প্রেমিক বিয়ে করতে না চাইলে কি তাঁকে ছেড়ে যাবেন?

এই শিরোনামে জনপ্রিয় মার্কিন ওয়েবসাইট ‘মিডিয়াম’-এ ৪৫ বছর বয়সী নারী ওয়াই এল উলফি তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন। সে অভিজ্ঞতা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো তাঁরই বয়ানে।

একটা সুস্থ, সুষম সম্পর্কে আপনি কখনোই মানসিক চাপ বা হীনম্মন্যতায় ভুগবেন না
একটা সুস্থ, সুষম সম্পর্কে আপনি কখনোই মানসিক চাপ বা হীনম্মন্যতায় ভুগবেন না

মধ্যবয়সী একজন নারী, যাঁর জীবনসঙ্গী নেই, সংসার নেই, সন্তান নেই—এমন একটা জীবন কেউ চায় না। আমার প্রেমিক আমার চেয়ে বয়সে ছোট ছিল। তাই প্রথম কয়েক বছর ওর সঙ্গে বিয়ের প্রসঙ্গে কোনো কথাই তুলিনি। ভেবেছি, ও সময় নিক। নিজে বিয়ে, সন্তান নেওয়া বা সংসার পাতার গুরুত্ব অনুভব করুক।

এভাবে চার বছর পেরিয়ে গেল। আমরা এক ছাদের নিচে থাকতাম। আমি ভালো একটা চাকরি করতাম। ও পেশাজীবনে খুব একটা থিতু ছিল না। চাকরি করত, আবার করত না। ঘরে শুয়েবসে সময় কাটাত। আবার আমার অনেক জোরাজুরিতে নতুন একটা চাকরিতে ঢুকত।

আমি টাকা জমিয়ে প্রতিবছর একটি বা দুটি দেশে ঘুরতে যেতাম। ভালো-মন্দ মিলিয়ে কেটে যাচ্ছিল। সম্পর্কের সাড়ে চার বছর পর প্রথম ওকে একদিন জিজ্ঞেস করলাম, ‘তুমি কেন আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দাও না?’

এর কিছুদিন আগে আমার মায়ের দ্বিতীয়বারের মতো বিচ্ছেদ হয়েছিল। ও সেই প্রসঙ্গ তুলে বলল, ‘তোমার মায়ের বিচ্ছেদের কথা ভেবে ভয় লাগে। দুবার বিচ্ছেদ হলো। আমরা এভাবেই ভালো আছি। বিয়ে করলে যদি সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়? যদি বিচ্ছেদ হয়ে যায়?’

এটা কোনো কথা! আমি বেশ আহতই হলাম। তবে কিছুই বললাম না। আমি খুব করে মা হতে চাইছিলাম। তবে আমার সন্তানকে আমন্ত্রণ জানাতে চেয়েছিলাম একটা সুখী পরিবারে। একা মা (সিঙ্গেল মাদার) হতে চাইনি বা এমন কাউকে আমার সন্তানের বাবা হিসেবে চাইনি, যে সম্পর্কে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নয়। একটা মানুষ সম্পর্কে সবই করবে, যদি সে আদতে সেখানে থাকে, যদি সে সত্যিকার অর্থেই আপনার জন্য সেটি অনুভব করে। না হলে সে আমার বিষাক্ত প্রাক্তন প্রেমিকের মতো নানান অজুহাত দেখাবে। আর ভালোবাসায় ডুবে থাকা আপনার কাছে সেসব ‘যথেষ্ট যৌক্তিক’ বলে ভ্রম হবে!

পাঁচ বছরের মাথায় সম্পর্ক প্রায় ভেঙেই ফেলেছিলাম। তবে প্যারিসে ঘুরতে গিয়ে (বলতে দ্বিধা নেই, আমার অর্থে, কেননা এই সম্পর্কটাকে আরেকটা সুযোগ দিতে চাইছিলাম) আবার সেটা জোড়া লেগে গেল। ফিরে এসে ওকে প্রায়ই বিয়ের কথা বলতাম। কেননা ওর বয়স তখন ৩০, আমার ৩৫। ও নানান যুক্তি দেখিয়ে এড়িয়ে যেত। একেক সময় একেক কারণ দেখাত। এককথায়, আমাকে ঝুলিয়ে রাখত।

কখনো সে বলেনি যে বিয়ে করবে না বা সন্তান নেবে না। ‘আজ না কাল, কাল না পরশু, ওখান থেকে ঘুরে এসে, আরেকটা ভালো চাকরি পেয়ে…’—এসবই ছিল টোপ। যার সবই আমি গিলেছি। মানসিক চাপ, হীনম্মন্যতা, আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভুগেছি। ভেবেছি, গলদটা হয়তো আমারই। তাই নিজেকে আরও বেশি করে সম্পর্কে ঢেলে দিয়েছি।

মনে রাখবেন, একটা সুস্থ, সুষম সম্পর্কে আপনি কখনোই মানসিক চাপ বা হীনম্মন্যতায় ভুগবেন না। কখনোই আপনার মনে হবে না যে আপনার ভেতরে কোনো কমতি আছে। যদি মনে হয়ও, বুঝবেন, আপনার সঙ্গী ‘ম্যানিপুলেটিভ’। আপনাকে কেবল ব্যবহার করে নিজের স্বার্থসিদ্ধি করতে চায়।

সময়ের সঙ্গে দেখেছি, তার কথার সঙ্গে কাজের কোনো মিল নেই। অথচ আমি এই সম্পর্কে যেকোনো মূল্যে থিতু হতে চাইছিলাম। সম্পর্কটা ভালোভাবে টেকাতে নিজের সবকিছু উজাড় করে দিয়েছি। নিজের জীবনের সেরা সময়, নিজের আয় করা অর্থ, শ্রম, মনোযোগ, ভালোবাসা, বিশ্বাস—সবকিছু। সম্পর্কের ৭ বছর পর টের পেলাম, সে ২০ বছর বয়সী একটা মেয়ের সঙ্গে লুকিয়ে প্রেম করছে। এরপর আদতে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না!

এখন বুঝি যে একটা অসম, অস্বাস্থ্যকর সম্পর্কে আপনি যতই অপর পক্ষকে মরিয়া হয়ে ভালোবাসবেন, সম্পর্ক জোড়া লাগাতে চাইবেন, অপর পক্ষ সেটিকে ততটাই ‘ফর গ্রান্টেড’ হিসেবে নেবে। অপর পক্ষ থেকে সম্পর্কের বাঁধন ততটাই আলগা হয়ে যাবে। একসময় সম্পর্কটা কেবল আপনার পক্ষ থেকেই থাকবে। কিন্তু ততক্ষণে আপনি ওই সম্পর্কে এতটাই ডুবে গেছেন যে সেটা বুঝতেও পারবেন না।

একটা ভালো সম্পর্কে থাকলে মনে হবে না যে আপনার ভেতরে কোনো কমতি আছে
একটা ভালো সম্পর্কে থাকলে মনে হবে না যে আপনার ভেতরে কোনো কমতি আছে

চল্লিশের কোঠায় দাঁড়িয়ে ঠিক করেছি, এখন নিজের জীবনের সেরা সময়টা কাটাব। আর কাটাচ্ছিও তা-ই। এখন আর প্রেম, বিয়ে, সন্তান, সম্পর্ক আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজে ভালো থাকা। নিজের জীবনের সব অনুভব আর শিক্ষা অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া।

একটা মানুষ সম্পর্কে সবই করবে, যদি সে আদতে সেখানে থাকে, যদি সে সত্যিকার অর্থেই আপনার জন্য সেটি অনুভব করে। না হলে সে আমার বিষাক্ত প্রাক্তন প্রেমিকের মতো নানান অজুহাত দেখাবে। আর ভালোবাসায় ডুবে থাকা আপনার কাছে সেসব ‘যথেষ্ট যৌক্তিক’ বলে ভ্রম হবে! আপনি আরও সময় নেবেন। আশায় বুক বাঁধবেন। জীবনের আরও কয়েকটা দিন, মাস, বছর বাজে খরচ করবেন। তাই এই লেখার শিরোনামের প্রশ্নের উত্তর হলো, ‘অবশ্যই, এক মিনিটও অপচয় না করে।’

এই সম্পর্কে আমি আমার জীবনের মূল্যবান সাতটা বছর নষ্ট করেছি। ভালোবাসার ওপর থেকে আস্থা হারিয়েছি। আরও দুই বছর লেগেছে আমার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে। মনে রাখবেন, কেউ যদি সম্পর্কে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে দ্বিধাগ্রস্ত থাকে, এর মানে এটা তার পক্ষ থেকে একটা ‘বিগ নো সাইন’, আপনি কেবল সেটি দেখতে পাচ্ছেন না। তাই আমার জীবন থেকে শিক্ষা নিন। আর এ রকম সম্পর্ক থেকে যতটা সম্ভব দূরে চলে যান, নিরাপদে থাকুন। কেননা জীবন একটাই!

পাঠকের মন্তব্য

মিডিয়ামের এই লেখার নিচে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘জীবনের শুরুর দিকে আমিও ঠিক এ রকম অবস্থায় পড়েছিলাম। তবে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিলাম মাত্র ২৩ বছর বয়সে। আমার সেই প্রাক্তন প্রেমিক বিয়েতে অজুহাত দেখাতেই সেখান থেকে সরে এলাম। ভাঙা হৃদয়ের সব জিদ জড়ো করে তা বিনিয়োগ করলাম ক্যারিয়ার গড়তে। আবারও প্রেমে পড়লাম। ২৭ বছর ধরে ভালো আছি। তিন সন্তানের মা-বাবা আমরা, বড় সন্তানও ইতিমধ্যে বিয়ে করে সংসার পেতেছে।’

সূত্র: মিডিয়াম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *