বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্টার্টআপ (উদ্ভাবনী ব্যবসায়িক উদ্যোগ) গড়ে উঠেছে। নতুন নতুন আইডিয়া আর প্রযুক্তির সমন্বয়ে তৈরি হচ্ছে বড় বড় প্রতিষ্ঠান। নির্দিষ্ট কিছু শহর এখন স্টার্টআপের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এসব শহর থেকেই বিশ্বের সেরা সব স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। সম্প্রতি স্টার্টআপব্লিংক ২০২৫ সালে বিশ্বের সেরা স্টার্টআপ শহরের একটি তালিকা করেছে। জেনে নেওয়া যাক তালিকার শীর্ষে থাকা ১০টি শহর সম্পর্কে।
সান ফ্রান্সিসকো, যুক্তরাষ্ট্র

স্টার্টআপ শহরের শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত সান ফ্রান্সিসকো শহর। এখানকার উদ্যোক্তারা নতুন নতুন ব্যবসায়িক উদ্যোগ নিয়ে সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেন। এ শহরে বিশ্বের সেরা ৭ হাজার ৮৪১টি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।
উবার, ওপেনএআইসহ বেশ কিছু স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান এ শহরেই গড়ে উঠেছে, যা পরে বিশ্বের নামীদামি ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও এই প্রতিষ্ঠানগুলো সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করে যাচ্ছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিচ্ছে অনেককে।
প্রতিষ্ঠিত উল্লেখযোগ্য স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান ছাড়া নতুন যেসব স্টার্টআপ কোম্পানি রয়েছে, এর মধ্যে প্রথম সারিতে আছে ব্রেইভ, মিডিয়াম, হেলথটাইম মিডিয়া, নার্ভার ইত্যাদি।
নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র

স্টার্টআপ শহরের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক নগর। শহরটিতে ৯ হাজার ২৮৪টি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রযুক্তি, অর্থ, গণমাধ্যম, ফ্যাশন ও স্বাস্থ্যসেবার মতো বিভিন্ন খাতে উদ্ভাবনী স্টার্টআপের জন্য বিখ্যাত। যুক্তরাষ্ট্রের মোট স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানের ১৩ শতাংশই এ শহরে অবস্থিত।
নিউইয়র্কের শীর্ষ স্টার্টআপ এক্স.এআই। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রে ১১তম। বৈশ্বিক অবস্থান ৩৩তম। এ ছাড়া আছে ক্লাউড মনিটরিং ও সিকিউরিটি–বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ডেটালগ এবং ফিটনেস ও হেলথটেক–বিষয়ক ফিলোটন ইত্যাদি।
লন্ডন, যুক্তরাজ্য

যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহর স্টার্টআপ শহরের তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে। শহরটিতে ৮ হাজার ৬৫৪টি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। লন্ডনের স্টার্টআপগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ডিএজেডএন, অক্টোপাস এনার্জি ও ট্রেনলাইন ইন লন্ডন।
ডিএজেডএন খেলাধুলা বিষয়ে সরাসরি অনুষ্ঠান সম্প্রচারে সহযোগিতা করে। এ ছাড়া চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন ইভেন্ট আয়োজন করে। ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম শুরু হয়।
ট্রেনলাইন হলো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় স্বাধীন ডিজিটাল রেল প্ল্যাটফর্ম। এখান থেকে বিশ্বের ২৪টি দেশের রেলের টিকিট কেনা যায়। রেল ভ্রমণের জন্য এটি একটি একক প্ল্যাটফর্ম।
লস অ্যাঞ্জেলস, যুক্তরাষ্ট্র

স্টার্টআপ শহরের তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলস। শহরটিতে ৩ হাজার ৬২টি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
বিনিয়োগ, কর্মী ও ওয়েবসাইট ব্যবহারীদের দিক থেকে লস অ্যাঞ্জেলসের শীর্ষ স্টার্টআপের তালিকা করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মেট্রোপলিস, থ্রাইভ মার্কেট ও হেইজিন।
মেট্রোপলিস শহরভিত্তিক পরিবহন প্ল্যাটফর্ম। প্রতিষ্ঠানটি পার্কিং লট পরিচালনা সহজ করে। এ ছাড়া যানবাহনের প্রবেশ ও পেমেন্টের জন্য সহজ ও সুবিধাজনক সমাধান দিয়ে থাকে। এ ছাড়া থ্রাইভ মার্কেট থেকে অনলাইনে সহজে ও সুলভ মূল্যে পণ্য কেনা যায়।
বেইজিং, চীন

স্টার্টআপ শহরের তালিকায় পঞ্চম অবস্থানে চীনের রাজধানী বেইজিং। বিশ্বের অন্যতম অর্থনীতির দেশ চীন প্রযুক্তি খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে চলেছে। বেইজিংয়ে ২ হাজার ৩১৮টি স্টার্টআপ কোম্পানি রয়েছে।
বেইজিংয়ের সেরা স্টার্টআপগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো উইবো। এটি চীনের একটি জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম। উইবো চায়নিজ টুইটার নামেও পরিচিত। এ ছাড়া জনপ্রিয় ভিডিও প্ল্যাটফর্ম টিকটকের মূল কার্যালয়ও বেইজিংয়ে অবস্থিত।
বোস্টন, যুক্তরাষ্ট্র

সেরা স্টার্টআপ শহরের তালিকায় ষষ্ঠ অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্রর বোস্টন। শহরটিতে ৩ হাজার ৩২৮টি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের মোট স্টার্টআপের ৫ শতাংশ।
বোস্টনের উল্লেখযোগ্য স্টার্টআপের মধ্যে রয়েছে টেমু, মেনডিক্স ও প্যানারোমা এডুকেশন। টেমু একটি অনলাইন মার্কেটপ্লেস।
সাংহাই, চীন

সেরা স্টার্টআপ শহরের তালিকায় সপ্তম অবস্থানে চীনের সাংহাই। এখানে ১ হাজার ৮৭৬টি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যা চীনের মোট স্টার্টআপের ১৯ শতাংশ। পরিবেশগত দিক থেকে চীনের দ্বিতীয় স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম সাংহাইয়ে।
সাংহাইয়ের উল্লেখযোগ্য স্টার্টআপ হলো মুডি, দ্য পেপার ও ঝি অটো। মুদি ডেটা, বিশ্লেষণ ও বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক টুল সরবরাহ করে। প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে দক্ষ বিশ্লেষক, সমৃদ্ধ তথ্যভান্ডার ও শক্তিশালী টুলসেট।
প্যারিস, ফ্রান্স

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস সেরা স্টার্টআপ শহরের তালিকায় অষ্টম অবস্থানে রয়েছে। শহরটিতে ৩ হাজার ২৩১টি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যা ফ্রান্সের মোট স্টার্টআপের ৬০ শতাংশ।
প্যারিসের উল্লেখযোগ্য স্টার্টআপ হলো ক্রিটিও, ব্যাক মার্কেট ও কুয়ান্ত। ক্রিটিও অনলাইনে বিজ্ঞাপনসংক্রান্ত কাজ করে। ব্যাক মার্কেট পুরোনো ইলেকট্রনিক পণ্যের ওয়েবসাইট। ব্যবহারকারীরা হ্রাসকৃত মূল্যে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট ও হেডফোন কিনতে পারেন।
তেল আবিব, ইসরায়েল

ইসরায়েলের তেল আবিব স্টার্টআপ শহরের তালিকায় নবম অবস্থানে রয়েছে। এখানে ২ হাজার ৩৯১টি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যা ইসরায়েলি স্টার্টআপের ৭৪ শতাংশ।
ইসরায়েলি স্টার্টআপের মধ্যে রয়েছে সার্ভিস নাউ, গার্ডিও ও কানেক্টটিম। সার্ভিস নাউ ক্লাউডভিত্তিক বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কাজ করে। গার্ডিও সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে।
বেঙ্গালুরু, ভারত
ভারতের বেঙ্গালুরু শহর স্টার্টআপ শহরের তালিকায় দশম স্থানে রয়েছে। শহরটিতে ২ হাজার ৪৬৭টি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ সংখ্যা ভারতের মোট স্টার্টআপের ২৩ শতাংশ।
বেঙ্গালুরুতে বাইজুস, প্রাকতোর মতো স্টার্টআপ রয়েছে। বাইজুস শিক্ষাবিষয়ক স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান। ২০১৮ সালে বাইজু রবীন্দ্রনের শিক্ষাপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বাইজুস ভারতের শীর্ষ স্টার্টআপগুলোর মধ্যে একটি ছিল। করোনা মহামারির সময় স্কুল যখন বন্ধ ছিল, তখন বাইজুসের আরও বাড়বাড়ন্ত হয়।