প্রতিনিধি: শহরতলির ছোট্ট গ্রাম। সেখানেই সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে বাড়ি করেছেন এক বৃদ্ধ। তাঁর বাড়ির জমিটি নিজেদের নামে লিখে নিতে চান ছেলেরা। আশ্রয়ের জমিটি হাতছাড়া করতে নারাজ বৃদ্ধ বাবা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বাবাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন তিন ছেলে। বৃদ্ধ বাবা আশ্রয় নেন স্থানীয় বাজারে।
ঘটনাটি ঘটেছে পাবনা জেলা সদরের হিমাইতপুর ইউনিয়নে। বিষয়টি নাড়া দেয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। খুদে বার্তায় তাঁরা বিষয়টি পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খানকে জানান। পরে পুলিশ সুপারের নির্দেশে বুধবার রাতে জেলা পুলিশের একটি দল তিন ছেলেকে আটক করে। এর পরপরই বাবাকে বাড়িতে ফিরিয়ে নেন ছেলেরা।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই বৃদ্ধের বয়স প্রায় ৭০ বছর। পেশায় রিকশাভ্যানের চালক। তিনি পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ের জনক। এরপরও বৃদ্ধ বয়সে ভ্যান চালিয়ে নিজের জীবন চালান। সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে ১০ কাঠা জমিতে একটি বাড়ি করেছেন। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। পাঁচ ছেলের একজন বিদেশে থাকেন। বাকি ছেলেরা বেশ কিছুদিন ধরেই তাঁর বাড়ির জমিটি লিখে দেওয়ার জন্য আবদার করছিলেন। কিন্তু তিনি নিজের আশ্রয় রক্ষায় বাড়িটি ছেলেদের নামে লিখে দেননি। এতেই ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন তিন ছেলে। তাঁরা বৃদ্ধ বাবাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দেন।
বাড়িছাড়া হওয়ার পর ওই বৃদ্ধ আশ্রয় নেন স্থানীয় বাজারে। সারা দিন ভ্যান চালিয়ে রাতে বাজারেই ঘুমাতে শুরু করেন। বেশ কিছুদিন খোলা আকাশের নিচে রাত্রি যাপন করার একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম জানান, বুধবার রাতে স্থানীয় এক ব্যক্তি খুদে বার্তায় পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খানকে বিষয়টি জানান। পরে পুলিশ সুপারের নির্দেশে থানা-পুলিশের একটি দল ওই বৃদ্ধকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যায়। পুলিশ সদস্যরা প্রথমে বৃদ্ধের তিন ছেলের প্রতি বাবাকে বাড়িতে ফিরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু ছেলেরা কিছুতেই বাবাকে ফিরিয়ে নিতে চাননি।
পরে পুলিশ সুপারের নির্দেশনা অনুযায়ী তাঁরা তিন ছেলেকে আটক করে থানায় নিয়ে যান। অবস্থা বেগতিক দেখে বাবাকে বাড়িতে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন ছেলেরা। পরে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে তিন ছেলে মুচলেকা দিয়ে বাবাকে বাড়িতে নিয়ে যান।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান বলেন, ‘ঘটনাটি খুব স্পর্শকাতর। আমরা বৃদ্ধ মানুষটির খোঁজখবর রাখছি। তিনি বর্তমানে বাড়িতেই আছেন। তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি যেন নিজের বাড়িতে ঠিকমতো থাকতে পারেন, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’