ডায়াবেটিক সমিতির ফার্মেসি
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, প্রায় দুই বছর ধরে নিয়মিত ওষুধ সংগ্রহ করলেও সিটি হেলথ বকেয়া পরিশোধ করেনি। এতে ধীরে ধীরে বকেয়ার পরিমাণ বাড়তে থাকে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রতিষ্ঠানটির অধীন ফার্মেসিগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং সম্প্রতি দোকানের চাবি বারডেম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা গত বছরের শেষ দিকে এবং এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ জানালেও কর্তৃপক্ষ কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।
প্রথম লিখিত অভিযোগটি করা হয় ২০২৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর, যেখানে ওষুধ কোম্পানির ২০ জন প্রতিনিধি সই করেন। তারা জানান, সিটি হেলথের পরিচালক ফারুক আজম খানের পরিচালনায় বাডাস ফার্মেসি, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল (শাহবাগ) এবং বারডেম মা ও শিশু হাসপাতালে (সেগুনবাগিচা) তারা ৩০-৬০ দিনের ক্রেডিটে দীর্ঘদিন ধরে ওষুধ সরবরাহ করে আসছেন। কিন্তু দুই বছরের বেশি সময় পার হলেও প্রতিষ্ঠানটি বকেয়া পরিশোধ করছে না। ফলে চাকরিচ্যুত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন প্রায় সব এরিয়া ম্যানেজার ও বিক্রয় প্রতিনিধিরা।
এই চিঠির অনুলিপি বাডাসের তিনজন যুগ্ম পরিচালক, বারডেম হাসপাতালের মহাপরিচালক ও প্রশাসনিক পরিচালককে পাঠানো হলেও কার্যত কোনো অগ্রগতি হয়নি। পরবর্তী সময়ে ২০২৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ছয়জন এরিয়া ম্যানেজার বারডেম জেনারেল হাসপাতালের মহাপরিচালককে পৃথক অভিযোগপত্র দেন। সেখানে তারা উল্লেখ করেন, বাডাস ফার্মেসিতে ৩০-৯০ দিনের বাকিতে বিভিন্ন ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করা হলেও ফার্মেসির পরিচালক কৌশলে বকেয়া পরিশোধ এড়িয়ে যাচ্ছেন। তার কারণে অর্ধশতাধিক কোম্পানির ৭০০ কর্মী চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন। এই অভিযোগের অনুলিপিও স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের প্রধান ও বাডাস মহাসচিবকে দেওয়া হয়, কিন্তু কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি।
ইনসেপ্টা, হেলথকেয়ার, স্কয়ার ও অপসোনিনের প্রতিনিধিরা জানান, বাডাস ফার্মেসির পরিচালক ফারুক আজম খান ও তার স্ত্রী রাবেয়া খাতুনের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনায় বসা হলেও কোনো ফল হয়নি।
সিটি হেলথের মালিক ফারুক আজম খান বলছেন, ওষুধ কোম্পানিগুলোর কাছে তার প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১৩ কোটি টাকা বকেয়া ছিল, যার মধ্যে তিনি ৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন। গত বছরের ডিসেম্বরে বাডাস থেকে তাকে বকেয়া পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয় এবং পরে ফার্মেসি বন্ধ করে দিতে বলা হয়। তার দাবি, তিনি সময় পেলে সব বকেয়া পরিশোধ করতেন। কিন্তু বাডাস ও হাসপাতালের অভ্যন্তরে একটি ‘সিন্ডিকেট’ থাকার কারণে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, তিনি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্য এবং নিজে কোনো অর্থ তোলেননি। বরং অনলাইন হেলথ ও উপজেলাভিত্তিক প্রকল্পের মাধ্যমে আয়ের ব্যবস্থা করেছেন। বকেয়া বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি কর্মচারীদের অসদুপায় অবলম্বনের কথা জানান।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির পক্ষ থেকে কেউ এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলতে রাজি হননি। কেউ কেউ বলেছেন, তারা জানেন না। আবার কেউবা বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে একজন কর্মকর্তা জানান, সমস্যার সমাধানে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব ডা. জাকির হোসেন জানান, তিনি ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত আছেন, তবে কোনো ওষুধ কোম্পানি এখনো তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেনি। তার মতে, বাডাস বা বারডেম কর্তৃপক্ষের উচিত একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান বের করা।
এ বিষয়ে বারডেম হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার (অব.) জেনারেল ডা. মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ জানান, তিনি এ বিষয়ে কথা বলার উপযুক্ত ব্যক্তি নন, তবে সমস্যার সমাধানে কাজ চলছে। হাসপাতালের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ওষুধ সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে।
বারডেম হাসপাতালের প্রশাসনিক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ডা. মোহাম্মদ মহসিন বলেন, সিটি হেলথের কাছে শুধু ওষুধ কোম্পানিই নয়, হাসপাতালের ভাড়াও বকেয়া রয়েছে। বিষয়টি আইনগতভাবে মোকাবিলার চিন্তা করা হচ্ছে এবং প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সব চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। ওষুধ কোম্পানিগুলোর সঙ্গেও এরই মধ্যে আলোচনা হয়েছে এবং বারডেম কর্তৃপক্ষ ফার্মেসি পরিচালনার দায়িত্ব নিজেরা নিয়েছে।