পরিশুদ্ধ অন্তর লাভে করণীয়

ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তির জন্য অন্তরের পবিত্রতা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ মহান আল্লাহর দরবারে মানুষের যে দুটি জিনিস উত্থিত হয়, তার একটি হলো পরিশুদ্ধ অন্তর, আরেকটি হলো আমল। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা‌ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের বাহ্যিক চালচলন ও বিত্ত-বৈভবের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন না; বরং তিনি দৃষ্টি দিয়ে থাকেন তোমাদের অন্তর ও আমলের প্রতি। (মুসলিম, হাদিস : ৬৪৩৭)

এমনকি কোরআনের বর্ণনা মতে কঠিন কিয়ামতের দিনও পরিশুদ্ধ অন্তরের মানুষেরা সম্মানিত হবে।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সেদিন কেবল (সাফল্য লাভ করবে) সেই ব্যক্তি, যে বিশুদ্ধ অন্তর নিয়ে আল্লাহর নিকট আসবে।(সুরা : শুআরা, আয়াত : ৮৯)

যাদের অন্তর পরিষ্কার হবে, অর্থাৎ অন্তর শিরক ও কুফরির ময়লা-আবর্জনা থেকে পাক-পবিত্র থাকবে, যারা আল্লাহ তাআলাকে সত্য জানবে, কিয়ামতকে নিশ্চিতরূপে বিশ্বাস করবে, পুনরুত্থানের প্রতি ঈমান রাখবে, আল্লাহর একত্ববাদকে স্বীকার করবে এবং সে অনুযায়ী আমল করবে, যাদের অন্তর কপটতা ইত্যাদি রোগ থেকে মুক্ত থাকবে এবং অন্তর ঈমান, ইখলাস ও নেক আকিদায় পূর্ণ থাকবে, যারা বিদআতকে ঘৃণা করবে এবং সুন্নতের প্রতি মহব্বত রাখবে, তারাই উপকৃত হবে।

তাই পরিশুদ্ধ অন্তর পেতে অন্তরকে সব ধরনের কুফর, শিরক ও বিদআত থেকে মুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি মানসিক দুশ্চিন্তার অন্যতম কারণ হিংসা, বিদ্বেষ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে।

কারণ হিংসা মানুষের নেক আমলকে ধ্বংস করে দেয়। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা অবশ্যই হিংসা পরিহার করবে। কারণ আগুন যেভাবে কাঠ বা ঘাসকে খেয়ে ফেলে, তেমনি হিংসাও মানুষের নেক আমলকে খেয়ে ফেলে।(আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯০৩)

হিংসা থেকে নিজের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করার একটি উপায় হলো তাকদিরে বিশ্বাসী হওয়া।

কারণ সাধারণত মানুষ অন্যের সফলতা ও অধিক প্রাপ্তি দেখলে তার মনে হিংসার জন্ম নেয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, মানুষ ততটুকুই পায়, যতটুকু আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জন্য বরাদ্দ রয়েছে। সুতরাং কারো অধিক প্রাপ্তি দেখে হিংসা করলে ক্ষতি ছাড়া লাভের কিছু নেই। রিজিক তো মহান আল্লাহ বণ্টন করেই রেখেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাদিকুল মাসদুক (ন্যায়পরায়ণ ও ন্যায়নিষ্ঠরূপে প্রত্যয়িত) রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে হাদিস বর্ণনা করেছেন যে, তোমাদের প্রত্যেকের শুক্রকীট তার মায়ের গর্ভে ৪০ দিন একত্রিত করা হয়।
তারপর হুবহু ৪০ দিনে তা একটি গোশত টুকরায় পরিণত হয়। তারপর আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে একজন ফেরেশতাকে প্রেরণ করা হয়। সে তাতে রুহ ফুঁকে দেয়। আর তাকে চারটি কলেমা (বিষয়) লিপিবদ্ধ করার আদেশ করা হয়—রিজিক, মৃত্যুক্ষণ, কর্ম, বদকার ও নেককার। সেই সত্তার শপথ, যিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই! নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্য হতে কেউ জান্নাতিদের আমালের (আমলের) ন্যায় আমাল (আমল) করতে থাকে। অবশেষে তার ও জান্নাতের মধ্যে মাত্র এক হাত দূরত্ব থাকে। অতঃপর ভাগ্যের লিখন তার ওপর জয়ী হয়ে যায়। ফলে সে জাহান্নামিদের কর্ম শুরু করে। এরপর সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হয়। আর তোমাদের মধ্যে কোনো কোনো ব্যক্তি জাহান্নামের কাজকর্ম করতে থাকে। ফলে জাহান্নামের মাঝে ও তার মাঝে মাত্র এক হাত দূরত্ব থাকে। তারপর ভাগ্যলিপি তার ওপর জয়ী হয়। ফলে সে জান্নাতিদের ন্যায় আমল করে। অবশেষে জান্নাতে প্রবিষ্ট হয়।

(মুসলিম, হাদিস : ৬৬১৬)

আরেকটি বিষয় হলো আল্লাহর সিদ্ধান্তের ওপর সন্তুষ্ট থাকা। অন্যরা যা পাচ্ছে, তা আল্লাহর দেওয়া রিজিক থেকেই পাচ্ছে। এটা তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে বরাদ্দ ছিল। অন্যের প্রাপ্তি দেখে কষ্ট না পাওয়া। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা আকাঙ্ক্ষা কোরো না সেসবের, যার মাধ্যমে আল্লাহ তোমাদের একজনকে অন্যজনের ওপর প্রাধান্য দিয়েছেন।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৩২)

আর বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত ও জিকির করা। কেননা কোরআনের তিলাওয়াত মানুষের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মানবজাতি! তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে এসেছে উপদেশ এবং অন্তরসমূহের বাসা বাঁধা রোগগুলোর আরোগ্যকারী, আর মুমিনদের জন্য সঠিক পথের দিশা ও রহমত।’ (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৫৭)

মহান আল্লাহ আমাদের অন্তরের ব্যাধিগুলোকে আরোগ্য দান করুন। আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *