সময়ের ভুল মূল্যায়নেই কি হাতছাড়া হলো বাংলাদেশের জয়?

শেষ দিন বৃষ্টির পর যখন খেলা শুরু হয়, তখন বাংলাদেশের লিড ছিল ২৪৭। হাতে ছিল অন্তত ৫০ ওভার। সে সময়টায় ক্রিকেটীয় রীতি-নীতির চোখে যা মূল্যবান—তা ছিল না রান, ছিল ওভার।

বাংলাদেশ প্রথম সেশনে ব্যাট করেছে চূড়ান্ত ধীরগতিতে—রানরেট মাত্র ৩.১৫। ১৭ ওভারে এসেছে ৬০-এর মতো রান। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, তখন কি এই ধীরস্থির ব্যাটিংয়ের দরকার ছিল?

বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট মাথায় রেখেই হয়তো বাংলাদেশ চেয়েছিল নিরাপদ লিড নিতে। কিন্তু এই ম্যাচে, সেই নিরাপত্তা নেওয়ার খেসারত দিতে হলো সময়ের অপচয়ে। শান্তর শতকের জন্য কিছুটা সময় বরাদ্দ রাখা—সেটি আবেগের জায়গা থেকে যুক্তিযুক্ত হলেও, টিম ম্যানেজমেন্ট কি বুঝতে পারেনি যে বৃষ্টি ইতোমধ্যেই তাদের হাতে থাকা ঘড়ির কাঁটা ঘুরিয়ে দিচ্ছে?

দ্বিতীয় ইনিংসে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং বিপর্যয় কিন্তু বলছে অন্য কথা। তাইজুল ইসলাম ও নাঈম হাসানের ঘূর্ণিতে বল ঘুরেছে, বাউন্স করেছে, ভেঙেছে লাইন—সবকিছুই ছিল এক আদর্শ পঞ্চম দিনের উইকেটের উপযোগী। তাইজুল একাই তুলে নেন ৩ উইকেট, নাঈমও ছিলেন কার্যকর।

এই উইকেট যদি সত্যিই এত সহায়ক ছিল, তাহলে আরও ১২-১৩ ওভার আগেই যদি তারা বোলিং শুরু করতে পারত, তাহলে কি ফলাফল আলাদা হতো না?

সম্ভবত হ্যাঁ। কারণ ব্যাটিং-বোলিং দুই ইনিংসেই বাংলাদেশ ছিল এগিয়ে। ম্যাচের গতিপ্রকৃতি ছিল তাদের নিয়ন্ত্রণে। শুধু সময় ব্যবস্থাপনায় একটু সংশয় থেকে গেছে।

শান্ত ম্যাচ শেষে বলেন, ‘বৃষ্টি এসে পরিকল্পনা পাল্টে দিয়েছে। আমরা চাচ্ছিলাম এমন পজিশনে যেতে যেখান থেকে হারের সম্ভাবনা কম, জয়ের সম্ভাবনা বেশি।’ এ কথা সত্য হলেও, প্রশ্ন হচ্ছে, আপনি যখন প্রতিপক্ষকে চেপে ধরেছেন—তখন সাহস দেখানোই তো নেতৃত্ব। আর টেস্ট জয় তো একদিনে আসে না, অনেক সিদ্ধান্তের ফল এটি।

অনেক সময় ড্র নিশ্চিত করার চেয়ে জয় হাতছাড়া করাটাই বেশি হতাশাজনক।

তবে সমালোচনার মাঝেও শান্তর দল যে আত্মবিশ্বাস দেখিয়েছে, সেটি প্রশংসার দাবিদার। দুই ইনিংসে শতক হাঁকিয়ে শান্ত নিজেই ছিলেন দলের ছায়া। লড়াকু স্পিন অ্যাটাক, ব্যাটারদের দায়িত্বশীলতা এবং শেষ ঘণ্টা পর্যন্ত লড়াই—সবকিছুই দেখিয়েছে যে বাংলাদেশ এখন আর কেবল টেস্টে অংশগ্রহণকারী নয়, প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেও জায়গা করে নিতে চাচ্ছে।

এই ম্যাচ থেকে বাংলাদেশকে যা শিখতে হবে, তা হলো: অভিনব পরিকল্পনা আর সঠিক সময়ে সাহসী সিদ্ধান্ত—এই দুইয়ের সমন্বয়েই আসে টেস্ট জয়। গলে জয়টা ধরা ছোঁয়ার মধ্যেই ছিল। সেটি ধরা হয়নি, তবে যা হয়েছে তা থেকেও অনেক কিছু শিখে নেওয়ার আছে।

পরের ম্যাচে—সময়ের গুরুত্ব যেন অমূল্য হয়ে না ওঠে, এটাই প্রত্যাশা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *