মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উন্নয়নের রূপকার বাংলাদেশ নারী আন্দোলনের পথিকৃৎ মিজ্ ফরিদা আখতার

আউলিয়া বেগম আলো : মিজ্ ফরিদা আখতার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়-এর উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি ৮ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) রাতে বঙ্গভবনের দরবার হলে শপথ নেন। শপথ বাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তিনি একজন লেখক, গবেষক ও আন্দোলনকর্মী। তিনি বিশিষ্ট লেখক, কবি ও সাংবাদিক ফরহাদ মজহারের স্ত্রী।
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মানুষের অবস্থা জানা এবং পরিবর্তনের জন্য নীতিনির্ধারণী গবেষণা ও লেখালেখিই তার কাজের প্রধান দিক। এছাড়া নারী উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, কৃষি, মৎস্য সম্পদ, তাঁত শিল্প, গার্মেন্টস শিল্প ও শ্রমিক, জনসংখ্যা এবং উন্নয়নমূলক বিষয়ে নিবিড়ভাবে দীর্ঘ প্রায় তিন দশক ধরে কাজ করছেন।
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের নামে পরিচালিত কার্যক্রমের মারাত্মক কুফল ও নারী স্বাস্থ্যের উপর-এর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে লেখালেখি এবং প্রতিকার আন্দোলের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে সুপরিচিত ফরিদা আখতার। তিনি বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত।
তিনি উবিনীগ (উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারণী গবেষণা)-এর নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত। এছাড়া জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের নামে পরিচালিত কার্যক্রমের কুফল ও নারী স্বাস্থ্যের উপর এর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে লেখালেখি করে থাকেন। তার প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে নারী ও গাছ, কৈজুরী গ্রামের নারী ও গাছের কথা।
ফরিদা আখতারের জন্ম বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ উপজেলার হারলা গ্রামে। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন।
পশু খাদ্যের দাম কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, খামারিদের খরচ কমাতে পশু খাদ্যের দাম কমানো হবে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ বিলে কৃষি খাতের মতো ভর্তুকির বিষয়েও আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলবো। এই খাতের প্রান্তি চাষি ও উদ্যোক্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হবে। উন্নত জাত লালন-পালনকে সুযোগ করে দেওয়ার পাশাপাশি দেশিয় জাতের পশু টিকিয়ে রাখতে করনীয় কি তাও নির্ধারণ করা হবে। এটা শুধু এককভাবে আমাদের মন্ত্রণালয়ের উপর নির্ভর করবে না। এরসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জড়িত। এই ভিত্তিতে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে আমরা পদক্ষেপ নেব।
ভ্যাটেরিনারি হাসপাতালে মানুষ গবাদিপশুর চিকিৎসা সঠিকভাবে পায় না এবং প্রাণিসম্পদ খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে ফরিদা আখতার বলেন, জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হচ্ছে। এই সরকারের সময় কেউ দুর্নীতি করলে পার পাবে না। তাই মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকতে পারবে না। কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিন্ডিকেট ও কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের কারণে পশু খাদ্য, মাংস-ডিমের দাম বেড়ে যায় জানিয়ে ফরিদা আখতার বলেন, এই সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। সেই সাথে বাজারে পণ্যের সরবরাহ বাড়ালে দাম কমে আসবে। এজন্য সরবরাহ বাড়াতে হবে। পশু খাদ্যের সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হবে। এ ছাড়া পোলট্রি খাতে কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের কাছে প্রান্তিক খামারিরা জিম্মি হয়ে আছে। মুরগি উৎপাদন করে বাজারে নায্যমূল্য পাওয়া যাচ্ছে না। লাভ হচ্ছে সিন্ডিকেটকারীদের। আর নিঃস্ব হচ্ছে সাধারণ খামারিরা। পাশাপাশি কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের নামে খামারিদের সঙ্গে প্রতারণা হচ্ছে। শিগগিরই এসব অনিয়মের লাগাম টানা হবে। ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা বিবেচনায় খাদ্যপণ্য ভেজালমুক্ত করা, ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা এবং খামারিদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দেন উপদেষ্টা।
সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা মিজ্? ফরিদা আখতার বলেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের সমস্যা ও সম্ভাবনার খবর গণমাধ্যমে বেশি বেশি উঠে আসা দরকার। সমস্যাগুলো উঠে এলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রাণিসম্পদ খাতকে গণমাধ্যমে ভালোভাবে তুলে ধরলে দেশ ও জাতি উপকৃত হবে।
উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ আহরণে যুক্তরাষ্ট্রের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ।
উপদেষ্টা ফরিদা আখতার ১১ আগস্ট সচিবালয়ে তার প্রথম কর্মদিবসে বিদেশে ইলিশ রপ্তানি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “দেশের মানুষ ইলিশ খেতে পারবে না, বিদেশে রপ্তানি হবে, এটা হতে পারে না। আগে দেশকে গুরুত্ব দিতে হবে। তারপর রপ্তানির চিন্তা।”
মন্ত্রণালয়ের নাম ‘ইলিশ মন্ত্রণালয়’ হলেও তিনি আপত্তি করতেন না উল্লেখ করে সেদিন উপদেষ্টা আরও বলেন, ” ইলিশ একটা বিশেষ মাছ। যেটা একমাত্র বাংলাদেশেই হয়। দেশের মানুষকে না খাইয়ে ইলিশ বাইরে পাঠানো আমি কোনোমতেই অনুমোদন করি না।”
অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইলিশ মাছ রপ্তানির অনুমোদন করেছে। মৎস্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব হচ্ছে রপ্তানির সময় গুণগতমান দেখা। দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে ইলিশ মাছ রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তার প্রেক্ষিতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার ২১ সেপ্টেম্বর একথা বলেন।
দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে বিভিন্ন রপ্তানিকারকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নির্ধারিত শর্তাবলীপূরণ সাপেক্ষে তিন হাজার টন ইলিশ মাছ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হলো।
মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে (জুলাই ২০২৩-জুন ২০২৪) বাংলাদেশ ভারতে ৬৬৪ দশমিক ৮৬ টন ইলিশ রপ্তানি করেছে।
রপ্তানির কারণে বাংলাদেশের বাজারে প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে ফরিদা আখতার বলেন, ”এমনিতে এবার ইলিশ মাছের সরবরাহ কম। মাছ ধরাও কম হয়েছে। আবার যা ধরা হয়েছে তা নানা পথে চলে যাচ্ছে। যার ফলে, দেশের বাজারে এখন কেমন প্রভাব পড়ে তা দেখার বিষয়।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *