জীবন ধারণের উপযোগী করতে মঙ্গলে গ্রহাণু আঘাতের চিন্তা

মঙ্গল গ্রহ ঘিরে মানুষের কৌতূহল দিন দিন আরও বেড়েই চলেছে। লাল এই গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব না থাকলেও, ভবিষ্যতে কীভাবে সেখানে মানুষকে বসবাসের সুযোগ করে দেওয়া যায়—তা নিয়ে চলছে নানা গবেষণা। তবে মঙ্গল গ্রহের পরিবেশ স্বাভাবিক জীবনের জন্য মোটেই সহায়ক নয়। এই গ্রহের মাটিতে রয়েছে পারক্লোরেট নামের রাসায়নিক, যা মানবদেহসহ অধিকাংশ প্রাণীর জন্য অত্যন্ত বিষাক্ত।

এই জটিলতা সত্ত্বেও বিজ্ঞানীরা হাল ছাড়ছেন না। তারা মঙ্গলকে বাসযোগ্য করে তোলার নানান উপায় খুঁজে চলেছেন। অনেক গবেষকের মতে, অ্যান্টার্কটিকার শুষ্ক মরুভূমিতে বেড়ে ওঠা মস বা লাইকেন জাতীয় উদ্ভিদ মঙ্গলের কঠিন পরিস্থিতিতেও টিকে থাকতে পারে। তাই এই ধরনের উদ্ভিদ ব্যবহার করে গ্রহটিতে প্রাণের ছাপ আনার কথা ভাবছেন বিজ্ঞানীরা।

সম্প্রতি এক ব্যতিক্রমী ধারণা দিয়েছেন পোল্যান্ডের লেজেক চেকভস্কি, যিনি পোলিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস-এর গবেষক। তিনি মঙ্গল গ্রহে প্রাণের উপযোগী পরিবেশ গড়ার জন্য গ্রহাণু সংঘর্ষের প্রস্তাব দিয়েছেন। তার ভাষ্যে, যেহেতু মঙ্গলের মাটি পারক্লোরেটে পূর্ণ এবং সেখানে বায়ুমণ্ডলীয় চাপ অত্যন্ত কম—ফলে তা মানুষের শরীরের জলীয় উপাদান দ্রুত শুকিয়ে ফেলতে পারে। তাই এই গ্রহে সরাসরি বসতি গড়া কঠিন।

চেকভস্কির মতে, মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল মূলত কার্বন ডাই-অক্সাইড দিয়ে তৈরি হওয়ায় তা স্বাভাবিক জীবনধারণের জন্য যথেষ্ট নয়। কিন্তু যদি একটি বরফে ঢাকা গ্রহাণু মঙ্গল গ্রহে আঘাত হানে, তাহলে তার ফলে নির্গত গ্যাস ও উপাদান বায়ুমণ্ডলে পরিবর্তন আনতে পারে। সেই আঘাতে উৎপন্ন তাপ ও গ্যাস হয়তো মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলকে আরও ঘন করতে পারে, যা ভবিষ্যতে প্রাণের উপযোগী আবহাওয়ার পথ খুলে দিতে পারে।

চেকভস্কির এই তত্ত্ব বিজ্ঞান মহলে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। যদিও এটি বাস্তবে কার্যকর হতে অনেক ধাপ পেরোতে হবে, তবুও তার এই চিন্তাধারা ভবিষ্যতের জন্য এক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *