একটি-দুইটি বছর নয়, পুরোপুরি ১৮ বছর ধরে বুলেট আটকে ছিল মাথায়। বেঙ্গালুরুর এক চিকিৎসকের চেষ্টায় সম্প্রতি সেই বুলেট অপারেশনের মাধ্যমে বের করা হয়েছে। এই বুলেটটির আকার ছিল তিন সেন্টিমিটারের মতো। এক জটিল অস্ত্রোপচার করে এটা বের করা সম্ভব হয়েছে।
ইয়েমেনের করিম নামের যুবক তিনি, তার বয়স ২৯ বছর। কানেও শুনতে পান না এই যুবক। ইয়েমেনের একটি গ্রামে বসবাস করে সে, ছয় ভাই, তিন বোনের সাথে তার বেড়ে ওঠা। মা- বাবা দুজনেই কৃষকের কাজ করেন। বর্তমানে যুবকটি দুই সন্তানের জনক। লেখাপড়া করেছেন ইংরেজি ও ফ্রেঞ্চ ভাষার ওপর। সম্প্রতি ভারতের বেঙ্গালুরুর আস্টার হাসপাতালে তার চিকিৎসা করানো হয়। জটিল একটি অপারেশনের মাধ্যমে বুলেটটি বের করা হয়। পাশাপাশি কানে অল্প অল্প শুনতে পাচ্ছেন করিম।
অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসকরা জানান, বুলেটটি মস্তিষ্কের টেম্পোরাল লোবের মধ্যে ঢুকে গিয়েছিল। আর এর ফলেই প্রায় সময়ই তীব্র মাথা যন্ত্রনা করত করিমের। এর পাশাপাশি কান থেকেও এক ধরনের তরল ক্ষরণ বের হতো। জটিল এই সমস্যার চিকিৎসা করাতেই ভারতে আসেন যুবকটি।
সবেমাত্র ১০ বছর বয়সের একটি ঘটনা সম্পূর্ণ জীবন পাল্টে দেয় করিমের। করিম বলেন, বাড়ির জন্য দোকান থেকে মালপত্র কিনে ফিরছিলেন তিনি। সেই সময় দুই গ্রুপের গোলাগুলির মাঝখানে পড়েন তিনি। তখন দুপুরের সময়। তৎক্ষণাত একটি গুলি ছিটকে এসে করিমের মাথায় লাগে। সাথে সাথেই মাথা থেকে ফিনকি দিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে যায়। পাশের হাসপাতালে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা পেয়েছিল যুবকটি। কিন্তু বুলেটটা মাথার ভেতরেই থেকে গিয়েছিল। সেই ঘটনায় প্রাণে বেঁচে গেলেও জীবনটা এলোমেলো হয়ে যায় করিমের। শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলে সে। প্রচণ্ড মাথাব্যথা প্রতিদিনের সঙ্গী হয়ে ওঠে তার।
চিকিৎসকদের কাছে এ ধরনের অস্ত্রোপচার মোটেই সহজ ছিল না। কেননা মস্তিষ্কের মধ্যে বুলেটের অবস্থান। আর যে স্থানে ওই বুলেটটি ছিল, এর ঠিক পাশেই রয়েছে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালনের গুরুত্বপূর্ণ শিরা-উপশিরাগুলো। যার একটারও ক্ষতি মানে মাথার গুরুতর ক্ষতি হয়ে যাওয়া। মাথার দুদিক থেকে এক্স-রে করে প্রথমে বুলেটটির অবস্থান নিশ্চিত করা হয়। এর পরই শুরু করা হয় অপারেশন। চিকিৎসকদের দক্ষ হাতের কারণেই শেষ পর্যন্ত ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠেন করিম। সম্পূর্ণ না হলেও কিছুটা শ্রবণশক্তি ফিরে পেয়েছেন করিম।