আরবিতে জাকাত শব্দের অর্থ পবিত্রতা ও বৃদ্ধি। বস্তুত জাকাত দিলে ধনসম্পদের মর্যাদা বাড়ে। ইসলামে বাধ্যতামূলক ধর্মীয় দান অর্থেই জাকাত শব্দটি ব্যবহৃত হয়। কোনো মুসলমানের ধনসম্পদ থেকে তার নিজের ও পরিবারের সারা বছরের প্রয়োজনীয় ব্যয় মেটানোর পর নির্ধারিত পরিমাণে অবশিষ্ট থাকলে এবং ওই ধনসম্পদ তার মালিকানায় এক বছর মেয়াদে স্থায়ী থাকলে বছর পূর্ণ হওয়ার পর সেই সম্পদের নির্দিষ্ট পরিমাণ অংশ শরিয়া-নির্ধারিত খাতগুলোয় প্রদান করাকে জাকাত বলা হয়। যে পরিমাণ ধনসম্পদ থাকলে জাকাত দান ফরজ হয় ইসলামি পরিভাষায় তাকে নিসাব বলা হয়।
নিসাব হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় মৌলিক চাহিদা মেটানোর পর এক বছরের জন্য কমপক্ষে ৮৫ গ্রাম সোনা বা ৫৯৫ গ্রাম রুপা অথবা এর কোনো একটির সমমূল্যের নগদ অর্থ কিংবা অন্যান্য কোনো ব্যক্তির মালিকানায় থাকা।
নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে কোনো ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট সম্পদ থেকে ২.৫ শতাংশ হারে জাকাত আদায় করা তাঁর ওপর ফরজ।
জাকাত শব্দটি কোরআনে আছে ৩২ বার, নামাজের সূত্রে আছে ২৬ বার, স্বতন্ত্রভাবে চারবার আছে এবং পবিত্রতা অর্থে দুবার। কোরআনে ১৯টি সুরায় জাকাতের আলোচনা এসেছে।
জাকাত কেন গুরুত্বপূর্ণ
ইসলামে নামাজের পরই জাকাতের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনের বহু স্থানে নামাজের পাশাপাশি জাকাত আদায়ের কথা বলা হয়েছে। জাকাত দাতার মনকে ধনসম্পদের প্রতি লোভ থেকে মুক্ত ও পবিত্র করে। ধনীদের ধনসম্পদে যে দরিদ্রদের অধিকার রয়েছে, এই সত্যকেও তা প্রতিষ্ঠিত করে।
সুরা ওয়াকিয়ার সারকথা
কোরআনের সুরা জারিয়াতের ১৯ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আর তাদের (সম্পদশালীদের) ধনসম্পদে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের হক রয়েছে।’ এভাবে জাকাতের মাধ্যমে সামর্থ্যবানদের ধনসম্পদের কিছু অংশ ব্যয়ের ফলে তাদের অবশিষ্ট ধনসম্পদ পবিত্র হয়। সুরা তওবার ১০৩ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তুমি ওদের ধনসম্পদ থেকে সদকা আদায় করো, এর দ্বারা তুমি তাদের পবিত্র করে দেবে।’
কোরআনের সুরা রুমের ৩৯ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘ধনসম্পদ বৃদ্ধির জন্য তোমরা যা সুদ দিয়ে থাকো তা আল্লাহর কাছে বৃদ্ধি পায় না। কিন্তু তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য জাকাত দাও, তাদের ধনসম্পদ বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।’
কোনো ব্যক্তির মালিকানায় নিসাব পরিমাণ সম্পদ এক বছর পূর্ণ করার ফলে তাঁর ওপর জাকাত ফরজ হয়। জাকাত প্রযোজ্য হয় এমন সম্পদসমূহ হলো নগদ টাকা, সোনা, রুপা, সব ধরনের বাণিজ্যিক পণ্য, গবাদিপশু ও নির্দিষ্ট কৃষিপণ্য।