প্রদাহের কারণে লিভারের কোষগুলো ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায়

ডা. এম এ হক
লিভার সিরোসিস লিভারের দীর্ঘমেয়াদি একটি রোগ। প্রদাহের কারণে লিভারের কোষগুলো ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে, লিভারের ভেতরের স্বাভাবিক গঠনের পরিবর্তন হয়। এর ভেতরে ফাইব্রোসিস হয়ে লিভার ধীরে ধীরে সংকুচিত হয় এবং এর কার্যক্ষমতা কমে যায়।
লিভার সিরোসিস:
লিভার সিরোসিস একটি মারাত্মক রোগ হলেও এটি নিরাময়যোগ্য। লিভারের নানা রকম রোগের মধ্যে এটিকে চূড়ান্ত পর্যায়ের একটি রোগ বলে গণ্য করা হয়। লিভার সিরোসিস লিভারের দীর্ঘস্থায়ী রোগের ফল যা দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত থেকে সৃষ্টি হতে পারে এবং মারাত্মক পর্যায়ের সিরোসিসে লিভারের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে মৃত্যুও হতে পারে। লিভার সিরোসিসের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে লিভারের সুস্থ-সবল টিস্যু বা কোষগুলো আক্রান্ত হয়ে ক্ষয়যুক্ত টিস্যু বা নডিউলে রূপান্তরিত হয়। ফলে, লিভার তার কাজ যেমন: বিপাক ক্রিয়া, খাদ্যের পুষ্টি উপাদানের ব্যবস্থাপনা, রক্ত জমাট বাঁধার উপকরণ তৈরি, ওষুধ ও রাসায়নিকের শোষণ ইত্যাদি সঠিকভাবে করতে পারে না। লিভার সিরোসিস হলে লিভার সূক্ষ্ম সুতার জালের মতো ফাইব্রোসিসের বিস্তার ঘটে। লিভারে ছোট ছোট দানা বাঁধে, আস্তে আস্তে সেটির বিস্তার ঘটতে থাকে একপর্যায়ে সম্পূর্ণ লিভার ছড়িয়ে পড়ে তখন লিভার আর নিজেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারে না, ফলে লিভার সংকুচিত হয়ে পড়ে।
লিভার সিরোসিসের কারণ:
সাধারণত দীর্ঘদিন ধরে ‘বি’ এবং ‘সি’ ভাইরাসের আক্রমণে লিভারের কার্যক্রম সংকুচিত হয়।
এ ছাড়াও অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, ফ্যাটি লিভার, অতিরিক্ত মদ্যপান, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ইচ্ছেমতো ওষুধ সেবন, অস্বাস্থ্যকর খাবার-পাণীয়, খোলা শরবত, কেমিক্যালযুক্ত ফল, অনিরাপদ যৌনমিলন, একই সুঁচ-সিরিঞ্জ ব্যবহার, সেলুনের কাঁচি, রেজার ইত্যাদি জীবাণুমুক্ত না করে ব্যবহারের মাধ্যমে হেপাটাইটিস হয়ে লিভার সিরোসিস রোগ হতে পারে। লিভার সিরোসিস আর লিভারের ক্যান্সার এক রোগ নয়। তবে লিভার সিরোসিস থেকে লিভারের ক্যান্সার হতে পারে।
লিভার সিরোসিসের লক্ষণ:
লিভার সিরোসিসের শুরুর দিকে তেমন উপসর্গ থাকে না। অনেক সময় পেটের আলট্রাসাউন্ড কিংবা পেটে অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে এই রোগটি ধরা পড়ে। রক্ত পরীক্ষা, বায়োপসি, সিটি স্ক্যান, এমআরআই ইত্যাদি পরীক্ষার মাধ্যমেও রোগটি শনাক্ত হতে পারে। তবে, কিছু লক্ষণ দেখা গেলে লিভার সিরোসিসের বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। যেমন: শারীরিক দুর্বলতা, খাবারে অরুচি, পেটে অস্বস্তি, ওজন কমে যাওয়া, অবসাদ ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। লিভার সিরোসিস হলে পেটে বা পায়ে পানি আসতে পারে, চোখ ও প্রস্রাব হলুদ হতে পারে। অনেকে জ্ঞান হারিয়ে কোমায়ও চলে যেতে পারেন।
চিকিৎসা:
সাধারণত লিভার সিরোসিস হলে বিশেষজ্ঞগণ লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টের পরামর্শ দেন। তবে, নির্ভরযোগ্য বিকল্প চিকিৎসা থাকলে কেন লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টের মতো জটিল এবং ব্যয়বহুল অপরেশনের ঝুঁকি নেবো? বিকল্প চিকিৎসাসেবা অর্থাৎ হোমিওপ্যাথিতে লিভার সিরোসিস ভালো হয় একথা সকলেই জানেন। এজন্য প্রয়োজন লিভার সিরোসিস চিকিৎসায় অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক। চিকিৎসক রোগীকে বিনা অপরেশনে এবং কম খরচে ঝুঁকিমুক্তভাবে সুস্থ করে তুলবেন এটাই সকলের কাম্য। চিকিৎসা শুরু করলে যদি রোগীর কষ্ট কমতে থাকে, হজম ক্রিয়া ঠিকমতো চলতে থাকে এবং শরীরের শক্তি স্বাভাবিক হতে থাকে তাহলে বুঝতে হবে চিকিৎসা সঠিক হচ্ছে। এ ছাড়াও প্রয়োজন মনে করলে লিভারের স্ক্যান অথবা এম.আর.আই করেও চিকিৎসার অগ্রগতি দেখে নিতে পারেন। লিভার বা যকৃত যেহেতু অতি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ সেহেতু চিকিৎসক নির্বাচনের সময় অবশ্য গুরুত্ব দিতে হবে। লিভার সিরোসিস চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথির সফলতা এবং ঝামেলামুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতিতে আকৃষ্ট হয়ে ক্রমেই এই চিকিৎসার প্রতি রোগীদের আস্থা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
লিভার সিরোসিসের চিকিৎসায় রোগীর ‘মায়াজমের’ দিকে খেয়াল রেখে সঠিক ওষুধ নির্বাচনের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়। এ ছাড়াও চিকিৎসার পাশাপাশি লাইলস্টাইল ও খাদ্য-খাবার সম্পর্কে পরামর্শ প্রদান করি যা অসুস্থ লিভারের কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য সহায়ক হয়ে রোগী দ্রুত সুস্থতা লাভ করে। অতএব, লিভার সিরোসিসের চিকিৎসা নিয়ে আর দুচিন্তা নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *