প্রতিবারের মতো এবারও অনেক দর্শক অধীর অপেক্ষায় আছেন কালার্স টিভির জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো ‘বিগ বস’-এর নতুন সিজনের। আগামী ১ অক্টোবর টিভি পর্দায় আসতে চলেছে বিগ বসের ১৬তম সিজন। নানা কারণে আলোচিত–সমালোচিত এই শোর মূল আকর্ষণ যে বলিউড সুপারস্টার সালমান খান, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রতিবছর বিগ বস সঞ্চালনার দায়িত্ব তাঁর কাঁধেই থাকে। এবারও ভাইজান সঞ্চালকের ভূমিকায় থাকবেন। গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার রাতে বিগ বস ১৬ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল, যেখানে উপস্থিত ছিলেন ‘ভাইজান’। সংবাদ সম্মেলনে বিগ বস কিছু নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন তিনি।
বেশ কয়েক মাস আগে সালমান খানকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছিল। তারপর থেকে তাঁর নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মুম্বাইয়ের পাঁচতারা হোটেলের সংবাদ সম্মেলনেও ভাইজানের জন্য ছিল কঠোর নিরাপত্তা। অনুষ্ঠান শুরুর আগে বিশেষ নিরাপত্তা দল এসে সবকিছু ভালোভাবে খতিয়ে দেখে গেছে। বেশ কিছু সাংবাদিক এদিন ড্রাম বাজিয়ে বিগ বসের সংবাদ সম্মেলনে সালমানকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্ব ছিল বিগ বস–৭ জয়ী গওহর খানের ওপর।
সালমান বিগ বস ১৬–এর প্রথম প্রতিযোগী কাজাখস্তানের আবদু রোজিকের সঙ্গে উপস্থিত সাংবাদিকদের পরিচয় করিয়েছিলেন। ১৮ বছরের এই তরুণের উচ্চতা পাঁচ বছর বয়সী শিশুর মতো। আবদু রোজিক হিন্দি ভাষা না জানলেও হিন্দি গান তার ঠোঁটের ডগায়। সালমান খানের ‘ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া’ ছবির এক গান গাইতে গাইতে মঞ্চে আসেন এই তরুণ। আবদু রোজিক বলেন, তিনি সালমান ও শাহরুখের ভক্ত। ভাইজান জানান, তাঁর আগামী ছবি ‘কিসি কা ভাই কিসি কা জান’-এ দেখা যাবে আবদু রোজিককে।
সালমান ১২ বছর ধরে বিগ বসের সঞ্চালকের আসনে আছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘১২ বছর ধরে বিগ বস সঞ্চালনা করতে করতে অনেক কিছু শেখার সুযোগ পেয়েছি। শিখেছি, কেউ ভুল পথে গেলে তাকে কীভাবে সঠিক পথে আনা যায়।’ প্রতিবছর বিগ বস শুরুর আগে জোর চর্চা থাকে যে সালমান এবার সঞ্চালনা করবেন কি না। এ প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘প্রতিবার এসব গুঞ্জন শুনে খুবই বিরক্তি লাগে। আর তখন মনে হয় বিগ বস সঞ্চালনা এবার ছেড়েই দেব। কালার্স চ্যানেল আবার আমাকে রাজি করায়। সত্যি বলতে, আমি ছাড়া তাদের কাছে আর কোনো বিকল্প নেই (সশব্দে হেসে)। আর যদি অন্য বিকল্প তারা খুঁজে পেত, তাহলে আমার কাছে আর আসত না।’
প্রতিবছর বিগ বস শুরুর আগে ভাইজানকে ঘিরে আর একটা গুঞ্জন জোর কদমে চলতে থাকে। বিগ বস সঞ্চালনার জন্য সালমান কত পারিশ্রমিক নিচ্ছেন, তা নিয়ে চর্চা থাকে তুঙ্গে। এবার যেমন খবর হয়, তিনি সঞ্চালনার জন্য এক হাজার কোটি টাকা পারিশ্রমিক নিয়েছেন।
এ নিয়ে সালমান বলেন, ‘আমি এই হাজার কোটির টাকা পারিশ্রমিক ফিরিয়ে দিতে যাচ্ছি’, প্রথম লাইন শুনেই কোনো উপসংহারে যাবেন না, বিষয়টি পুরোপুরি রসিকতা করেই বলেছেন সালমান। ‘যে টাকা হাতেই পাইনি, তা ফেরত দিলে আয়োজকদের লাভই হবে,’ বিষয়টি খোলাসা করে বলেন তিনি। এ নিয়ে তিনি মজার ছলে বলেন, ‘যদি সত্যি সত্যি এত টাকা পেয়ে যেতাম, তাহলে সারা জীবনের জন্য কাজ করা ছেড়ে দিতাম। মিডিয়ায় সব সময় এ ধরনের খবর উড়তেই থাকে। আর এ খবর যদি সত্য হয়, তাহলে আয়কর বিভাগ আর ইডির নজরে চলে আসব। আমি এর এক–চতুর্থাংশ অর্থও পাই না। আর এক হাজার কোটি পেয়ে গেলেও আমার খরচ অনেক। আইনজীবীদের পারিশ্রমিক দিতেই চলে যায়, ওখানেও আর এক সালমান বসে আছে। এক সালমান অর্থ উপার্জন করে, আর তা অন্য সালমান নিয়ে চলে যায় (সশব্দে হেসে)।’
বলিউডের কোন নবদম্পতিকে সালমান বিগ বসের বাড়িতে দেখতে চান, জবাবে তিনি বলেন, ‘এ রকম কেউ নেই। তবে কিছু মানুষকে জানি যে তারা বিগ বসে এসে কাউকে সঙ্গে করে নিয়ে বের হবেন। বিগ বস হাউসে অনেক সময় অনেকে মাত্রা ছাড়িয়ে যান। আর তাঁদের শায়েস্তা করার জন্য আমাকেও মাত্রা ছাড়াতে হয়। এসব কিছুর জন্য তখন মানুষ আমাকে ও চ্যানেল কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করেন।’ সালমানের মা আগে বিগ বসের বড় ভক্ত ছিলেন। এ প্রসঙ্গে এই বলিউড সুপারস্টার বলেন, ‘মা আগে বিগ বস দেখতেন, এখন দেখেন না। অন্য চ্যানেলের অনুষ্ঠান দেখেন। তাঁর মনে হয়, বিগ বসে এখন একটু বেশি বাড়াবাড়ি হচ্ছে। ১৪তম সিজনের পর থেকে তিনি আর আমার অনুষ্ঠান দেখেন না। আমাকে বলেন, যারা বাড়াবাড়ি করবে, তাদের আমি যেন শায়েস্তা করি। আর মায়ের কথায় গলে গিয়ে আমিও তাদের শায়েস্তা করি।’
টেলিভিশনে এখন রিয়েলিটি শোর ছড়াছড়ি। তাই এ প্রতিযোগিতার দৌড়ে বিগ বস কতটা চাপে আছে, এর উত্তরে সালমান বলেন, ‘যত বেশি প্রতিযোগিতা হবে, মান তত বাড়বে। টেলিভিশনের মানও বাড়বে। প্রতিযোগিতা মান বাড়ায়, মান কমায় না কখনো। তবে তা স্বাস্থ্যকরভাবে হওয়া উচিত।’