মৃত্যুর ঠিক আগমুহূর্তে কী ঘটে, জানালেন বিজ্ঞানীরা

সাপ্তাহিক জনতার কণ্ঠ

১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

মানুষ যখন মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়, তখন তার মস্তিষ্কে কী ঘটে—এই রহস্য শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিজ্ঞানীদের কৌতূহলের বিষয় হয়ে আছে। যদিও এখনো এই রহস্য পুরোপুরি উন্মোচিত হয়নি, তবে সম্প্রতি এক গবেষণা নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছে, যা মৃত্যুর আগমুহূর্তের মস্তিষ্কের কার্যকলাপ বুঝতে সহায়ক হতে পারে।

গবেষণার নতুন তথ্য

‘এনহ্যান্সড ইন্টারপ্লে অব নিউরোনাল কোহেরেন্স অ্যান্ড কাপলিং ইন দ্য ডাইং হিউম্যান ব্রেইন’ শিরোনামের গবেষণাটি সম্প্রতি ফ্রন্টিয়ার্স ইন এজিং নিউরোসায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এতে মৃত্যুর ঠিক আগে ও পরে মস্তিষ্কের কার্যকলাপ বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

গবেষকদের মতে, মৃত্যুর মুহূর্তে মস্তিষ্ক দ্রুত জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোকে স্মরণ করতে পারে। অনেক মানুষ মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ফিরে এসে জানিয়েছেন, তাদের জীবনের বিশেষ স্মৃতিচিত্রগুলো মুহূর্তের মধ্যে চোখের সামনে একে একে ভেসে উঠেছিল।

মস্তিষ্কতরঙ্গের পরিবর্তন

গবেষণার অন্যতম প্রধান গবেষক ড. আজমল জেমার, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের কেনটাকির ইউনিভার্সিটি অব লুইসভিলের সঙ্গে যুক্ত, জানান, ‘মৃত্যুর ঠিক আগে মস্তিষ্ক এমন এক ধরনের তরঙ্গ সৃষ্টি করে, যা স্মৃতি পুনরুদ্ধারের সঙ্গে সম্পর্কিত। এটি প্রায় নিশ্চিত মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে আসা মানুষের অভিজ্ঞতার মতো হতে পারে।’

এই গবেষণায় বিশেষভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে একজন ৮৭ বছর বয়সী মৃগী রোগীর মৃত্যু। কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কারণে তার মৃত্যু ঘটে এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মস্তিষ্কতরঙ্গ রেকর্ড করা হয়। গবেষকরা দেখতে পান, হৃদস্পন্দন বন্ধ হওয়ার আগের ৩০ সেকেন্ড এবং পরবর্তী ৩০ সেকেন্ডে মস্তিষ্কে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে।

বিশেষত গামা তরঙ্গের কার্যকলাপে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা যায়। গামা তরঙ্গ উচ্চ-স্তরের মস্তিষ্কীয় কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত এবং বিশেষত স্মৃতি পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি জীবনে ঘটে যাওয়া খণ্ডিত এবং একান্ত ঘটনাগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠে। ডেল্টা ও থিটা তরঙ্গ সাধারণত গভীর ঘুমের সময় সক্রিয় থাকে। অন্যদিকে, মস্তিষ্কের সচেতন চিন্তা এবং মনোযোগের সঙ্গে যুক্ত আলফা ও বিটা তরঙ্গ।

এই গবেষণার ফলাফল থেকে বোঝা যায়, মৃত্যুর ঠিক আগের মুহূর্তে আমাদের মস্তিষ্ক অতীতের গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতিগুলো রিক্যাপ বা স্মরণ করতে পারে, যা অনেক সময় মৃত্যুর আগের মুহূর্তের অভিজ্ঞতা হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়।

জীবন-মৃত্যুর সীমারেখার নতুন ব্যাখ্যা

এই গবেষণা বিজ্ঞানীদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। গবেষকরা মনে করছেন, মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নিয়ে আমাদের প্রচলিত ধারণা নতুনভাবে ভাবতে হবে।

ড. জেমার বলেন, ‘এই গবেষণা আমাদের প্রচলিত বিশ্বাসকে চ্যালেঞ্জ জানায় যে, কখন জীবন শেষ হয়। এটি আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তোলে, যেমন—কখন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করা সবচেয়ে উপযুক্ত হবে?’

আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে গবেষণাটি

যদিও গবেষণার ফলাফল প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ২০২২ সালে, সম্প্রতি এটি আবার বিজ্ঞানী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। গবেষকরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে এ নিয়ে আরও গবেষণা হবে, যা মৃত্যুর রহস্য আরও গভীরভাবে উন্মোচনে সহায়ক হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *