মার্কিন শুল্কের কতটা প্রভাব পড়বে ভারতের ওপর

সাপ্তাহিক জনতার কণ্ঠফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৫

আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ৫০ হাজার কোটি ডলারে নিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু নরেন্দ্র মোদির সফরের পরও যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না ভারত, সে ডোনাল্ড ট্রাম্প যতই মোদিকে বন্ধু হিসেবে আখ্যা দেন না কেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন, প্রতিদ্বন্দ্বীদের তো বটেই, বাণিজ্য–সহযোগীদের পণ্যেও পাল্টা আমদানি শুল্ক আরোপ করা হবে। যদিও কোন কোন ভারতীয় পণ্যে এসব শুল্ক আরোপ করা হবে, তা এখনই জানা যায়নি; আগামী এপ্রিল মাসের পর তা স্পষ্ট হবে। ভারত পাল্টা শুল্ক আরোপ করে কি না, তা বোঝা যাবে এরপর। তাতে বিষয়টি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তার হিসাব করছে ভারতের শিল্পমহল। যদিও অনেকে মনে করছেন, মার্কিন শুল্কের প্রভাব ভারতের ওপর তেমন একটা পড়বে না।

ভারতের শিল্পমহলের ব্যাখ্যা, বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া পণ্যে শুল্ক আরোপ করা হলে দাম বাড়বে। স্বাভাবিকভাবেই মার্কিন ক্রেতাদেরই তার জের টানতে হবে। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতির গতি বাড়বে; হোঁচট খাবে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। এর বিরূপ প্রভাব পড়বে সারা বিশ্বের আর্থিক কর্মকাণ্ডে, যার থেকে ছাড় পাবে না ভারত। অন্য দিকে যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক বাড়ালে চীনের সস্তা পণ্য সেখানে গিয়ে ভারতসহ অন্যান্য দেশে যেতে পারে; এটা ভারতের ছোট কোম্পানিগুলোর জন্য উদ্বেগের বলে মনে করা হচ্ছে।

এদিকে ভারতের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য উপদেষ্টা সংস্থা জিটিআরআইর দাবি, দুই দেশের রপ্তানি পণ্যের প্রকৃতি আলাদা। তাই যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের বড় কোনো প্রভাব ভারতের পণ্যে পড়বে না। সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তবের ব্যাখ্যা, পোশাক, জুতাসহ ভারতের শ্রমনিবিড় শিল্পপণ্যে যুক্তরাষ্ট্র এখনই ১৫ থেকে ৩৫ শুল্ক আরোপ করছে। আবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা বড় অংশের পণ্যে ভারত ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে।

তারপরও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার এটা উপযুক্ত সময় নয় বলেই মনে করছে জিটিআরআই। তারা বলছে, এ বিষয়ে একতরফাভাবে এগোতে চাইছে ট্রাম্প প্রশাসন। রপ্তানি সংস্থাগুলোর সংগঠন ফিয়োর বক্তব্য, দেশীয় শিল্পের স্বার্থে সতর্ক অবস্থান নেওয়া উচিত ভারত সরকারের।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক থেকে ভারতের পণ্যকে কতটা বাঁচানো যায়, সেই বিষয়টি মাথায় রেখে ব্যবস্থা নিতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে। বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা ইতিবাচক বিষয় হলেও ট্রাম্পের শুল্ক হুমকিতে ভারতের চিন্তা বাড়ছে। আমদানি শুল্কের বাইরে গিয়েও ভ্যাট, অশুল্ক বাধা ও বাণিজ্য বিধিনিষেধের মতো বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে পারেন ট্রাম্প। যদিও আমদানি করা পণ্যের ওপর ভারতের পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়মনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, তারপরও উচ্চ শুল্ক আরোপের জন্য এই জিএসটিকে ব্যবহার করতে পারেন ট্রাম্প।

বাণিজ্য চুক্তি

চলতি বছরের শরৎকালের আগে বাণিজ্য চুক্তির প্রথম ধাপের আলোচনা শুরু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মোদি ও ট্রাম্প। ওই আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে পণ্য ও সেবার সরবরাহব্যবস্থা সংহত করা, শুল্ক হ্রাস ও বাজার–সুবিধার মতো বিষয়গুলো।

তবে দুই দেশের মধ্যে ঠিক কী ধরনের বাণিজ্য চুক্তি হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। জিটিআরআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘এই বাণিজ্য চুক্তিটি কী? এটি কি একটি পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য চুক্তি হবে, নাকি পারস্পরিক শুল্ক আরোপের কোনো চুক্তি হবে?’

এর জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে করেন অভিজিৎ দাস। তিনি বলেন, ‘এটা যে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হতে হবে, তা নয়; সেটা হলে আরও স্পষ্টভাবে ঘোষণা দেওয়া হতো। এই চুক্তিটি অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট সুনির্দিষ্ট কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক হ্রাসসংক্রান্ত হতে পারে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *