স্নাতক হলেই কর এজেন্ট হওয়ার সুযোগ
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) করজাল বাড়াতে নিয়োগ দেবে কর এজেন্ট। ন্যূনতম স্নাতক পাশ হলেই যে কেউ কর এজেন্ট হিসাবে কাজ করতে পারবেন। তবে কর এজেন্ট হতে আগ্রহী প্রার্থীকে আবেদন করতে হবে এনবিআরে। এছাড়া এনবিআরের তালিকাভুক্ত সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আবেদন করা যাবে। দুই ক্ষেত্রেই এজেন্ট প্রার্থীর পরীক্ষা নেবে এনবিআর।
মঙ্গলবার এনবিআর থেকে জারি করা আয়কর রিটার্ন প্রস্তুতকারী (টিআরপি) বিধিমালা থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিধিমালায় বলা বলা হয়েছে, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট ও ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট বা চাটার্ড সেক্রেটারিজ; বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে নিবন্ধিত আইনজীবী এবং এনবিআর স্বীকৃত কর আইনজীবীরা পরীক্ষা ছাড়াই কর এজেন্ট হিসাবে কাজ করতে পারবেন। কর এজেন্টকে আদায় করা কর থেকে একটি অংশ প্রণোদনা হিসাবে দেবে এনবিআর।
এতে বলা হয়, কর এজেন্টদের আয়কর রিটার্ন প্রস্তুত ও জমা দেওয়ার ধারণা থাকতে হবে। কম্পিউটার ও আইসিটি বিষয়ে ব্যবহারিক জ্ঞান থাকতে হবে। এজেন্ট হতে এনবিআরে সরাসরি আবেদন করা যাবে বা সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানের কাছেও আবেদন করা যাবে। এনবিআর প্রত্যেক এজেন্টকে একটি ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন নম্বর দেবে। কর এজেন্ট শুধু আয়কর রিটার্ন প্রস্তুত করে দিতে পারবেন। কিন্তু করদাতার প্রতিনিধিত্ব করার মাধ্যমে আয়কর অফিসে শুনানি বা অন্য কোনো বিষয়ে প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করতে পারবেন না।
এনবিআর ভৌগোলিক এলাকাভিত্তিক এক বা একাধিক সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করতে পারবে। সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান নির্বাচনে আয়কর বিষয়ক সেবা ও পরামর্শ দেওয়ার অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠান অগ্রাধিকার পাবে। সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানের আয়কর রিটার্ন প্রস্তুতকারীদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়ার সক্ষমতা থাকতে হবে এবং কম্পিউটার ল্যাবসহ রিটার্ন দাখিলের জন্য প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সরবরাহের সক্ষমতা থাকতে হবে। সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানের কাজ হচ্ছে-কর এজেন্ট বা আয়কর রিটার্ন প্রস্তুতকারীদের প্রোফাইল সংরক্ষণ করা, কর্মদক্ষতা নিরীক্ষা করা, দক্ষতা বৃদ্ধিতে কার্যক্রম গ্রহণ করা।
বিধিমালায় আরও বলা হয়েছে, কর এজেন্ট করযোগ্য ব্যক্তির রিটার্ন প্রস্তুতে সহায়তা করবেন। এর আগে অবশ্যই ওই ব্যক্তির সম্মতি নিতে হবে। প্রস্তুত করা রিটার্নের একটি কপি করদাতাকে দিতে হবে। সব শেষে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র নিজের কাছে ও করদাতাকে বুঝিয়ে দিতে হবে।
একজন কর এজেন্ট যে পরিমাণ কর আদায় করবেন, সেজন্য তিনি প্রথম ৩ বছর আদায় করা ন্যূনতম করের ১০ শতাংশ, পরবর্তী ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ২ শতাংশ, পরবর্তী ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ১ শতাংশ এবং অবশিষ্ট করের ওপর দশমিক ৫০ শতাংশ প্রণোদনা পাবেন। চতুর্থ ও পঞ্চম বছরের জন্য তিনি যথাক্রমে ৫ শতাংশ, ১ শতাংশ, দশমিক ৫০ শতাংশ এবং দশমিক ২৫ শতাংশ হারে প্রণোদনা পাবেন। তবে কর এজেন্টের প্রণোদনার ১০ শতাংশ সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান সার্ভিস চার্জ হিসাবে প্রাপ্য হবে। যদি কোনো করদাতা প্রথম বছরের পর অন্য কোনো এজেন্টের মাধ্যমে রিটার্ন জমা দেন তাহলে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম বছরের জন্য ওই এজেন্ট সেই হারে প্রণোদনা পাবেন। প্রণোদনা পেতে কর এজেন্টকে সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এনবিআরে আবেদন করতে হবে।
অবশ্য বিধিমালায় অসদুপায় বা অনিয়মের জন্য কর এজেন্টের সনদ ও সহায়তাকারীর সঙ্গে চুক্তি বাতিলের বিধান রাখা হয়েছে। বিধামালায় বলা হয়েছে, কর এজেন্ট করদাতাকে রিটার্ন জমার স্লিপ না দিলে, করদাতার তথ্য সঠিকভাবে রিটার্নে উল্লেখ না করলে, প্রতারণামূলকভাবে অর্থ দাবি করলে বা আর্থিক অনিয়ম বা জালিয়াতি করলে বা ইচ্ছাকৃতভাবে রিটার্নে আয় কম দেখিয়ে কর ফাঁকি দিলে সনদ বাতিল করা হবে। এছাড়া সন্তোষজনক কর এজেন্ট তালিকাভুক্ত করতে ব্যর্থ হলে বা রাজস্ব ও জনস্বার্থ পরিপন্থি কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এনবিআর চুক্তি বাতিল করবে। কর এজেন্ট বা সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান করদাতার তথ্যের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করলে এনবিআর উভয়ের বিরুদ্ধে আয়কর আইনে ফৌজদারি মামলা করতে পারবে।