- অটোরিকশা সেবায় নৈরাজ্য বন্ধে উদ্যোগ নিয়েছিল সড়ক মন্ত্রণালয়।
- নির্ধারিত ভাড়া ও দৈনিক জমার হার কার্যকর করতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিআরটিএ চিঠি দিয়েছিল পুলিশকে।
- রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামের গণপরিবহনে অটোরিকশা যুক্ত হয় ২০০৩ সালে।
- ভাড়া ও দৈনিক জমা বাড়ানো হয়েছে অন্তত পাঁচ দফা। কখনোই মানেননি চালক ও মালিকেরা।
রাজধানীতে চলাচলকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া ও মালিকের জমার নির্ধারিত হার রয়েছে। সরকার সেই ভাড়া ও জমার হার কার্যকর করতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়েছিল, কিন্তু রাস্তা অবরোধ করে মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলে সরকারকে পিছু হটতে বাধ্য করলেন অটোরিকশার চালকেরা। নেপথ্যে ছিলেন মালিকেরাও।
জরিমানা ও মামলা করা ঠেকাতে সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে গতকাল রোববার সকালে ঢাকার রামপুরার বনশ্রী, মিরপুর, মিরপুরে বিআরটিএ কার্যালয়ের সামনে, গাবতলী, আগারগাঁও, তেজগাঁও, শনির আখড়া, দোলাইরপাড়সহ বিভিন্ন জায়গায় সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকেরা সড়ক অবরোধ করেন। এতে ওই সব সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ভোগান্তিতে পড়ে মানুষ।
যেমন শাওকাত হোসেন ও মাজেদা বেগম গতকাল সকালে সাভার থেকে বাসে ঢাকার নিউমার্কেটের দিকে আসছিলেন। গাবতলী এসে বাসটি অবরোধে আটকা পড়ে। তখন যাত্রীদের বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। শাওকাত ও মাজেদা হেঁটে এবং রিকশা করে নিউমার্কেটে পৌঁছান।
শাওকাত হোসেন বলেন, চালক ও মালিকদের দাবিদাওয়া থাকলে তাঁরা অটোরিকশা চলাচল বন্ধ রাখতে পারেন। রাস্তা অবরোধ করবেন কেন? আইন মানতে বলায় সড়ক অবরোধ করে ভোগান্তি তৈরি তো মানুষকে জিম্মি করার শামিল।
সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অটোরিকশাচালকদের অবরোধের কারণে গতকাল প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে কয়েকজন উপদেষ্টা সময়মতো পৌঁছাতে পারেননি।
অটোরিকশার চালক-মালিকেরা আইন মানেন না, যাত্রীদের জিম্মি করেন, এটা ঠিক। সরকারকে বেশ কিছু আন্দোলন মোকাবিলা করতে হচ্ছে, হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে দুর্ভোগ আর না বাড়িয়ে একটা সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক ও মালিকেরা কখনোই নির্ধারিত ভাড়া ও জমার হার মানেননি। চালকেরা যাত্রীদের ইচ্ছা অনুযায়ী গন্তব্যে যেতে রাজি হন না। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার এবং তৎকালীন সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অটোরিকশার মালিক ও চালকদের নৈরাজ্য টিকিয়ে রাখার সুযোগ দিয়েছেন। নতুন অন্তর্বর্তী সরকার নৈরাজ্য দূর করার উদ্যোগ নিয়েছিল, কিন্তু অটোরিকশার চালক ও মালিকেরা মানুষকে জিম্মি করায় সরকারকে পিছু হটতে হলো। কারণ, সরকারকে ইতিমধ্যে প্রায় ২০০ আন্দোলন মোকাবিলা করতে হয়েছে। নিয়মিত ঢাকায় সড়ক অবরোধ হচ্ছে।
জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, অটোরিকশার চালক-মালিকেরা আইন মানেন না, যাত্রীদের জিম্মি করেন, এটা ঠিক। সরকারকে বেশ কিছু আন্দোলন মোকাবিলা করতে হচ্ছে, হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে দুর্ভোগ আর না বাড়িয়ে একটা সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে। তবে তিনি জানান, আইন সবাইকে মানতে হবে। অটোরিকশার ক্ষেত্রে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা হবে।
শুরুতে কয়েক মাস নির্ধারিত ভাড়ায় চলাচল করেছিল অটোরিকশাগুলো। এরপর শুরু হয় নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ২০-৩০ টাকা বেশি চাওয়া। পরে মিটার থাকলেও চালকেরা চুক্তিতে চলাচল করতে যাত্রীদের বাধ্য করা শুরু করেন। মিটারের কথা বললে তাঁরা যাত্রীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। সেই অবস্থা এখনো চলছে।
নৈরাজ্যের দুই দশক
রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামের গণপরিবহনে অটোরিকশা যুক্ত হয় ২০০৩ সালে। তখন পরিবেশদূষণকারী বেবিট্যাক্সি ও মিশুক উঠিয়ে দিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশার অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে সংখ্যা ছিল নির্দিষ্ট।
শুরুতে কয়েক মাস নির্ধারিত ভাড়ায় চলাচল করেছিল অটোরিকশাগুলো। এরপর শুরু হয় নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ২০-৩০ টাকা বেশি চাওয়া। পরে মিটার থাকলেও চালকেরা চুক্তিতে চলাচল করতে যাত্রীদের বাধ্য করা শুরু করেন। মিটারের কথা বললে তাঁরা যাত্রীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। সেই অবস্থা এখনো চলছে।
সব মিলিয়ে দুই দশক ধরে রাজধানী শহর ও বাণিজ্যিক নগর চট্টগ্রামে অটোরিকশা সেবায় নৈরাজ্য চলছে। সিএনজিচালিত অটোরিকশার মালিক ও চালকদের দাবির মুখে অন্তত পাঁচবার ভাড়া ও দৈনিক জমা বাড়ানো হয়েছে, কিন্তু একবারও বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়া কার্যকর করতে পারেনি।
বর্তমানে অটোরিকশার মালিকের জন্য দৈনিক নির্ধারিত জমা ৯০০ টাকা। তবে চালকেরা বলছেন, মালিকেরা দিনে দুই বেলায় চালকের কাছে অটোরিকশা ভাড়া দিয়ে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করেন।
বর্তমানে অটোরিকশার মালিকের জন্য দৈনিক নির্ধারিত জমা ৯০০ টাকা। তবে চালকেরা বলছেন, মালিকেরা দিনে দুই বেলায় চালকের কাছে অটোরিকশা ভাড়া দিয়ে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করেন। অটোরিকশার বর্তমান সর্বনিম্ন (প্রথম দুই কিলোমিটার) ভাড়া ৪০ টাকা, অর্থাৎ একজন যাত্রী চাইলে ৪০ টাকায় অটোরিকশা ভাড়া করার সুযোগ পাবেন। দুই কিলোমিটারের পরের প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ১২ টাকা নির্ধারিত আছে।
অবশ্য চালকেরা ভাড়া নেন কার্যত দ্বিগুণ। দেড় শ টাকার নিচে স্বল্প দূরত্বের পথে যাওয়া যায় না। একটু বেশি দূরত্ব হলেই ভাড়া চাওয়া হয় আড়াই শ টাকা বা তার বেশি। বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন অথবা লঞ্চঘাটের মতো জায়গা থেকে কোথাও যেতে চাইলে অনেক বেশি ভাড়া হাঁকা হয়। সকালে অফিস শুরুর সময় এবং বিকেলে ছুটির সময় ভাড়া বাড়িয়ে দেন চালকেরা।
রাজধানীর পান্থপথে বিআরবি হাসপাতালের সামনে গত শনিবার বিকেলে কয়েকটি অটোরিকশা দাঁড় করিয়েও কমলাপুর রেলস্টেশনে যেতে রাজি করাতে পারেননি তোফায়েল আহমেদ। শেষ পর্যন্ত একজন চালক দরদামের পর ২৫০ টাকায় যেতে রাজি হন। অটোতে চেপে রওনা দেওয়ার আগে তোফায়েল প্রথম আলোকে বলেন, তিনি স্ত্রীকে চিকিৎসক দেখিয়ে ট্রেনে নরসিংদী যাচ্ছেন। পান্থপথ থেকে কমলাপুর যাওয়ার সরাসরি বাস নেই। তাই বেশি খরচ হলেও অটোতেই যেতে হয়েছে।
পান্থপথ থেকে কমলাপুর স্টেশনের দূরত্ব সাড়ে সাত কিলোমিটারের মতো। সরকার নির্ধারিত হারে এই পথে অটোরিকশার ভাড়া আসে ১০৬ টাকা। যানজট, সিগন্যালে আটকে থাকার জন্য প্রতি মিনিটে দুই টাকা যোগ হয়। সব মিলিয়ে ভাড়া দাঁড়ানোর কথা ১৩০ টাকার আশপাশে। চালক নেন ২৫০ টাকা।
চালক আমিনুল ইসলাম দাবি করেন, অটোরিকশার দৈনিক জমা ৯০০ টাকা, কিন্তু মালিক তাঁর কাছ থেকে এক বেলার জন্যই ১ হাজার ১০০ টাকা নেন। ফলে যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় ছাড়া তাঁর উপায় নেই।
মালিকদের বাড়তি জমা আদায় বন্ধ করতে সড়ক আইন অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য গত ২৬ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর পুলিশকে (ডিএমপি) চিঠি দেয় বিআরটিএ। ১০ ফেব্রুয়ারি চিঠি দেওয়া হয় অটোরিকশার চালকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে। এর পর থেকেই ঢাকা ও চট্টগ্রামের অটোরিকশাচালকদের সংগঠনগুলো বিক্ষোভ মিছিলসহ নানা কর্মসূচি পালন শুরু করে। ভেতরে-ভেতরে এ কর্মসূচিতে মালিকপক্ষও সমর্থন দিচ্ছে বলে জানা গেছে। তাদের লক্ষ্য দুটি। প্রথমত, তাৎক্ষণিক শাস্তি ও জরিমানা থেকে রক্ষা পাওয়া। দ্বিতীয়ত, চাপ দিয়ে মালিকের দৈনিক জমা এবং চালকের ভাড়া আবার বাড়িয়ে নেওয়া।
ঢাকা অটোরিকশা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সরকার ২০১৫ সালের পর জমা বৃদ্ধি করেনি। ফলে মালিকেরা কিছু বাড়তি জমা নিয়ে থাকতে পারেন। তবে সরকার দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি বিবেচনায় নিয়ে জমা পুনর্নির্ধারণ করলে মালিকেরা মানবেন।
মালিকেরা সরকার নির্ধারিত হারে জমা নিলে চালকেরা বাড়তি ভাড়া আদায় করবেন না বলে উল্লেখ করেন ঢাকা ও চট্টগ্রাম জেলা সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ঐক্য পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন (দুলাল)। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সরকার নির্ধারিত জমা কার্যকর হলে চালকদের বিরুদ্ধে মামলা দিলেও তাঁদের আপত্তি নেই।
মালিক ও চালকদের বক্তব্য হলো, আগে অটোরিকশার জমা ও ভাড়া বাড়াতে হবে। তারপর আসবে কার্যকর করতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার প্রশ্ন। কিন্তু দেখা গেছে, অতীতে এভাবে তাঁরা জমা ও ভাড়ার হার বাড়িয়ে নিয়েছেন, পরে মানেননি।
এবার বিআরটিএ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে চিঠি দেওয়ার আগে অটোরিকশার মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছে। সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের ওপর দায় চাপিয়েছে, শ্রমিকপক্ষ মালিকদের ওপর দায় চাপিয়েছে। নৈরাজ্য বন্ধে তারা একমত হয়নি।
এদিকে গতকাল ঢাকা ও চট্টগ্রাম জেলা সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ঐক্য পরিষদ বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে। সেখানে মিটারে না চললে সড়ক আইনে যে শাস্তির কথা বলা হয়েছে, তা বাতিল এবং ভাড়া বৃদ্ধিসহ ১৩ দফা দাবি করা হয়েছে। দাবি না মানলে ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে আগামী ২৩ মার্চ পর্যন্ত বিক্ষোভ, স্মারকলিপি পেশসহ নানা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি ১৫ এপ্রিল ঢাকা ও চট্টগ্রামে অটোরিকশা ধর্মঘটেরও ডাক দেওয়া হয়েছে।
বেশি ভাড়া নিলে শাস্তি কী
সিএনজিচালিত অটোরিকশার নীতিমালায় চালক ও মালিকের শাস্তির বিধান রয়েছে। ২০১৮ সালে করা সড়ক পরিবহন আইনেও কঠোর শাস্তির বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী, অটোরিকশার মতো কোনো কন্ট্রাক্ট ক্যারিজের চালকেরা যেকোনো গন্তব্যে যেতে রাজি না হলে, বেশি ভাড়া চাইলে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং চালকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হিসেবে দোষসূচক ১ পয়েন্ট কর্তন করা হবে। এভাবে ১২ পয়েন্ট কাটা গেলে লাইসেন্স বাতিল হয়ে যায়।
সড়ক পরিবহন আইনে আরও বলা হয়েছে, মালিক নির্ধারিত দৈনিক জমার বেশি টাকা দাবি করলে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা ৬ মাসের কারাদণ্ডের মুখোমুখি হবেন।
বাজারে ভারতের বাজাজ কোম্পানির তৈরি একটি অটোরিকশার দাম এখন সাড়ে পাঁচ লাখ থেকে পৌনে ছয় লাখ টাকা। অথচ বিআরটিএর নিবন্ধন পাওয়া প্রতিটি অটোরিকশা এখন হাতবদল হয় ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকায়।
অটোরিকশার সংখ্যা কম, নৈরাজ্যের সুযোগ
২০০৩ সালে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালুর আগে ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রায় এক লাখের মতো মিশুক-বেবিট্যাক্সি চলাচল করত। সেগুলো তুলে দিয়ে দুই শহরে ২৭ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা নামানো হয়। তখন অটোরিকশার অনুমতিপত্র বিতরণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।
ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রাইভেট গাড়ি, মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা অবাধে বাড়ছে। কোনো সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। শুধু অটোরিকশার ক্ষেত্রে এ সীমা রয়েছে। আর অটোরিকশার মেয়াদ (১৫ বছর) শেষ হয়ে গেলে পুরোনো মালিকেরাই নতুন অটোরিকশা নামানোর সুযোগ পান। সংকটের সুযোগে এ বাহনের মালিকেরা নিবন্ধন হাত বদল করে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা আয় করছেন।
বাজারে ভারতের বাজাজ কোম্পানির তৈরি একটি অটোরিকশার দাম এখন সাড়ে পাঁচ লাখ থেকে পৌনে ছয় লাখ টাকা। অথচ বিআরটিএর নিবন্ধন পাওয়া প্রতিটি অটোরিকশা এখন হাতবদল হয় ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকায়। মালিক ও চালক সূত্র বলছে, একটি অটোরিকশা থেকে দিনে অন্তত দেড় হাজার টাকা ও মাসে ৪৫ হাজার টাকা আয়ের সুযোগ আছে। এ কারণেই নিবন্ধিত অটোরিকশার দাম এত বেশি।
অটোরিকশার চাহিদা থাকলে আরও বেশি করে নামানো যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে বড় কোনো কোম্পানির অধীন শক্ত নীতিমালার আওতায় নামানো উচিত। বিদ্যমান ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনা যাবে না।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবহনবিশেষজ্ঞ সামছুল হক
অটোরিকশার চালক ও মালিকদের সূত্র বলছে, শুরুতে বরাদ্দ বিতরণে অনিয়মে যুক্ত ছিল বিএনপির তৎকালীন নেতারা। পরে হাতবদল হয়ে নানা ব্যবসায়ীর হাতে চলে গেছে এসব অটোরিকশা। এর মধ্যে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের স্থানীয় নেতা, পুলিশের কর্মকর্তা ও তাঁদের স্বজন, সাংবাদিকসহ অনেকেই অটোরিকশার মালিক হয়েছেন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবহনবিশেষজ্ঞ সামছুল হক বলেন, বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়া কার্যকর করতে পারছে না। এর কারণ বাসের মতো অটোরিকশাকেও তারা খুচরা পণ্যের মতো বাজারে ছেড়ে দিয়েছে। হাজারো মালিক-শ্রমিক জন্ম দিয়েছে, যা নিয়ন্ত্রণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, অটোরিকশার চাহিদা থাকলে আরও বেশি করে নামানো যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে বড় কোনো কোম্পানির অধীন শক্ত নীতিমালার আওতায় নামানো উচিত। বিদ্যমান ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনা যাবে না।
সামছুল হক আরও বলেন, ২০১৮ সালে সড়ক আইন করার পরই অটোরিকশার চালক ও মালিকদের বিরুদ্ধে তা প্রয়োগ করা উচিত ছিল। এত দিন বিআরটিএ ও পুলিশ কেন পারেনি, এর জবাব দরকার।