্তমান সময়েও রূপবিশেষজ্ঞ ও গবেষকেরা ত্বক ও চুলের যত্নে দুধ ও দুধের সরের বিভিন্ন পরীক্ষিত উপকারিতার কথা বলছেন। সাধারণভাবে নিরাপদ এ উপকরণ বিশ্বের বেশির ভাগ দেশেই ব্যবহৃত হয় ঘরোয়া বা বাণিজ্যিকভাবে। বিভিন্ন প্রসাধনী ও স্কিনকেয়ার কোম্পানির জনপ্রিয় ও কার্যকরী পণ্যে দুধ ও দুধের সর ক্রিম উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আজকের আন্তর্জাতিক দুগ্ধ দিবসে দুধ আর দুধের সরে ইতিহাসে দুধ দিয়ে রূপচর্চার ব্যাপারে প্রথম উল্লেখ আছে সেই খ্রিষ্টপূর্ব ১৩৭২ সালের কথা। খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০০ সালের মিসরীয় ভাস্কর্য থেকেও এর প্রমাণ মেলে। নেফারতিতি দুধের সঙ্গে উটপাখির ডিম ও মধু মিশিয়ে ফেস মাস্ক লাগাতেন। ত্বক কোমল রাখতে তিনি ব্যবহার করতেন গাধার দুধ। কারণ না জানলেও মিসরীয়রা দেখেছিলেন, ত্বকের যত্নে দুধের উপকারী ভূমিকা রয়েছে। রানি ক্লিওপেট্রার টক হয়ে যাওয়া দুধ দিয়ে গোসল করার ইতিহাস তো অনেকেরই জানা। উপমহাদেশ ও আরবের দেশগুলোতেও রানিদের দুধ দিয়ে গোসল ও সর দিয়ে রূপচর্চা করার
রূপচর্চায় দুধ ও সরের উপযোগিতা: বিশ্বজুড়েই ত্বক ও চুলের যত্নে দুধের ব্যবহার ও উপযোগিতা নিয়ে আলোচনা ও গবেষণা হয়। এসথেটিশিয়ানরা বলেন, কাঁচা দুধ ত্বকের জন্য একটি বেশ ভালো পরিষ্কারক উপাদান বা ক্লিনজার। এর ল্যাকটিক অ্যাসিড এক মৃদু পিলিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। এর রয়েছে এক্সফোলিয়েট করার গুণও। আবার দুধ ব্যবহারে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকে। কাঁচা দুধ খুব ভালো একটি টোনারও, বিশেষ করে শুষ্ক ত্বকের জন্য। দুধে আছে ত্বক ও চুলে পুষ্টি জোগানোর জন্য ভিটামিন এ, সি, ডি ও কে। এ ছাড়া দুধের প্রোটিনও চুল ও ত্বকের জন্য উপকারী। শুষ্ক ও নিষ্প্রাণ চুলের জন্য দুধ প্রিকন্ডিশনার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। চুলে শ্যাম্পু করার আগে মাথার ত্বক ও চুলে দুধ লাগাতে হবে। কাঁচা দুধের ভিটামিন সি ত্বকের দাগ কমাতে সাহায্য করে, ত্বকে সজীব ভাব আনে। ভিটামিন ডি ক্ষতিগ্রস্ত ত্বকে জেল্লা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।
হাল ফ্যাশনের তরফ থেকে হার্বস আয়ুর্বেদিক ক্লিনিকের রূপবিশেষজ্ঞ আফরিন মৌসুমীর কাছে রূপচর্চায় দুধের ব্যবহার নিয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, দুধ এমন একটি উপাদান, যা চাইলেই সব ত্বকে ব্যবহার করা যায়। তবে ব্যবহারের সঠিক নিয়ম জানা জরুরি। তিনি শুষ্ক, তৈলাক্ত ও স্পর্শকাতর ত্বকে দুধ ব্যবহারের কায়দাকানুন জানালেন।
শুষ্ক ত্বকে দুধ: শুষ্ক ত্বকের যত্নের জন্য প্রয়োজন জ্বাল করা দুধ বা দুধের সর। ত্বক পরিষ্কার করতে চাইলে জ্বাল দেওয়া দুধ লাগবে ২ চা–চামচ আর গোলাপজল ২ চা–চামচ। দুটি উপাদান মিশিয়ে তুলার সাহায্যে মুখমণ্ডলের ত্বক পরিষ্কার করলে কার্যকর ফল পাওয়া যাবে।
দুধের ফেসপ্যাক: প্রয়োজনমতো কুসুম গরম দুধে ১টি খেজুর ও ২ চা-চামচ বেসন ভালোভাবে মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করতে হবে। প্যাকটি ভালো ময়েশ্চাইজার হিসেবে কাজ করে। আবার ত্বকে আনে বাড়তি উজ্জ্বলতা।
তৈলাক্ত ত্বকে দুধ: তৈলাক্ত ত্বকের জন্য আবার কাঁচা দুধ বেশি উপযোগী। জ্বাল দেওয়া দুধ, সর বা ননিযুক্ত দুধ তৈলাক্ত ত্বকে কোনোভাবেই ব্যবহার করা যাবে না। ২ চা-চামচ দুধে ৫ ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে তুলার সাহায্যে ত্বক পরিষ্কার করলে ভালো।
ফেসপ্যাক: ২ চা-চামচ পরিমাণ ময়দা, ১ চা-চামচ চালের গুঁড়া ও সিকি চা-চামচ পুদিনাপাতার পেস্ট প্রয়োজনমতো কাঁচা দুধের সঙ্গে মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করে ১৫ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলতে হবে।
স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য দুধ: ত্বকে খুব বেশি অ্যালার্জি বা র্যাশ থাকলে কাঁচা দুধের সঙ্গে ৩–৪টি লবঙ্গচূর্ণ ও ১ চা-চামচ ছোলার ডালের বেসন মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। তবে প্যাকটি ব্যবহারের আগে অবশ্যই ২ চা-চামচ দুধের সঙ্গে এক চিমটি কর্পূর মিশিয়ে তুলার সাহায্যে ত্বক পরিষ্কার করে নিতে হবে।
চুলের যত্নে দুধ: মাথার ত্বক খুব বেশি শুষ্ক হলে এর জন্য দুধ ব্যবহার করা যায়। প্রথমে জ্বাল দেওয়া দুধ ছেঁকে নিতে হবে। এবার ১ কাপ পরিমাণ জ্বাল দেওয়া দুধ নিয়ে এতে আধা কাপ মৌরি ও আধা কাপ কালিজিরা ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে। উপাদানগুলো ফুলে উঠলে দুধসহ পেস্ট করে মাথায় ব্যবহার করতে হবে। প্যাকটি মাথার শুষ্ক ত্বকে চামড়া ওঠা কমাতে দারুণভাবে সাহায্য করে। মাথার ত্বক ও চুল তৈলাক্ত হলে দুধ ব্যবহার ঠিক নয়। এতে মাথায় অ্যালার্জি, র্যাশ বা ফুসকুড়ির সমস্যা অনেক ক্ষেত্রে বেড়ে যায়।