আমাদের অনেকেরই ধারণা এলার্জির কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। ওষুধ দিয়ে উপসর্গ কিছুদিন দমিয়ে রাখা যায় এবং ওষুধ বন্ধ করলেই শুরু হয় উপসর্গগুলো। এ কথা কিন্তু অমূলক কিছু নয়। প্রায় ক্ষেত্রেই তাই দেখা দেয়। তাই এলার্জি রোগীদের জানা দরকার আপনার রোগটা আসলে এলার্জিজনিত কিনা, তা এলার্জি বিশেষজ্ঞের কাছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সঠিকভাবে নির্ণয়ের পর তার চিকিৎসা করা। তাই এলার্জিজনিত রোগের ৩টি চিকিৎসা পদ্ধতি: প্রথমত- এলার্জি দ্রব্যাদি থেকে এড়িয়ে চলা, দ্বিতীয় ওষুধ চিকিৎসা- তৃতীয়ত ভ্যাকসিন বা ইমুনোথেরাপি। যদিও আজ প্রায় ৮০ বছর ধরে ভ্যাকসিন বিভিন্ন দেশে প্রচলিত এবং এক এক দেশে এক একভাবে প্রয়োগ করা হয় এবং কোনো সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা ছিল না, তাই ভ্যাকসিন বা এলার্জেন ইমুনোথেরাপি ব্যবহারের দিক-নির্দেশনা তৈরির জন্য ১৯৯৭ সালে ২৭ হতে ২৯শে জানুয়ারি সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বিশ্বব্যাপী এলার্জি, হাঁপানি ও ইসুনোথেরাপি সংক্রান্ত বিভিন্ন সংস্থা যথা আমেরিকান একাডেমি অব এলার্জি, এজমা অ্যান্ড ইমুনোলোজি, ইউরোপিয়ান একাডেমি অব এলারগোলজি অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল ইমুনোলোজি, ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব পেডিয়াট্রিক্স এলার্জি অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল ইমুনোলোজি, ইন্টারন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব এলারগোলোজি অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল ইমুনোলোজি, জাপানিজ সোসাইটি অব এলারগোলজি, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এলার্জি অ্যান্ড ইনফেকসিয়াস ডিজিজ একত্রিত হয়ে এলার্জি সৃষ্টিকারী দ্রব্যাদি বা এলার্জেনের বিরুদ্ধে প্রতিষেধকমূলক এলার্জেন ইমুনোথেরাপি বা ভ্যাকসিনের ব্যবহারের দিক-নির্দেশনা তৈরি করেন । ভ্যাকসিন কোন কোন রোগের জন্য বেশি কার্যকর? এলার্জিজনিত হাঁপানি (এজমা), এলার্জিক রাইনাইটিস ও এলার্জিক কনজাংটিভাইটিস এর ক্ষেত্রে এই ভ্যাকসিন অত্যন্ত কার্যকরী বলে অভিমত প্রকাশ করেন । এলার্জি ভ্যাকসিন কি? এলার্জেন ভ্যাকসিন বা ইমুনোথেরাপি এমন একটি পদ্ধতি যেখানে স্বল্পমাত্রা থেকে পর্যায়ক্রমে উচ্চতর মাত্রায় এলার্জেন (যে এলার্জেন দ্বারা রোগীর শরীরে উপসর্গ দেখা দেয়) এলার্জিক ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করানো হয়, যাতে পরবর্তীতে এলার্জেনের সংবেদনশীলতা কমে যায়। কীভাবে কাজ করে? ১. রক্তের আইজিই (যা এলার্জির জন্য মূলত দায়ী) তাকে ধীরে ধীরে কমিয়ে দেয়।
২. রক্তে আইজিজি’র মাত্রা বাড়িয়ে দেয় যা এলার্জি প্রতিরোধ করে। ৩. মাস্ট সেল যা হিস্টামিন নিঃসরণ করে তা কমিয়ে দেয়। আগে ধারণা ছিল এলার্জিজনিত রোগের কোনো চিকিৎসা বাংলাদেশে নেই। তাই গরিব রোগীরা তাবিজ-কবজের দিকে ঝুঁকে পড়েন আর সচ্ছল রোগীরা পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিভিন্ন দেশে চিকিৎসা নিতে গিয়ে দেশের মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা ও সময় দু’টোই অপচয় করছেন। এজন্য রোগীদের জানা দরকার যে, সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসা গ্রহণ করলে এ রোগ থেকে পরবর্তীতে হাঁপানি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। উন্নত দেশের সকল প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা বর্তমানে বাংলাদেশেই রয়েছে।
লেখক: সাবেক অধ্যাপক, শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। দি এলার্জি অ্যান্ড এজমা সেন্টার, পান্থপথ, ঢাকা। সেল- ০১৭২১-৮৬৮৬০৬, ০১৯২১-৮৪৯৬৯৯