দিনে কতবার প্রস্রাব হওয়া স্বাভাবিক? কিডনি সমস্যার লক্ষণ নয়তো

প্রস্রাব শরীরের একটি স্বাভাবিক ও প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া। তবে দিনের পর দিন যদি প্রস্রাবের পরিমাণ বা সংখ্যায় অস্বাভাবিকতা দেখা যায়, সেটি হতে পারে কিডনি বা মূত্রনালির সমস্যার ইঙ্গিত। সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষ দিনে কতবার প্রস্রাব করা স্বাভাবিক? কখন এই পরিবর্তন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়?

চলুন জেনে নেই দিনে কতবার প্রস্রাব স্বাভাবিক-

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের গবেষণা অনুযায়ী, একজন প্রাপ্তবয়স্কের দিনে ৬ থেকে ৭ বার প্রস্রাব হওয়া স্বাভাবিক। এটি নির্ভর করে ব্যক্তির পানি বা তরল খাবার গ্রহণের পরিমাণের ওপর। চিকিৎসকদের মতে, দিনে ৪ থেকে ১০ বার প্রস্রাব স্বাভাবিক বলে গণ্য হয়। তবে এর বেশি বা কম হলে সমস্যা হতে পারে।

তবে কখন যেটি রোগ?

একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কের মূত্রাশয়ে ২০০ মিলিলিটার প্রস্রাব জমলেই প্রস্রাবের বেগ অনুভূত হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় মূত্রাশয় ৩৫০ থেকে ৫৫০ মিলিলিটার প্রস্রাব ধরে রাখতে পারে। দীর্ঘ সময় প্রস্রাব চেপে রাখলে শ্রোণিতল বা পেলভিক ফ্লোরের পেশি দুর্বল হতে পারে। এতে মূত্রাশয়ে চাপ পড়ে, পেশির সংকোচন ও প্রসারণ বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে মূত্রনালির সংক্রমণ, ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ, বা হাঁচি-কাশিতে প্রস্রাব বেরিয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমন হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

প্রাপ্তবয়স্কদের দিনে তিন থেকে সাড়ে তিন লিটার পানি পান করা উপকারী। তবে রোগ থাকলে এই পরিমাণ ভিন্ন হতে পারে। চিকিৎসকদের মতে, দিনে ১০ বারের বেশি প্রস্রাব হলে তা অস্বাভাবিক, যাকে ‘পলিইউরিয়া’ বলা হয়। অতিরিক্ত পানি, ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় বা অ্যালকোহল বেশি খেলে এমন হতে পারে। রাত জেগে কাজ করার সময় ঘন ঘন চা বা কফি পান করলেও এই সমস্যা হতে পারে।

রাতে কত বার প্রস্রাব হওয়া স্বাভাবিক?

অনেকেরই রাতে ঘুমের মধ্যে বারবার প্রস্রাবের বেগ পায়। চিকিৎসকদের মতে, রাতে একবার বা সর্বোচ্চ দুবার প্রস্রাবের বেগ স্বাভাবিক। কিন্তু প্রতি ঘণ্টায় বেগ আসলে তা অস্বাভাবিক। চিকিৎসা পরিভাষায় এটি ‘নকচুরিয়া’ নামে পরিচিত।

কারা নকচুরিয়াতে আক্রান্ত-

১. যারা অ্যান্টি-সাইকিয়াট্রিক ওষুধ বা কিডনির ওষুধ সেবন করেন।

২. চল্লিশোর্ধ্ব বয়স্করা, বিশেষ করে প্রবীণরা।

৩. গর্ভবতী নারী বা রজোনিবৃত্তির পর নারীরা।

৪. হৃদরোগ, কিডনিতে পাথর বা প্রোস্টেট রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা।

৫. ডায়াবেটিস রোগীরা।

৬. থাইরয়েড বা কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বেশি থাকলে।

৭. স্নায়ুর রোগ বা মূত্রাশয়ের ক্যানসারে আক্রান্তরা।

প্রস্রাবের সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার পাশাপাশি জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। মদ্যপান, চা-কফি বা অতিরিক্ত ক্যাফেইনযুক্ত খাবার ত্যাগ করতে হবে। মশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। নিয়মিত শরীরচর্চা, যেমন হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার বা যোগব্যায়াম, পেলভিক পেশি শক্তিশালী করে। এতে মূত্রাশয়ের সমস্যা দূরে থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *