দ্রুত ওজন কমালে দীর্ঘ মেয়াদে তা বজায় রাখা মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়

জনতার কণ্ঠ ডেস্ক: ওজন কেন কমাব—আজকের দিনে এসে এই প্রশ্ন হয়তো কেউ করেন না। বরং যত দ্রুত সম্ভব, ওজন কমাতেই হবে—এই ভুল ভাবনায় ‘ভুল’ পথে চলছেন অনেকেই। হুট করে একদিন খাওয়াদাওয়া কমিয়ে দিয়ে (পারলে প্রায় ছেড়ে দিয়ে) শুরু হয়ে যায় ওজন কমার প্রতীক্ষা। অল্প কিছুদিনের ‘পরিকল্পনা’য় ওজন কমানো শরীরের জন্য ক্ষতিকর কি না—সে বিতর্কে যাচ্ছি না। তবে দ্রুত ওজন কমালে দীর্ঘ মেয়াদে তা বজায় রাখা মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। ওজন কমাতে হবে অবশ্যই ধীরেসুস্থে। কার্যকর ওজন কমানোর অন্যতম দুটি পূর্বশর্ত হলো ধৈর্য ও দীর্ঘ পরিকল্পনা।
এক দিনে সব হবে না: মনে রাখতে হবে—রাতারাতি ওজন বাড়েওনি, রাতারাতি ওজন কমানোও যাবে না। ওজন কমাতে হবে ধাপে ধাপে। নিজের জন্য ছোট ছোট ‘লক্ষ্য’ নির্ধারণ করে নিন। সপ্তাহে আধা কেজি বা এক কেজির বেশি ওজন কমানো যাবে না। এই হিসাবটা মাথায় রেখে ছয় মাস বা এক বছর মেয়াদি পরিকল্পনা করতে পারেন। আপনি কতটা পারবেন, তা নিজেই বুঝতে পারবেন ভালোভাবে। ওজন কমানোর পর আপনি কতটা ফুরফুরে অনুভব করবেন, ভবিষ্যতের সেই সুন্দর ভাবনাটা রাখুন মনের ভেতর। সপ্তাহান্তে নিজের লক্ষ্য কতটা পূরণ হলো, তার হিসাবনিকাশ করার পালা তো আসবেই। তবে প্রতি সপ্তাহেই হয়তো কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হবে না। এ নিয়ে হতাশ হওয়া যাবে না। আবার এক সপ্তাহের অপূর্ণ লক্ষ্য পরের সপ্তাহে পূরণ করতে গিয়ে বাড়তি চাপও নেওয়া যাবে না। লক্ষ্য পূরণ হলে নিজেকে পুরস্কৃত করতে পারেন (তবে উচ্চ ক্যালরির খাবার কিন্তু ‘পুরস্কার’ হিসেবে খুব একটা ভালো নয়)।
জীবনধারা হোক ‘সুস্থ’: খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করার অর্থ কিন্তু ‘না খেয়ে থাকা’ নয়। কোন খাবারে ক্যালরি বেশি, কোন খাবারে খারাপ ধরনের চর্বি বিদ্যমান, সেগুলো সম্পর্কে একটু জেনে নিতে হবে। খাবার কম খেতে খেতে মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকলে কিন্তু জীবনধারা ‘সুস্থ’ রইল না। ক্ষুধা তো লাগবেই। আর ক্ষুধা মেটাতেও হবে অবশ্যই। বেছে নিতে হবে কম ক্যালরি–সম্পন্ন খাবার। এমন খাবার খেতে হবে, যা খেলে সহজে ক্ষুধা অনুভূত হয় না। অর্থাৎ সঠিক খাবার বাছাই করা জরুরি। ক্ষুধার্ত অবস্থায় স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়।
শারীরিক পরিশ্রমের মাত্রা বাড়াতে হবে, সেটা আমরা জানি। কিন্তু হুট করে একদিন ভারী ব্যায়াম শুরু করে দিলে শরীরে সইবে না। অনভ্যস্ত শরীরে ব্যায়াম করতে গিয়ে চোট পেলে ‘যত দোষ’ সব ব্যায়ামের ওপরেই পড়বে হয়তো। তাই ব্যায়াম শুরু করুন এমনভাবে, যাতে শরীর অভ্যস্ত হওয়ার সময় পায়। আর ব্যায়াম শুরু করার পর সেটিকে একদম পাকাপোক্তভাবে যোগ করে নিন রোজনামচায়। খাদ্যাভ্যাস বা শরীরচর্চা বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে পারেন।
প্রয়োজন বন্ধুত্ব: হাঁটতে বা জগিং করতে যেতে হয়তো আপনার আলস্য বোধ হয়। কেমন হয়! যদি হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়ামের খোলা জায়গাটাতে কোনো বন্ধু থাকে আপনার? নিয়মিত ব্যায়াম করতে আসেন, এমন কারও সঙ্গে কিন্তু বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে পারেন। এরপর শরীরচর্চা করতে ইচ্ছা না হলেও কেবল বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতেই হয়তো যাবেন সেখানে। যাওয়ার পর বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলে হয়তো খানিক আলাপের পর শরীরচর্চা করার সিদ্ধান্তই সাব্যস্ত হয়ে যাবে। একে–অন্যকে উদ্বুদ্ধ করাটা জরুরি। বন্ধুত্ব মানে না বয়সের সীমা। তাই যেকোনো বয়সী বন্ধু হতে পারে আপনার শরীরচর্চার সঙ্গী। নিজ প্রজাতির বাইরেও কিন্তু বাড়িয়ে দিতে পারেন বন্ধুত্বের হাত। যেখানে শরীরচর্চা করতে যাচ্ছেন, তার আশপাশেই হয়তো রয়েছে কোনো অসহায় পথপ্রাণী। ওদের জন্য কিছু খাবার আর পানি নিয়ে যেতে পারেন। হয়তো এই বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করার জন্যই এরপর আর কোনো দিন ব্যায়ামের সময় আলস্য আসবে না।
চা–কফির সঙ্গে বেশ করে চিনি যোগ করে নিলে ওজন কমাতে আপনার বাকি চেষ্টাগুলো সাফল্যের মুখ দেখার সম্ভাবনা কমে যাবে। আবার চিনির বিকল্প ‘চিনি’ খাওয়ার অভ্যাসও না করাই ভালো। হুট করে চিনি খাওয়া একেবারে বাদ দেওয়া হয়তো সম্ভব নয় অধিকাংশ মানুষের পক্ষেই। তাই একটু একটু করে কমিয়ে আনুন চিনির পরিমাণ। বেশ কয়েক দিন (এমনকি মাস) কেটে গেলে এরপর হয়তো খুব সামান্য চিনি দিয়ে খেতেই অভ্যস্ত হয়ে উঠবেন আপনি। একসময় চিনি ছাড়াই খেতে পারবেন অনায়াসে। চা সুস্বাদু করে তুলতে চায়ে নানান রকম মসলা দিতে পারেন।
চিনির দুঃখটা হয়তো মসলার স্বাদে খানিকটা ভুলতে পারবেন। ভাজাপোড়া খাবার মুখরোচক, কিন্তু অস্বাস্থ্যকর। সেদ্ধ খাবার, ঝোল করে রান্না করা খাবারও মুখরোচক উপায়ে পরিবেশন করতে পারেন নিজেকে। এতেও ধীরে ধীরে নিজেকে অভ্যস্ত করে তুলতে পারেন। আবার ওজন কমানোর চেষ্টা থাকা সত্ত্বেও ‘দৃশ্যমান’ ওজনহ্রাস না হলে অনেকে কটূক্তি করতে পারেন। এসব কিন্তু সত্যিই ভীষণ ‘ছোট’ বিষয়। এগুলো নিয়ে একদমই মাথা ঘামাবেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *