বিএনপি’র সমাবেশে লাখো জনতার স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণ

ঢাকা, ৭ আগস্ট, ২০২৪ (জনতার কণ্ঠ) : বিএনপি’র চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া প্রতিহিংসা, প্রতিশোধ ভুলে গিয়ে দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে ছাত্র ও তরুণদের হাত আরো শক্তিশালী করার জন্য তাঁর দলের নেতা-কর্মীসহ দেশবাসীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ এই বিজয় সমাবেশে বেগম খালেদা জিয়ার ভিডিওকৃত ভাষণে এ আহ্বান জানানো হয়।
‘স্বৈরাচারী’ শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার গণবিষ্ফোরণে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ থেকে চলে যাওয়ার পর বিএনপি আয়োজিত বিজয় সমাবেশে বেগম খালেদা জিয়া এই ভাষণ দেন।
জ্ঞানভিত্তিক ও বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, শান্তি, প্রগতি আর সাম্যের ভিত্তিতে আধুনিক বাংলাদেশ নির্মাণে ‘আসুন আমরা ছাত্র ও তরুণদের হাত শক্তিশালী করি। ধ্বংস নয়, প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসা পরায়নতা নয়, বরং ভালোবাসা দিয়ে জ্ঞানভিত্তিক শান্তির সমাজ গড়ে তুলি। সকল ধর্মের, গোত্রের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থান সম্পর্কে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ‘এই বিজয় আমাদের নতুন সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে। দীর্ঘদিনের নজিরবিহীন দুর্নীতি এবং গণতন্ত্রের ধ্বংসস্তুপের মধ্য থেকে আমাদের নির্মাণ করতে হবে এক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। বীর সন্তানরা মরণপণ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে।’ তিনি ছাত্র-জনতার এই আন্দোলনে শত-শত শহীদের স্মৃতির প্রতি জানান গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং আহতদের সুস্থতা কামনা করেন।
‘ছাত্র-তরুণরাই আমাদের ভবিষ্যত’ এ কথা উল্লেখ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ‘তরুণরা যে স্বপ্ন নিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছে, সেস্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য অবশ্যই মেধা, যোগ্যতা ও জ্ঞানভিত্তিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। মানবাধিকার, সামাজিক ন্যায় বিচার ও সাম্যের ভিত্তিতে নির্মাণ করতে হবে শোষণহীন সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।’
বিকেল পৌনে ৩ টায় নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের অস্থায়ী মঞ্চে কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়।
সমাবেশ শুরুর পরপরই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী এবং রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ‘স্বৈরাচারী’ শেখ হাসিনা দেশ থেকে চলে যাওয়ার ২ দিনের মাথায় বিএনপি এই বিজয় সমাবেশের আয়োজন করে। স্বল্প সময়ে হলেও এই সমাবেশে লাখো জনতার স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণ ছিল অভাবনীয়।
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া তথাকথিত দুর্নীতি মামলায় দন্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যাওয়ার পর এই প্রথম নেতাকর্মীরা তাঁর ভাষণ শুনলেন।
২০২০ সালে সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি মিললেও সরকারের শর্তের কারণে তাকে গুলশানের বাড়িতে একপ্রকার বন্দিজীবনে থাকতে হয়েছে। এই সময়ে দলের কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তাকে দেখা যায়নি।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি দন্ড মওকুফের সিদ্ধান্ত জানালে গত মঙ্গলবার মুক্তি পান বেগম খালেদা জিয়া। তবে অসুস্থতার কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি হাসপাতালে আছেন।
বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ‘দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর আপনাদের সামনে কথা বলতে পারার জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। আমার কারাবন্দি অবস্থায়, আপনারা আমার কারামুক্তি ও রোগ মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন, দোয়া করেছেন। সে জন্য আমি আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
বেগম জিয়া বলেন, ‘দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম ও ত্যাগের বিনিময়ে আমরা ফ্যাসিবাদী অবৈধ সরকারের কাছ থেকে মুক্তি পেয়েছি। আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাতে চাই, আমাদের বীর সন্তানদের যারা মরণপণ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। শত শত শহীদের জানাই শ্রদ্ধা’।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে বিজয় সমাবেশে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান ভিডিও কনফারেন্স প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।
এছাড়াও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খোন্দকার মোশারফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নজরুল ইসলাম খান ও বেগম সেলিমা রহমান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশ পরিচালনা করেন বিএনপির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *