বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় হিমাগারে রাখা আলুর ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ কৃষক-জনতা তিনটি হিমাগারে (আলু স্টোর) হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে। মঙ্গলবার (১ জুলাই) দুপুরে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
হামলা হওয়া হিমাগার তিনটি হলো—উপজেলার আপসন গ্রামে অবস্থিত হিমাদ্রী লিমিটেড, খয়রাপুকুর বাজারে অবস্থিত শাহ সুলতান আলু স্টোর ও জামুরহাট বাজারে অবস্থিত মাহমুদিয়া আলু স্টোর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর হিমাগারগুলোতে আলু রাখার ভাড়া বৃদ্ধির কারণে কোনো কৃষক ও ব্যবসায়ীরা আলু উত্তোলন করেছেন না। গত বছর প্রতি বস্তার ভাড়া ছিল ৩২০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা। এবার ভাড়া বৃদ্ধি করে বর্তমানে ৪০০ টাকা থেকে ৪২০ টাকা করা হয়েছে। ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে উপজেলার কৃষক ও আলু ব্যবসায়ীরা কয়েক মাস ধরে মানববন্ধন করে প্রতিবাদ সভা করেছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে হঠাৎ করেই ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে উত্তেজিত জনতা উপজেলার আপসনে হিমাদ্রী লিমিটেডে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন। ঠিক একই সময় জামুরহাট বাজারে অবস্থিত মাহমুদিয়া হিমাগারেও বিক্ষিপ্ত জনতা হামলা চালানোর সময় স্টোর কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সুধীজনের চেষ্টায় বড় ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
এর আগে সোমবার (৩০ জুন) দুপুরে উপজেলার খয়রাপুকুর বাজারে অবস্থিত শাহ সুলতান স্টোরে হামলা চালিয়ে কাচের তৈরি দরজা-জানালা ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়।
কৃষক আব্দুর রশিদ, কাওসার হোসেন ও মুনছুর রহমান বলেন, আমরা স্টোরে বীজ আলু সংরক্ষণ করেছি। আমাদের প্রতি বস্তায় স্টোর ভাড়াসহ খরচ হয়েছে ১৬০০ টাকা। বর্তমানে আলু উত্তোলন করলে সব খরচ বাদ দিয়ে আমাদের কিছুই টিকবে না। আমরা অবিলম্বে স্টোর ভাড়া কমানোর দাবি জানাচ্ছি।
আলু ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম মিস্টার, সাগর ফকির, হাফিজার রহমান, মোকাব্বর হোসেন মন্টু, তোফাজ্জল হোসেন, আলফেট হোসেন বলেন, এক মাস আগে আলু উত্তোলনের কথা ছিল। অথচ স্টোর ভাড়া বৃদ্ধির কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। স্টোর কর্তৃপক্ষ যদি ভাড়া না কমায় তাহলে স্থানীয় জনসাধারণকে সঙ্গে নিয়ে আবারও আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।
খয়রাপুকুর বাজারের শাহ সুলতান আলু স্টোরের ম্যানেজার আবুল হাশিম বলেন, উত্তেজিত জনতা কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগে হামলা চালিয়ে স্টোরের কাচের তৈরি দরজা-জানালা ও আসবাবপত্র ব্যাপক ক্ষতি সাধিত করেছে। ভাড়া বৃদ্ধি বা কমানো এটা অ্যাসোসিয়েশনের ব্যাপার।
হামলার বিষয়ে হিমাদ্রী লিমিটেডের ম্যানেজার আব্দুল কুদ্দুস বলেন, হিমাগারে হামলা চালিয়ে কাচের তৈরি দরজা-জানালায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ভাঙচুর করেছে।
মাহমুদিয়া আলু স্টোরের ম্যানেজার চন্দন কুমার সরকার বলেন, বিক্ষিপ্ত জনতা হামলা চালাতে এসেছিলেন। কিন্তু স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় তাদের বুঝিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
শিবগঞ্জ থানার ওসি শাহীনুজ্জামান শাহীন বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত স্টোর পরিদর্শন করা হয়েছে। স্টোরগুলোতে সার্বক্ষণিকভাবে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিয়াউর রহমান বলেন, আলু স্টোরে হামলার ঘটনা জানার পর শাহ সুলতান স্টোর পরিদর্শন করা হয়েছে। বর্তমানে আলু স্টোরগুলো প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছে।