অধ্যাপক ডা. এস এম বখতিয়ার কামাল
ভাইরাল ওয়ার্ট বা আঁচিল একটি চর্মজনিত রোগ। ভাইরাল ওয়ার্ট বা আচিল খুব বেশি ছোঁয়াচে, যা শুধু অন্য রোগী থেকেই নয়, নিজের শরীরের এক অংশ থেকে অন্য অংশে সহজেই সংক্রমিত হতে পারে। এই বিশেষ ধরনের আঁচিলটি হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) দ্বারা সংক্রমিত, যার দ্বারা শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, প্রাপ্তবয়স্ক যে কেউ আক্রান্ত হতে পারে। এটি বিনাইন বলে শুরুতে অনেকেই একে গুরুত্ব মনে করে না। কিন্তু পরে বিরক্তির কারণ হতে পারে। তাই আঁচিলের দেখা দেয়া মাত্রই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। বিভিন্ন গবেষকরা ১০০ ধরনের প্যাপিলোমা ভাইরাস আবিষ্কার করেছেন। আঁচিলের আকৃতি, গঠন, ধাপ ও শরীরের কোনো অংশে আক্রমণ করেছে- এর ওপর ভিত্তি করে ওয়ার্টের নামকরণ করা হয়েছে।
ডরুকা ভালগারিস: এই আঁচিলটি হাঁটু, হাত ও পায়ের আঙ্গুলে হয়। কিন্তু অনেক সময় শরীরের অন্যান্য স্থানে প্রসারণ করতে পারে, এমনকি মাথার তালুতেও হয়।
ডেরুকা ফ্ল্যাট: এটি ছোট, মসৃণ ও মাংসের রক্তের মতো প্রচুর সংখ্যায় হতে পারে। এই আঁচিল ঘাড়ে ও কব্জিতে বেশি হয়।
প্লান্টার আঁচিল:
প্লান্টার ওয়ার্ট শক্ত ও পায়ের পাতার নিচে হয়।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগী ব্যথা অনুভব করে।
জেনিটাল আঁচিল: যৌনাঙ্গে হয় বলে একে বলা হয় ভেরুকা অ্যাকুমিনাটা।
ডিজিটেট আঁচিল: ডিজিটেট আঁচিল আঙুরের মতো দেখতে, যা ঠোঁট ও চোখের পাতার কাছে হয়ে থাকে। আঁচিল অপসারণের জন্য বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি বাংলাদেশে রয়েছে।
ডার্মাটোলজিস্টরা সাধারণত নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলো দিয়ে চিকিৎসা করে থাকেন।
স্যালিসাইলিক এসিড : চিকিৎসকরা সাধারণত আঁচিলের সাইজ ও শেপের ওপর নির্ভর করে স্যালিসাইলিক এসিড নির্ধারণ করে থাকেন। এটি লিকুইড লোশন হিসেবে (১০-৬৫ শতাংশ) পর্যন্ত পাওয়া যায়। এ ছাড়া স্যালিসাইলিক এসিডযুক্ত আঠালো টেপ ফার্মাসিতে পাওয়া যায়।
ইলেকট্রো সার্জারি: এটি সব ধরনের ওয়ার্টের জন্য (ডিজিটেট ভালগারিশ, প্লান্টার) হচ্ছে একটি ভালো চিকিৎসা পদ্ধতি। এটির চিকিৎসা খরচ কম এবং এক সেশনেই চিকিৎসা সম্ভব।
ক্রাইওথেরাপি: এক্ষেত্রে লিকুইড নাইট্রোজন ব্যবহার করা হয়। এই চিকিৎসা পদ্ধতিটি খুব সহজ ও ব্যথামুক্ত হওয়ায় শিশু ও পেরিঅ্যানাল ওয়ার্টে বেশি জনপ্রিয়। তবে সম্পূর্ণ নিরাময়ের জন্য ৩-৪ সেশনের প্রয়োজন হতে পারে।
লেজার চিকিৎসা: আজকাল আঁচিল অপসারণে সিওটু লেজার বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এই চিকিৎসা পদ্ধতি একটু ব্যয়বহুল হলেও সম্পূর্ণ নিরাপদ। উপরের চিকিৎসা পদ্ধতিতে আঁচিল অপসারণের পরও অনেক রোগী অভিযোগ করেন আঁচিল পুনরাবৃত্তি হচ্ছে; সেক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যাদের ইমিউনিটি কম, তারাই এ সমস্যায় ভুগে থাকেন। তাই আঁচিল প্রতিরোধের জন্য ইমিউনিটি বুস্ট আপ করা জরুরি।
এই রোগ অত্যন্ত ছোঁয়াচে, যার কারণে চিকিৎসাকালে ডাক্তার ও নার্সরা আক্রান্ত হতে পারেন। তাই রোগীর পরীক্ষা ও চিকিৎসার সময় অবশ্যই গ্লাভস পরে নিতে হবে। আমরা যদি সতর্ক হই ও সুস্থ জীবনযাপন করি, তাহলেই ভাইরাল ওয়ার্ট বা আঁচিল থেকে মুক্ত হতে পারি।