মেয়ের গায়ে হাত দিলে ভদ্র বাপও জংলি হয়া যায়…

শিশুসন্তানের সঙ্গে মা–বাবার সম্পর্ক নিয়ে ঢাকাই সিনেমায় সাম্প্রতিক সময়ে খুব একটা কাজ হয়নি। হলে মা-বাবার সঙ্গে সিনেমা দেখতে আসা সন্তানদের কথা বেশির ভাগ নির্মাতাই ভাবেননি। এ চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছেন এম রহিম। এবার ঈদুল ফিতরে মুক্তি পেয়েছে তাঁর পরিচালিত সিনেমা ‘জংলি’।

একনজরে
সিনেমা: ‘জংলি’
ধরন: ড্রামা
পরিচালক: এম রাহিম
গল্প: আজাদ খান
চিত্রনাট্য: মেহেদী হাসান, সুকৃতি সাহা
অভিনয়: সিয়াম আহমেদ, নৈঋতা হাসিন রৌদ্রময়ী, শবনম বুবলী, প্রার্থনা ফারদিন দীঘি, রাশেদ মামুন অপু
সংগীত পরিচালনা: প্রিন্স মাহমুদ
রানটাইম: ২ ঘণ্টা ৩১ মিনিট

জনি ভার্সিটিতে পড়ে। ভার্সিটিতে মারামারি করার জন্য তার দুর্নাম আছে। বাবা একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। সেই বিবেচনায় তাকে ছাড় দেওয়া হয় বারবার। তবে জনির এই বেপরোয়া আচরণের পেছনে রয়েছে তার বাবার সঙ্গে দূরত্ব। দুর্ঘটনায় মায়ের মৃত্যুর জন্য তাকেই দায়ী করে বাবা। তারই ভার্সিটিতে পড়া নূপুরকে ভালোবাসে জনি। তাকে আঁকড়ে ধরে নতুন করে বাঁচতে চায়। কিন্তু বিধি বাম! অপ্রত্যাশিতভাবে একদিন অন্যদিকে মোড় নেয় সে সম্পর্ক। সবকিছু ছেড়ে তাই সে বের হয়ে যায়, হয়ে ওঠে সত্যিকার অর্থেই ‘জংলি’, কোনো কিছুই যাকে আর ছুঁতে পারে না। সেই জংলির জীবনে উড়ে এসে জুড়ে বসে এক ছোট্ট মেয়ে, পাখি। কিন্তু পাখিকে তার জীবনে চায় না জংলি। শেষ পর্যন্ত পাখি কি পারে জংলির মন বদলাতে? নাকি জংলি জংলিই থেকে যায়?

‘জংলি’তে বুবলী। ভিডিও থেকে
‘জংলি’তে বুবলী। ভিডিও থেকে

সিয়ামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করে গেছে ছোট্ট নৈঋতা। পাখি নামের ছোট্ট মেয়ের চরিত্রে সে ছিল সাবলীল। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে খাবার কুড়িয়ে খাওয়া, জংলির ঘরে গিয়ে বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়ে ফিরে আসা—এমন কিছু দৃশ্য চোখে লেগে থাকে। শেষ দিকে এই পাখির জন্যই চোখের পানি আটকে রাখতে পারেন না দর্শক।

আরও পড়ুন
এ সিনেমায় রাশেদ মামুন অপুর কথা না বললেই নয়। ভাইরাল সাংবাদিক চরিত্রটি ছোট হলেও এতে ছাপ রাখার মতো অভিনয় করেছেন তিনি। তবে হঠাৎ কোন শত্রুতা বশে আইনজীবী হিসেবে শহীদুজ্জামান সেলিম অভিনীত চরিত্রটির আবির্ভাব হলো, সেটা পরিষ্কার নয় সিনেমায়।

‘জংলি’র প্রি-টিজার, টিজার মুক্তি পাওয়ার পরই সিয়ামের লুক ও মারামারির দৃশ্য নিয়ে চলছিল নানা আলোচনা-সমালোচনা। সে আলোচনায় নতুন মাত্রা দিয়েছিল সিয়ামের এই সংলাপ, ‘আমি পুষ্পা, কবির সিং…উঁহু…জংলি!’ দেশীয় জংলি কি পুষ্পা কিংবা কবির সিংয়ের মতো চরিত্রের জনপ্রিয়তাকে ছুঁতে পারবে—এটা দেখার জন্যই সিয়াম–ভক্তরা অপেক্ষা করে ছিলেন। তবে যাঁরা টিজার দেখে অ্যাকশনধর্মী সিনেমাটি দেখতে গেছেন, তাঁদের হয়তো হতাশ করেছে ‘জংলি’। কারণ, টিজারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এটা অ্যাকশন সিনেমা নয় মোটেও; বরং বাবা ও মেয়ের সম্পর্কের গল্প নিয়ে ড্রামা ঘরানার সিনেমা। শুরু আর শেষের দিকে দুটো অ্যাকশন দৃশ্য আছে কেবল।

‘জংলি’র গল্প খারাপ ছিল না, কিন্তু চিত্রনাট্যের খামতি আর পরিচালনার দুর্বলতার জন্য সেটা পর্দায় পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। তারপরও পর্দায় ব্যাড প্যারেন্টিং, শিশুদের জন্য গুড টাচ, ব্যাড ট্যাচের মতো বিষয়গুলো দেখানোর জন্য ‘জংলি’ টিমের বিশেষ ধন্যবাদ পাওনা। এখানেও একটা কিন্তু আছে। ব্যাড প্যারেন্টিংয়ের বিষয়গুলো সিনেমার শেষের দিকে অনেকটাই লেকচারের মতো করে এসেছে, এটা আরও পরিণতভাবে সামলাতে পারতেন নির্মাতা। ‘জংলি’র আবহ সংগীতের কাজও গড়পড়তা। তবে প্রিন্স মাহমুদের সুরে সিনেমার গানগুলো পর্দায় দেখতে মন্দ লাগেনি। আরও ভালো হতে পারত সেট আর প্রোডাকশন ডিজাইন।

‘জংলি’র পোস্টারে সিয়াম আহমেদ। অভিনেতার ফেসবুক থেকে
‘জংলি’র পোস্টারে সিয়াম আহমেদ। অভিনেতার ফেসবুক থেকে

হলে সিনেমা দেখার সময় অবশ্য অনেক দর্শকই মজেছিলেন জংলি আর পাখির রসায়নে। ‘মেয়ের গায়ে হাত দিলে ভদ্র বাপও জংলি হয়া যায়, আর ওর বাপ তো এমনিতেও জংলি’—সিয়ামের কণ্ঠে এমন সংলাপ শুনে নড়েচড়ে বসেছেন সবাই। বাবা-মেয়ের আবেগ তাঁদের ছুঁয়ে গেছে, এটাই হয়তো নির্মাতার বড় সার্থকতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *