পূজায় বাড়তি রোজগারের আশায় দিন গুনছেন ঢুলিরা “দুর্গাপূজা”

জনতার কণ্ঠ ডেস্ক: বাঙালির বড় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা শুরু হতে যাচ্ছে। পূজার চার দিন যাঁদের উপস্থিতি পূজাকে করে তোলে আনন্দময়, সেই ঢুলিরা এখন বাড়তি রোজগারের আশায় দিন গুনছেন।

পূজার সময় ঢাকঢোল বাজিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা রোজগার করতেন। সেই টাকায় পরিবারের লোকেরা কিছুটা হলেও শান্তিতে পূজার পর কয়টা মাস কাটাত। কিন্তু ১৮ মাস ধরে করোনা সংক্রমণ ও বিধিনিষেধের কারণে দিশেহারা অবস্থা ঢুলিদের। ঢাক বাজানো বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে এখন কেউ শ্রমিক। করোনাকালে কেউ অটোরিকশা চালিয়েছেন। কেউ সারা বছর রিকশা চালিয়ে সংসার টেনেছেন। তবে পূজার অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁরা।

ঠাকুরগাঁওয়ের রুহিয়া উপজেলার ঢোলার হাট মৌজার নামানুসারে ইউনিয়নের নাম রাখা হয়েছে ঢোলার হাট ইউনিয়ন। কথিত আছে, এ গ্রামে ঢোলারদের (ঢুলি) হাট বসত। তাই এ নাম রাখা হয়েছে। কয়েক পুরুষ ধরে পূজার মণ্ডপে মণ্ডপে ঢাকঢোল বাজানোই মূলত তাঁদের পেশা। তবে করোনার কবলে তাও বন্ধ ছিল। চলতি বছরে ঢাকঢোল বাজানোর বায়না আসছে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে। ফলে বাড়তি রোজগারের আশায় পূজার দিন গুনছেন ঠাকুরগাঁও সদরের ঢোলার হাট এলাকার ঢুলিরা।
তাকে তুলে রাখা ঢোল নামিয়ে চলছে ঝাড়ামোছা। ঢোলের চামড়া রোদে শুকিয়ে নিয়ে টান টান করে বেঁধে আবার কাঁধে নিয়ে শুরু হয়ে গেছে মহড়া। সদরের রুহিয়া থানার ঢোলার হাট এলাকার যতীন্দ্র নাথ বর্মণ, মমেন দাস, দিলীপ দাস, রতন দাস, মানিক ও বিপুল দাসের মতো ঢুলিদের এবার পূজায় ডাক পড়ছে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা থেকে। সেখানে দুর্গাপূজা উপলক্ষে ঢাকঢোল বাজাতে যেতে হবে।

যতীন্দ্র নাথ বর্মণ ও মমেন দাস জানান, সারা বছর টুকটাক পূজায় বায়না পেলেও দুর্গাপূজার সময়ে তাঁদের আয় ভালো হয়। বোদা, দেবীগঞ্জ, ডোমার, বীরগঞ্জ উপজেলা বা দিনাজপুর জেলা থেকে পূজায় ঢাক বাজানোর বায়না আসে। অনেকে আবার ঠাকুরগাঁও শহর অথবা রোড স্টেশন থেকেও বায়না পেয়ে যান। তাই শারদোৎসবের দিকে তাঁরা তাকিয়ে থাকেন সারা বছর। তবে করোনা মহামারির কারণে অন্য অঞ্চলে যাওয়া হয়নি। মণ্ডপে মণ্ডপে গিয়ে ঢাকঢোল বাজানো হয়নি। এ কারণে গতবারের পূজা রংহীন হয়ে গিয়েছিল। করোনা থেকে কবে মুক্তি পাওয়া যাবে, তা জানা নেই। তাই ঢোলে বোল তোলা ছেড়ে রিকশা, অটোরিকশা চালিয়ে সারা বছর রোজগার করছেন দিলীপ দাসেরা।

কিন্তু এবার আশার আলো দেখছেন তাঁরা। মানিক দাস বলেন, ‘প্রতিবারই পূজার সময় বিভিন্ন এলাকায় ঢাকঢোল বাজাতে যাই। গত বছর যাওয়া হয়নি। এবারও করোনার প্রকোপ রয়েছে। তবে তা সত্ত্বেও ঢাকঢোল বাজানোর ডাক এসেছে। পূজার সময় কিছু বাড়তি টাকা হাতে আসবে। না হলে সারা বছর রিকশা চালিয়ে কোনোমতে সংসার চলে।’ তবে বায়না পেলেও দুশ্চিন্তা কাটেনি। অনেকেরই এখনো করোনার টিকা নেওয়া হয়নি। রতন দাস নামের আরেক ঢুলি বলেন, ‘এখনো টিকা নেওয়া হয়নি। তাই নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে। তারপরও এবার অন্তত পূজার দিনগুলোতে ঢোলের কাঠিতে তাল তুলতে পারব। তারই প্রস্তুতি চলছে।’ ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় গত বছর ১৯৮টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা উদ্‌যাপন করা হয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *