ত্বকে লাল লাল চাকা হয়ে যাওয়া অ্যালার্জিজনিত সমস্যা ও প্রতিকার

সাধারণত শরীরের ভেতর কোনো নির্দিষ্ট খাবার বা বস্তুর সংস্পর্শে এলে যে উপসর্গ দেখা যায়, তা-ই অ্যালার্জি। যেমন: ত্বকে লাল লাল চাকা হয়ে যাওয়া, চুলকানি ইত্যাদি। আর যেসব বস্তুর সংস্পর্শে এগুলো হয়, তাকে অ্যালার্জেন বলে। যেমন: বিভিন্ন রকমের খাবার, ফুলের রেণু, খড়, পশুপাখির বর্জ্য ইত্যাদি। অ্যালার্জির কারণে ত্বকে বিভিন্ন সমস্যা হয়ে থাকে। এর ভেতর সবচেয়ে বেশি হয় আর্টিকেরিয়া। এতে ত্বকে লাল লাল চাকা দেখা দেয় এবং সারা শরীর ফুলে যায়। কিছু কিছু ছোট বাচ্চার ক্ষেত্রে অল্পতেই চুলকানি দেখা যায়। এটাকে বলে অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস। আরেকটি হলো অ্যালার্জিক কন্ট্রাক্ট ডার্মাটাইটিস।
কোনো কিছুর সংস্পর্শে এলে শরীরের সেই অংশে একটা প্রদাহ হয়। বাচ্চাদের অ্যালার্জিজনিত চর্মরোগ প্রতিরোধের জন্য ছোটবেলা থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। গরমে সুতি এবং শীতে ফ্লানেল ও অ্যাক্রিলিকের কাপড় পরিধান করতে হবে, গা ঘষাঘষি করে গোসল করা যাবে না। গোসলের সময় সফ্ট বেবি সোপ এবং এর আগে-পরে ময়েশ্চারাইজার বা অলিভ বা কোকোনাট অয়েল লাগিয়ে নিতে হবে। আর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে মাইল্ড স্টেরয়েড ক্রিম লাগানো যেতে পারে। বয়স্কদের ক্ষেত্রেও একই প্রতিরোধব্যবস্থা মেনে চলতে হবে।
অ্যালার্জির কারণ ও ধরন একেক রোগীর জন্য একেক রকম। কারও খাবারে, কারও ধুলাবালুতে, কারও আবার ঠাণ্ডাতে। এ ছাড়া বিভিন্ন পেটস বা পালিত পশুপাখির লোম, লালা বা বর্জ্য, ফুলের রেণু, অতিরিক্ত গরম বা অতিরিক্ত ঠাণ্ডা আবহাওয়া, প্রসাধনী (সাবান, পারফিউম, লোশন, ক্রিম, মেকআপ), সিনথেটিক কাপড়, পোকামাকড় থেকেও এ সমস্যা হতে পারে।
অনেক সময় রোগী বুঝতে পারেন না কোন উপসর্গগুলো অ্যালার্জির, কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। সাধারণত লাল চাকা চুলকানিকে এর উপসর্গ বলা হয়। কিন্তু অনেকে জানেন না যে ছোট ঘামাচির মতো দানা, চোখ দিয়ে পানি পড়া, লাল হওয়া, চুলকানি, অনবরত হাঁচি দেওয়া, কাশি, শ্বাসকষ্ট, পেটে ব্যথা, বমি, ইত্যাদিও অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া। অ্যালার্জিজনিত শ্বাসকষ্টের জন্য মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই হঠাৎ এমন উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অনেকে মনে করেন অ্যালার্জি ছোঁয়াচে। এ ধারণা একদম ভুল। অনেকে ভাবেন, মা-বাবার অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে ছেলে- মেয়েদের এটি হতে পারে। সব ক্ষেত্রে অ্যালার্জি জেনেটিক্যালি হয় না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমন হয়ে থাকে।
এখন প্রায় সবাই ত্বকের যত্ন নিতে বিভিন্ন রকমের স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করেন। কিছু পণ্য আছে ত্বক ফরসা করার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ত্বক ফরসাকারী ক্রিমে বেশ ভালো মাত্রার স্টেরয়েড থাকে। এতে উপকারের চেয়ে অপকার বেশি হয়। কোনো স্কিন স্পেশালিস্ট এ ধরনের প্রোডাক্ট ব্যবহারের পরামর্শ দেবেন না কাউকে। ত্বক ফরসাকারী ক্রিম অবশ্যই একজন ভালো চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ভালো ব্র্যান্ডেরটা ব্যবহার করতে হবে।
অ্যালার্জি প্রতিরোধে সবার আগে কোন জিনিসে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া হয়, সেটা খুঁজে বের করে তা থেকে দূরে থাকা। আর ঘরবাড়ি সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, যাতে ধুলোবালু, পোকামাকড়মুক্ত রাখতে হবে। যাদের ধুলোবালুতে অ্যালার্জি, তাদের বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। পোষা প্রাণীদের পরিচর্যার সময় মাস্ক ও গ্লাভস পরে নিতে হবে।
সাধারণত অ্যালার্জি শনাক্তের জন্য ব্লাড টেস্ট করা হয়। এ ছাড়া প্যাচ টেস্ট করা হয়। এতে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় নানা রকমের অ্যান্টিজেন লাগানো স্ট্রিপ লাগিয়ে দেওয়া হয়। ২৪ ঘণ্টা বা নির্দিষ্ট সময় পর ওটা তুলে ফেলতে হয়। এরপর বোঝা যায় কোন অ্যালার্জেন ক্ষতি করছে। এক ব্যক্তির অনেকগুলো জিনিসে অ্যালার্জি হতে পারে। যেগুলোয় বেশি হয়, সেগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
কিছু ওষুধ আছে প্রিকশন হিসেবে দেয়া হয়। সাধারণত মৌসুম পরিবর্তনের সময় এগুলো সেবন করতে বলেন চিকিৎসকেরা। এর ভেতর মন্টিলুকাস খুব পরিচিত ওষুধ, যা রোগীদের দীর্ঘ সময় ধরে সেবন করতে দেখা যায়। প্রিভেনটিভ হিসেবে বা একটু বিরতি দিয়ে তিন বা ছয় মাসের জন্য ওষুধটি দেয়া হলেও দেখা যায়, পরিবেশ দূষণের ফলে বা অন্য কোনো কারণে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া বেড়ে যায়। তখন ডোজ আবার গোড়া থেকে শুরু করা লাগে। এ জন্য রোগীদের দীর্ঘক্ষণ ওষুধটি নিতে হয়।
অ্যালার্জির প্রচলিত ওষুধ অ্যান্টিহিস্টামিন। প্রথম জেনারেশনের অ্যান্টিহিস্টামিন খেলে ঘুমের প্রবণতা হয়। তবে এখন বাজারে অনেক ভালো মানের নন-সিডেটিভ অ্যান্টিহিস্টামিন (যেমন বিলটিন) পাওয়া যাচ্ছে। এগুলো চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *