‘ভালো টাকা পাওয়ার আশায় ডাকাতিতে অংশ নিই আমি

জনতার কণ্ঠ স্টাফ রিপোর্ট: ‘গাড়ি চালাইয়া তেমন টাকাপয়সা পাওয়া যায় না। একটা ডাকাতি করলে ভালো টাকা পাবা’—এক পরিবহনশ্রমিকের এমন প্রস্তাবে বাস ডাকাতিতে অংশ নিতে রাজি হন রাজা মিয়া। গত শনিবার সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে তিনি এসব কথা বলেছেন।

রাজা মিয়ার জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার পর টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শামসুল আলম তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। রাজা মিয়া বর্তমানে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে আছেন।

যেভাবে পুলিশের হাতে ধরা পড়ল তিন ডাকাত কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থেকে নারায়ণগঞ্জগামী ঈগল এক্সপ্রেসের বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বল্লা গ্রামের হারুন অর রশিদের ছেলে রাজা মিয়া টাঙ্গাইল-চন্দ্রা সড়কে ঝটিকা পরিবহনের একটি বাস চালাতেন। কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা ঈগল এক্সপ্রেসের বাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ডাকাতি ও ধর্ষণের অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার ভোরে টাঙ্গাইল শহরের দেওলা এলাকার ভাড়া বাসা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের ‘পরিকল্পনাকারীসহ’ ১০ জন গ্রেপ্তার কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা বাসে যাত্রীবেশে ওঠে একদল ডাকাত। ডাকাতির পর রাস্তার পাশে বাসটি ফেলে রেখে চলে যায় তারা। গত বুধবার টাঙ্গাইলের মধুপুরের রক্তিপাড়ায় জবানবন্দিতে রাজা বলেন, যে পরিবহনশ্রমিক তাঁকে ডাকাতিতে অংশ নেওয়ার প্রস্তাব দেন, তিনি গত মঙ্গলবার দুপুরে তাঁকে (রাজা মিয়া) প্রথমে ফোন দেন। বিকেলে আবার ফোন দিয়ে জানতে চান, বাস ডাকাতিতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে কি না। তখন রাজা মিয়া তাঁকে জানিয়ে দেন যে তিনি প্রস্তুত আছেন। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার প্রস্তাব দেওয়া ওই শ্রমিক, গ্রেপ্তার হওয়া আওয়াল ও নুরনবী, আরও একজন মিলে টাঙ্গাইল নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যান। সেখানে তাদের সঙ্গে রাজা মিয়ার দেখা হয়। তাঁরা সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া করে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত যান। এলেঙ্গা বাজার থেকে চার থেকে পাঁচটি চাকু ও কাঁচি কিনে ব্যাগের মধ্যে রাখেন তাঁরা। এর মধ্যে খবর আসে, সিরাজগঞ্জে তাদের দলের অন্যরা পৌঁছে গেছেন। রাত ১১টার দিকে তাঁরা সিরাজগঞ্জে যান।

চলন্ত বাসে ডাকাতিকালে যা ঘটেছিল কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা বাসে যাত্রীবেশে ওঠে একদল ডাকাত। ডাকাতির পর রাস্তার পাশে বাসটি ফেলে রেখে চলে যায় তারা। টাঙ্গাইলের মধুপুরের রক্তিপাড়ায়

জবানবন্দিতে রাজা মিয়া উল্লেখ করেছেন, সিরাজগঞ্জে গিয়ে আরও পাঁচজনকে দেখতে পান। গাড়িতে ওঠার আগে তাঁরা তিন ভাগে ভাগ হন। রাজা মিয়া সামনের দিকে চালকের পাশে বসেন। সিরাজগঞ্জ থেকে গাড়ি ছাড়ার পর তাঁদের অন্য সহযোগীরাও গাড়িতে ওঠেন। একপর্যায়ে তাঁরা গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নেন। রাজা মিয়া গাড়ি চালাতে থাকেন। পরে অন্য একজন এসে গাড়ির চালকের আসনে বসেন। এ সময় রাজা মিয়া পেছনের আসনে গিয়ে এক নারী যাত্রীকে ধর্ষণ করেন। একপর্যায়ে তাঁদের মধ্যে ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধের সৃষ্টি হয়। মধুপুরের রক্তিপাড়ায় গাড়ি সড়কের পাশে পড়ে যায়। তাঁরা সবাই জানালা দিয়ে বের হন। একটি বাস এলে সেই বাসে উঠে তাঁরা মধুপুর বাসস্ট্যান্ডে যান। সেখান থেকে অটোরিকশায় করে তাঁরা তাঁদের দলের একজনের নানির বাড়ি যান। সেখানে লুট করা টাকাপয়সা ও মুঠোফোন ভাগবাঁটোয়ারা করেন। রাজা মিয়া ভাগে দুটি স্মার্টফোন এবং ৩০০ টাকা পান।

রাজা মিয়া ছাড়াও গ্রেপ্তার অন্য দুই আসামি মো. আওয়াল ও নুরনবী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁরা দুজনও বাস ডাকাতির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তবে তাঁরা ধর্ষণ অংশ নেননি বলে জবানবন্দিতে বলেছেন।

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থেকে নারায়ণগঞ্জগামী ঈগল এক্সপ্রেসের বাসে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *