
বোস্টনের হার্ভার্ড টিএইচ চ্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথের মেডিসিন রেসিডেন্ট ডা. জাস্টিন ইয়াং বলেন, ‘আমাদের গবেষণার প্রমাণ বলছে যে, পুশআপ ক্যাপাসিটি অর্থাৎ একজন মানুষ কতবার পুশআপ করেন বা করার সামর্থ্য আছে তার পরিমাপ যেকোনো ক্ষেত্রে কার্ডিওভাস্কুলার রোগের ঝুঁকি মূল্যায়নের একটি সহজ ও ব্যয়বিহীন পদ্ধতি’। তিনি আরো বলেন, ‘কার্ডিওভাস্কুলার রোগের ঝুঁকির সঙ্গে ম্যাক্সিমাল ট্রেডমিল টেস্টের (হার্টের কার্যক্ষমতা পরীক্ষার বিশেষ পদ্ধতি) ফলাফলের তুলনায় পুশআপ ক্যাপাসিটির সম্পর্ক আরো সঠিক ও শক্তিশালী’। আপনার শারীরিক বয়স যা-ই হোক না কেন, রোজ সকালে পুশআপ করার অভ্যাস গড়ে তুললে আপনার হৃদযন্ত্র ও শরীরের বয়স কমতে পারে ১০ বছর, বলা হচ্ছে নতুন গবেষণায়।
এ তো গেলো তাত্ত্বিক কথা। এবার আসি রোজ সকালে ২০টি পুশআপের মাধ্যমে কীভাবে কমে আপনার বয়স সে প্রসঙ্গে। যদিও এটা প্রতীকী কথা হিসেবেই বলা, তবে রোজ ২০টি পুশআপের এমন দারুণ কিছু উপকারিতা আছে, যা আপনাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে একদম সুস্থ রাখবে। সেই সঙ্গে দেহ-মন জেগে উঠবে তারুণ্যের জেল্লায়। আর এভাবেই শারীরিক ও মানসিকভাবে আপনার বয়স কমবে।

পেশির উদ্দীপনা
নিয়মিত ২০টি পুশআপের মাধ্যমে দেহের উপরিভাগের বিভিন্ন অংশ উজ্জীবিত হয়। বিশেষ করে বুক, কাধ,বাহুর মূল বা কোর পেশিগুলোর কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। আপনি কোনো ধরনের শরীরচর্চা না করলেও, হাঁটতে হয় সবাইকে। তাই দেহের উপরিভাগের তুলনায় নিচের দিকের পেশি বেশি সচল থাকে। সে কারণে পুশআপ দেহের উপরিভাগকে সচল রাখতে দারুণ কার্যকর।
ক্যালরি পোড়াতে সহায়ক
রোজ ২০টি পুশআপ প্রচুর ক্যালরি পোড়ায়। তেমনি এটি কার্যকরীভাবে পেশি গঠন করে। ফলে হজম প্রক্রিয়া শক্তিশালী হয় আর ওজন কমে দ্রুত।
পিঠ সোজা করে
আমাদের অনেকের মধ্যেই প্রবণতা আছে কুঁজো হয়ে বসার। দীর্ঘসময় এভাবে বসার অভ্যাস করলে মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে যায়। আমরা এভাবে আরাম পেলেও কুঁজো হয়ে থাকলে দেখতেও ভালো দেখায় না আর সেই সঙ্গে এভাবে নিয়মিত বসা বা হাঁটার অভ্যাস করলে ব্যাক পেইন হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। নিয়মিত পুশআপে পিঠের পেশি দৃঢ় হয়, হাঁটার ও দাঁড়ানোর ভঙ্গি সুন্দর হয়।
হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
রোজ সকালে ২০ বার পুশআপে হৃদযন্ত্রের অ্যাক্টিভিটি বৃদ্ধি পায়। ফলে হৃৎযন্ত্র শক্তিশালী হয়। সেই সঙ্গে হার্টের বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমে যায়।

হাড়কে মজবুত করে
রোজ পুশআপ করা একটি খুবই কার্যকরী ওয়েট এক্সারসাইজ। এই ব্যায়াম করার সময় আপনার পুরো শরীরের ওজন নিজেকেই বহন করতে হয়, যা হাড়ের গঠনে খুবই সহায়ক। পুশআপ হাড়ের ক্ষয় রোধ করে অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি কমায়।
যেকোন ধরনের ভারী ব্যায়াম বা ওয়েট এক্সারসাইজের পর শরীর থেকে বিশেষ ধরনের উদ্দীপক হরমোন নিঃসৃত হয়,যার নাম এন্ডোরফিন। রোজ সকালের ২০টি পুশআপ শেষে শরীর এন্ডোরফিন হরমোন বের হওয়ার কারণে উদ্দীপনা পায়। এটি মানসিক চাপ, অবসাদ, দুশ্চিন্তা কমিয়ে মনকে প্রফুল্ল রাখে।
সার্বিকভাবে অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কার্যকারিতা বৃদ্ধি
সকালবেলায় পুশআপের মাধ্যমে রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি পায়, বাড়ে অক্সিজেনের সরবরাহ। এতে সারাদিন আপনি প্রাণোচ্ছল অনুভব করবেন।

নিয়মিত পুশআপের ফলে দেহের উপরিভাগের বিভিন্ন অস্থি সংযোগ ও পেশির স্থিতিস্থাপকতা আর সক্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। পুশআপ করলে কাঁধ ও কবজির বলিষ্ঠতা বাড়ে অনেক গুণ।
দেহের ভারসাম্য ঠিক করে
পুশআপের সময় দেহের কোর পেশি অন্তর্ভুক্ত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঠিকমতো নিয়মিত এই ব্যায়াম করলে দেহের ভারসাম্য ভালো হয়। প্রায়ই আমরা অনেকে হোঁচট খেয়ে পড়ে যাই। সেই প্রবণতাও কমে যায়।
ঘুম ভালো হয়
পরীক্ষিতভাবে নিয়মিত পুশআপ ঘুমের চক্র ঠিক করে। এই ব্যায়াম অবসাদ কমায় আর ঘুমের সময় বৃদ্ধি করে।

পুশআপ বেশ টেকনিক্যাল একটি ব্যায়াম। খুব ভালো হয় যদি কোন অভিজ্ঞ শরীরচর্চাবিদ কিংবা জিম ট্রেইনারের পরামর্শ অনুযায়ী করেন। এটি অ্যাডভান্স লেভেলের ব্যায়াম। সেই কারণে অভিজ্ঞজনের পরামর্শ অত্যাবশ্যক। এই ব্যায়াম করার আগে প্রাথমিক পর্যায়ের ব্যায়াম করে শরীরের পেশিকে প্রস্তুত করা জরুরী। তারপর আস্তে আস্তে দুটি, পাঁচটি করে পুশআপ দিয়ে শুরু করে সময়ের সঙ্গে এই ব্যায়ামের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আপনি পাবেন দীর্ঘমেয়াদি ফল। আর তখন সত্যিই কার্যকরভাবে আপনার শরীরের বয়স ১০ বছর কমে যাবে। আপনি হবেন স্বাস্থ্যবান ও দীর্ঘজীবী।
সূত্র: এন ডি টিভি, মেনজ হেলথ