দেহ ও মনের সুস্থতায় প্রতিদিন ৭-৯ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। ঘুমের জন্য উৎকৃষ্ট সময় হলো রাত। রাতে ঘুমিয়ে সকাল সকাল উঠে যাওয়া ভালো অভ্যাস। তবে রাতের বেলা যদি কারও কাজ থাকে—যেমন অ্যাসাইনমেন্ট, পড়াশোনা, রাতের শিফটে কাজ—তাহলে? জেট ল্যাগে যাঁরা ভোগেন এবং ভিনদেশের সময় অনুযায়ী যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের বেলায়ও একই প্রশ্ন। এসব ক্ষেত্রে দিনের বেলা কয়েক ঘণ্টা ঘুমালে তাকে অতিরিক্ত ঘুম বলা যাবে না। আবার ভোরে ঘুম থেকে জাগলে সারা দিন নানা কাজের ব্যস্ততায় একসময় ক্লান্তি ভর করতেই পারে শরীরে।
ক্লান্ত শরীর কর্মোদ্যম হারায়। মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে পড়লে স্বাভাবিক মনঃসংযোগও ব্যাহত হয়। কাজের গতি কমে যায়। এমন সমস্যা মোকাবিলায় দুপুরের পর স্বল্পমেয়াদি হালকা ঘুম হতে পারে উপকারী। সুযোগ থাকলে দুপুরে কিংবা বিকেলে ২০-৩০ মিনিটের একটা ‘ন্যাপ’ অর্থাৎ ছোট্ট ঘুম দেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। ঘুমটা হতে হবে প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে, এলোমেলো রুটিনে নয়।
তবে শারীরিক ও মানসিক কারণে রাতে ঘুমের সমস্যায় দিনে ঘুম পেলে তা নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
কী কী কারণে রাতে ঘুমের সমস্যা হতে পারে
- ইনসমনিয়া মানেই ঘুমাতে না পারার সমস্যা।
- শারীরিক কোনো অসুবিধা থাকলে ঘুমে ব্যঘাত হয়। ব্যথা–বেদনা বা শোয়ার পর শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলেও ঘুম হয় না।
- অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া, যা সাধারণত স্থূলতার কারণে হয়। এ ক্ষেত্রে স্লিপ স্টাডি করে রোগ নির্ণয়ের পর রাতে সি প্যাপ ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
- অস্বাভাবিক, অনিয়ন্ত্রিতভাবে হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়া একটি অসুখ। এর নাম নারকোলেপসি।
- রেস্টলেস লেগ সিনড্রোমও হতে পারে এর কারণ। এতে রাতের বেলা পায়ে অস্বাভাবিক কিছু অনুভূত হয় বলে ঘুমাতে সমস্যা হয়।
- হাইপারথাইরয়েডিজমের রোগীদের ঘুম আসে না। কোনো কারণে যদি শরীরে তীব্র ব্যথা থাকে, স্নায়ুর রোগ, রাতে বারবার প্রস্রাব, মানসিক সমস্যা (যেমন বিষণ্নতা, দুশ্চিন্তা, ট্রমা) থাকলে।
- দিনের বেলা অ্যান্টিহিস্টামিন, ঘুমের ওষুধ, মাসল রিল্যাক্স্যান্ট, অ্যালকোহল, বিনোদনমূলক ওষুধ গ্রহণ করলে ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
- অন্তঃসত্ত্বা নারী, বয়স্ক রোগী, আয়রন ও ভিটামিনের (ভিটামিন বি১, বি৩, বি৫, বি৬, বি৯, বি১২, সি, ডি, ম্যাগনেশিয়াম) ঘাটতির জন্য ঘুমের সমস্যা হতে পারে।

দিনে বেশি ঘুম এলে কী করবেন
- মুখে ঠান্ডা পানির ছিটা দিতে পারেন।
- সকালে চা বা কফি খেতে পারেন।
- নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম, স্ট্রেচিং, রোদে হাঁটাহাঁটি করতে পারেন।
- শোয়ার ঘর অন্ধকার, ঠান্ডা (শীতকালে যেন উষ্ণ থাকে) ও শব্দহীন রাখুন।
- প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যান ও সকালে সময়মতো উঠুন।
- রাতে গরম পানি দিয়ে গোসল করতে পারেন, ঘুমানোর সময় কিছুক্ষণ বই পড়ুন।
- ঘুমানোর কয়েক ঘণ্টা আগে মোবাইল বা গ্যাজেট দেখা বন্ধ করুন। এর নীল আলো ঘুমে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।
- সুষম খাবার খান। প্রতিদিন দই, বাদাম, ফল ও পর্যাপ্ত পানি খান।
- অ্যালকোহল, ক্যাফেইন পরিহার করুন।
প্রকৃতির নিয়মানুযায়ী রাতকে ঘুমের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। দিনের বেলার ঘুম সেই ছন্দ, হরমোনের স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। রোদে না যেতে পারার কারণে হতে পারে ভিটামিন ডির ঘাটতি।
যদি দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১০ ঘণ্টার মতো কেউ ঘুমিয়ে কাটায়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। অথবা রোজ ৯ ঘণ্টা ঘুমানোর পরও যদি ক্লান্ত অনুভব করেন, তাহলেও সেটা নিয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন।