বর্তমান লাইফস্টাইলে নানা কারণে আমাদের মন খারাপ বা স্ট্রেস হয়। এতে মনের ওপর ভীষণ চাপ পড়ে। আর এই মন খারাপ ভাবটা দীর্ঘ সময় থাকলে সেটা বিষণ্নতায় মোড় নিতে পারে, যা একটা রোগ। তাই মানসিক চাপ কমাতে সতর্ক হতে হবে। কিভাবে কমাবেন মানসিক চাপ? এ ব্যাপারে পুষ্টিবিদ ইসরাত জাহান বলেন, একটা হেলদি ডায়েট প্ল্যান আপনার স্ট্রেস বা মানসিক চাপ বেশ খানিকটা কমাতে পারে। এমনকি আপনার মন ভালোও করতে পারে।
কেমন হবে আপনার মন ভালো করা ডায়েট প্ল্যান? চলুন জেনে নিই –
ইসরাত বলেন, ‘আমাদের প্রতিদিনের জীবনে ঘরে- বাইরে নানা ঘটনায় আমাদের মন খারাপ বা স্ট্রেস হয়ে থাকে। কিন্তু এই মন খারাপ বা স্ট্রেস হলে আমরা সাধারণত সেটাকে খুব একটা গুরুত্ব দেই না। অথচ মেন্টাল স্ট্রেসটাকে বর্তমান যুগে হালকা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। কারণ দীর্ঘদিন এটা বয়ে বেড়ালে আপনি বিষণ্নতা রোগে আক্রান্ত হতে পারেন, যা আপনার স্বাভাবিক জীবনে বিঘ্ন ঘটাবে। তাই মন খারাপ পুষে রাখবেন না। বরং মন খারাপ হলে সেটা নিরাময়ের চেষ্টা করতে হবে। এমন কিছু করতে হবে যাতে আপনার মন কিছুটা অন্তত ভালো হয়।’
তিনি বলেন, ‘আপনি আপনার খুব কাছের কোনো বন্ধুর সঙ্গে গল্প করতে পারেন। মন খারাপের কারণটা তার সঙ্গে শেয়ার করতে পারেন। এমনকি আপনি আপনার পছন্দের খাবারও খেতে পারেন। আমাদের মন ভালো রাখতে পুষ্টিকর খাবারও সহায়ক। কারণ অপুষ্টির সঙ্গেও মন খারাপের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে।’
মন ভালো রাখতে প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনার কথা বলেছেন এই পুষ্টিবিদ। সেগুলো নিম্নরুপ-
* প্রথমেই জাঙ্কফুড আপনার খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিন। কারণ এ ধরনের খাবার সাময়িকভাবে আপনাকে তৃপ্তি দিলেও এসব মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। পরবর্তীতে এতে নানা রকম রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বরং যেসব খাদ্যে পর্যাপ্ত ভিটামিন, মিনারেল, ওমেগা- ৩- ফ্যাটি অ্যাসিডের মতো উপাদান রয়েছে, সেগুলো আপনার ডায়েটে যোগ করুন। স্বাস্থ্য রক্ষায় এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
* প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় মৌসুমি ফল রাখুন। ফল কেটে খেতে ভালো না লাগলে জুস করে খেতে পারেন। ডায়েটে রাখুন সতেজ ও রঙিন শাকসবজি। রঙ মানুষের মন ভালো করে। অতিরিক্ত শর্করা এড়িয়ে এই জাতীয় খাবার আপনাকে ফিটও রাখবে।
* কার্বহাইড্রেট কমাতে হবে। কারণ বেশি কার্ব ওজন বাড়ায়। অতিরিক্ত ওজনও মন খারাপের একটা কারণ। তবে কার্ব একেবারে বাদ দেওয়ার দরকার নেই। পরিমাণ কমিয়ে দিতে পারেন। তবে খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত প্রোটিন রাখতে হবে। যেমন- মাছ, মাংস, দুধ, ডিম। দুধের তৈরি খাবারও রাখতে পারেন। কারণ এই ধরনের খাবার মন ভালো রাখতে সাহায্য করে।
* আমাদের মস্তিষ্ক সক্রিয় রাখতে ওমেগা- ৩ ও ওমেগা- ৬ ফ্যাটি অ্যাসিড প্রয়োজন। তাই ডায়েটে পর্যাপ্ত পরিমাণে আখরোট, সামদ্রিক মাছ, ফিশ লিভার, অয়েল থাকলে তা মস্তিষ্কে ফ্যাটের সরবরাহ বাড়ায়, যা মন ভালো রাখে।
* নানা রকমের বাদাম মানুষের অ্যাংজাইটি কমিয়ে মন ভালো করে। তাই ডায়েটে বাদাম রাখুন।
* মন খারাপ লাগলে ডার্ক চকলেট খেতে পারেন। ডার্ক চকলেট শরীরে ‘গুড ফিল’ হরমোন বাড়াতে সাহায্য করে। ভিটামিন ডিও এই ধরনের হরমোন তৈরিতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদন ১০/১৫ মিনিট রোদে হাঁটাহাঁটি করতে পারেন।
* শরীরে জিংকের ঘাটতি দেখা দিলেও মুড অফ থাকে। মাছ, মুরগি, ডিম খাদ্য তালিকায় রাখুন। এতে পর্যাপ্ত জিংক থাকে, যা আপনার বিষণ্নতা দূর করতে সাহায্য করবে।
* অ্যালকোহল, ড্রাগস, অতিরিক্ত চা- কফি ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। তাই হেলদি লাইফস্টাইলে এগুলো এড়িয়ে চলুন।