দুয়ারে কড়া নাড়ছে অমর একুশে বইমেলা-২০২৩

বইমেলায় নান্দনিকতার ছোঁয়া, দ্বার খোলার অপেক্ষা পাঠক-দর্শনার্থীদের, কোথাও হাতুড়ি-লোহার টুংটাং শব্দ, কোথাও কাটা হচ্ছে কাঠ কিংবা কাঠের গায়ে দেওয়া হচ্ছে রংতুলির আঁচড়, আবার কোথাও বালু ফেলে ইট বিছিয়ে চলছে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এসব দৃশ্য দেখে যে কারও বুঝতে অসুবিধা হবে না, দুয়ারে কড়া নাড়ছে অমর একুশে বইমেলা-২০২৩। সত্যিই তা-ই। বছর ঘুরে আবারও শুরু হচ্ছে বাংলা ভাষাভাষিদের প্রাণের মেলা। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিজুড়ে চলা এ মেলা ঘিরেই বিভিন্ন প্রকাশনীর স্টল ও প্যাভিলিয়নগুলোতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
বইমেলা শুরুর আগের দিন মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) সরেজমিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে দেখা গেছে, বেশকিছু স্টল পুরোপুরি প্রস্তুত হয়েছে। বেশিরভাগ স্টলের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। বরাবরের মতো এবারও ক্রেতা-দর্শনার্থীদের আকর্ষণের বিষয়টি মাথায় রাখছেন প্রকাশনা মালিকরা। এ কারণে স্টলগুলোতে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে নান্দনিকতার ছোঁয়া। এসব কাজেই এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিক ও স্টল সংশ্লিষ্টরা।
বুধবার মেলা শুরু হলেও মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত দুই-তৃতীয়াংশ স্টলেই ওঠেনি বই। স্টল-প্যাভিলিয়ন সংশ্লিষ্ট ও প্রকাশকরা জানিয়েছেন, প্রস্তুতির জন্য অন্য বছর যে সময় দেওয়া হয় এবার তারা তা পাননি। মেলা শুরুর মাত্র আট-দশ দিন আগে তারা স্টল-প্যাভিলিয়নের স্থান বরাদ্দ পেয়েছেন। ফলে অনেকটা তড়িঘড়ি করে তাদের প্রস্তুতি সারতে হচ্ছে।
বইমেলার আয়োজক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগে ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে স্টল তৈরির কাজ শুরু হতো। এবার তা জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে শুরু হয়েছে। ফলে প্রকাশকরা স্টল ও প্যাভিলিয়ন প্রস্তুত করতে পর্যাপ্ত সময় পাননি। তবে মেলা শুরুর আগে সব কাজ শেষ হবে বলে আশা আয়োজকদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর বইমেলার আয়োজনে ছিল নানা বিঘ্ন। মেলায় আসা ক্রেতা-দর্শনার্থীদেরও মানতে হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি। তবে এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই শিথিল থাকায় এবারের মেলা ঘিরে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্টল-প্যাভিলিয়নের দূরত্ব এবার কমিয়ে আনা হয়েছে।
নিরাপত্তা হুমকি মনে করলে পুলিশকে জানাতে বললেন ডিএমপি কমিশনার
এ বছর প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট জায়গায় একাডেমি প্রাঙ্গণে ১১২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৬৫টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৮৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৩৬টি ইউনিট অর্থাৎ মোট ৬০১টি প্রতিষ্ঠানকে ৯০১টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মেলায় রাখা হয়েছে ৩৮টি প্যাভিলিয়ন। বিগত বছরগুলোতে স্টল-প্যাভিলিয়ন প্রস্তুতে ১৫-২০ দিন সময় দেওয়া হলেও এবার সে কাজ শেষ করতে হচ্ছে ৮-১০ দিনে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে দেখা গেছে, রিকশাভ্যান ও পিকআপে আনা হচ্ছে স্টল ও প্যাভিলিয়ন তৈরির সরঞ্জাম। কর্মচারীরাও যে যার কাজে ব্যস্ত। সঙ্গে থেকে কাজের দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন স্টল-প্যাভিলিয়ন সংশ্লিষ্টরা।
প্রাণের বইমেলা হোক সবার জন্য
স্টল প্রস্তুতের কাজে ব্যস্ত থাকা মো. আসাদুজ্জামান নামের একজন কর্মচারী জাগো নিউজকে বলেন, কদিন ধরে বেশ কয়েকটি স্টল প্রস্তুতের কাজ করছি। এখানেও দুদিন আগে কাজ শুরু করেছি। এবার দেরিতে কাজ শুরু হয়েছে। তবে স্টল তৈরির কাজ অনেকটাই গুছিয়ে এনেছি। বুধবার মেলা শুরুর আগে পুরো কাজ শেষ করতে পারবো বলে আশা করছি।
স্টল প্রস্তুতের কাজে ব্যস্ত আরেক কর্মচারী সুমন বলেন, সকাল থেকে কাজ করছি। আমাদের একটাই টার্গেট মেলা শুরুর আগে স্টল প্রস্তুত কাজ শেষ করা।
মহাকাল প্রকাশনা সংস্থার পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, আগে স্টল প্রস্তুত করার জন্য অনেক সময় পেতাম। এ বছর সময় কম দেওয়া হয়েছে। তাই এখনো স্টল নির্মাণকাজ চলছে।
ইস্তামিন প্রকাশনার স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। এবারের মেলায় বেচাকেনা কেমন হয় বলা মুশকিল। বই প্রকাশে খরচ বেড়েছে। এ নিয়ে বাড়তি চাপে প্রকাশকরা। ক্রেতাদের ওপরও এর প্রভাব পড়বে।
অন্বেষা প্রকাশনের ব্যবস্থাপক আব্দুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আমরা খুব কম সময় পেয়েছি। মেলায় স্টল-প্যাভিলিয়নের স্থান বরাদ্দে দেরি না হলে এতদিনে কাজ শেষ হয়ে যেতো। তারপরও আমরা যত দ্রুত সম্ভব কাজ শেষ করছি। আশা করি সময়মতো সব হয়ে যাবে।
এ বছর মেলার প্রস্তুতির বিষয়ে বাংলা একাডেমির পরিচালক (প্রশাসন) ও অমর একুশে বইমেলা পরিচালনা পর্ষদ-২০২৩ এর সদস্য সচিব ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, একটি আন্তর্জাতিক মেলা (বাণিজ্যমেলা) থাকায় সবকিছু বুঝে পেতে আমাদের একটু দেরি হয়েছে। অন্য বছর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে স্টল তৈরির কাজ শুরু হলেও এবার তা শুরু হয়েছে জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে। যে কারণে প্রকাশকরা স্টল-প্যাভিলিয়ন প্রস্তুতে সময় কিছুটা কম পাচ্ছেন।
বইমেলা শুরু ১ ফেব্রুয়ারি, উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
তিনি জানান, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সব স্টলের কাজ প্রায় শেষ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে কিছু কাজ এখনো বাকি। মেলা শুরুর আগে সব কাজ শেষ হবে বলে আশা তার।
আগামীকাল বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অমর একুশে বইমেলা-২০২৩ উদ্বোধনের কথা রয়েছে। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত সাতটি নতুন বইয়ের গ্রন্থ উন্মোচন এবং বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২২ প্রদান করবেন প্রধানমন্ত্রী।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *