ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৫ সাপ্তাহিক জনতার কণ্ঠ
মানুষ হিসেবে আমরা প্রতিদিনই বিভিন্ন ধরণের মানুষের সাথে মিশে থাকি। কেউ হন বন্ধুসুলভ, কেউ বা মিশুক। কিন্তু কখনো কি এমন হয়েছে, কারো মিষ্টি কথায় বা হাসিতে মুগ্ধ হয়েও, ভেতরে ভেতরে একটা অস্বস্তি কাজ করেছে? মনে হয়েছে, এই হাসির পেছনে অন্য কিছু লুকিয়ে আছে? যা আমরা প্রায়ই খেয়াল করি না।
এই প্রতিবেদনে আমরা এমন কিছু লক্ষণ নিয়ে আলোচনা করব যা দেখে আপনি বুঝতে পারবেন, একজন “ভালো” মানুষ আসলে কতটা সৎ।
১. অসঙ্গতি: যাদের মধ্যে সততার অভাব থাকে, তাদের কথা ও কাজে প্রায়ই অমিল দেখা যায়। আজ যা বলেন, কাল তা বেমালুম ভুলে যেতে পারেন। একদিনে খুব আন্তরিক ব্যবহার করলেও, পরের দিন সম্পূর্ণ বিপরীত আচরণ করতে পারেন। এই ধরনের পরিবর্তন বিভ্রান্তিকর এবং প্রায়ই গভীর কোনো সমস্যার লক্ষণ। সম্ভবত তারা কিছু লুকাতে চাইছে অথবা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য পরিস্থিতিকে ব্যবহার করছে।
২. ভুল স্বীকার না করা: মানুষ মাত্রেই ভুল করে। কিন্তু যাদের মধ্যে সততা থাকে, তারা নিজেদের ভুল স্বীকার করতে দ্বিধা করেন না, বরং দায়িত্ব নেন। অন্যদিকে, যাদের সততার অভাব থাকে, তারা দোষ স্বীকার করার পরিবর্তে অন্যের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করেন অথবা অজুহাত দেখান।
৩. সহজ পথ খোঁজা: জীবনে সাফল্য পেতে হলে কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় ও ধৈর্যের প্রয়োজন। কিন্তু যাদের মধ্যে সততা কম থাকে, তারা প্রায়ই সহজ পথ খোঁজেন। তারা কোনো কাজ করতে গিয়ে ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেন, এমনকি নিজেদের মূল্যবোধের সাথেও আপস করতে পারেন।
৪. কাজের গোপনীয়তা: যাদের কিছু লুকানোর থাকে, তারাই গোপনীয়তা বজায় রাখার চেষ্টা করেন। সৎ মানুষেরা তাদের কাজ, সিদ্ধান্ত এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে স্বচ্ছ থাকেন। তারা জানেন, সততা বিশ্বাসের জন্ম দেয়। কিন্তু যাদের মধ্যে সততার অভাব থাকে, তারা প্রায়ই তাদের কাজ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি করেন, প্রশ্নের উত্তর দিতে এড়িয়ে যান বা জিজ্ঞাসিত হলে আত্মরক্ষামূলক আচরণ করেন।
৫. পরচর্চা: পরচর্চা বিশ্বাস ও সম্প্রীতি নষ্ট করে। যাদের মধ্যে সততা থাকে, তারা পরচর্চা থেকে দূরে থাকেন। তারা সরাসরি কথা বলা এবং অন্যের গোপনীয়তাকে সম্মান জানানোর গুরুত্ব বোঝেন। কিন্তু যাদের সততা কম, তারা প্রায়ই নিজেদের স্বার্থ বা বিনোদনের জন্য গুজব ছড়ান বা গোপন কথা প্রকাশ করেন।
৬. সহানুভূতিহীনতা: সততার মূলে রয়েছে সহানুভূতি। যাদের মধ্যে সততা থাকে, তারা অন্যের অনুভূতি বোঝেন এবং সম্মান করেন। তারা অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হন এবং সাহায্য করার চেষ্টা করেন। কিন্তু যাদের মধ্যে সততার অভাব থাকে, তারা নিজেদের নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকেন এবং অন্যের প্রতি তাদের কোনো সহানুভূতি থাকে না।
৭. সীমানা লঙ্ঘন: সৎ মানুষেরা অন্যের ব্যক্তিগত স্থান ও সীমানা সম্পর্কে সচেতন থাকেন। তারা অন্যের সীমানা লঙ্ঘন করেন না। কিন্তু যাদের মধ্যে সততার অভাব থাকে, তারা প্রায়ই অন্যের সীমানা অতিক্রম করেন, এমনকি ব্যক্তিগত বিষয়েও হস্তক্ষেপ করতে দ্বিধা করেন না।
৮. অতিরিক্ত আকর্ষণ: যাদের মধ্যে সততা থাকে, তাদের মধ্যে একটা স্বাভাবিক আকর্ষণ থাকে। কিন্তু যাদের সততার অভাব থাকে, তারা প্রায়ই অতিরিক্ত আকর্ষণীয় হওয়ার চেষ্টা করেন, যা আসলে তাদের আসল উদ্দেশ্য ঢাকার একটি কৌশল হতে পারে।
৯. কখনোই সন্তুষ্ট নন: যাদের মধ্যে সততা থাকে, তারা যা পান তাতেই সন্তুষ্ট থাকেন। তারা আরও ভালো কিছু করার চেষ্টা করেন, তবে যা আছে তার জন্য কৃতজ্ঞতা বোধ করেন। অন্যদিকে, যাদের মধ্যে সততার অভাব থাকে, তাদের মধ্যে সবসময় আরও বেশি কিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকে – ক্ষমতা, অর্থ, স্বীকৃতি। এমনকি এর জন্য তারা অন্যের ক্ষতি করতেও দ্বিধা করেন না।
১০. বিনয়ের অভাব: বিনয় সততার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সৎ মানুষেরা বিনয়ী হন। তারা নিজেদের ভুল স্বীকার করেন, নিজেদের শক্তি ও দুর্বলতা সম্পর্কে জানেন এবং অন্যের অবদানকে মূল্য দেন। অন্যদিকে, যাদের মধ্যে সততার অভাব থাকে, তারা অহংকারী হন এবং নিজেদেরকেই সেরা মনে করেন। তারা নিজেদের ভুল স্বীকার করতে পারেন না এবং প্রায়ই অন্যের কৃতিত্বকে ছোট করে দেখেন।
এই লক্ষণগুলো হয়তো খুব স্পষ্ট নয়, তবে এগুলোর দিকে খেয়াল রাখলে আপনি বুঝতে পারবেন, একজন “ভালো” মানুষের ভেতরের মানুষটি আসলে কেমন। মনে রাখবেন, শুধু মিষ্টি কথায় ভুলবেন না, মানুষের আচরণ ও কাজের দিকেও নজর রাখুন।