২০ লাখ টাকা নিয়ে উধাও‘পল্লী উন্নয়ন সমিতি’ এনজিও

যশোরের শার্শা উপজেলায় ‘পল্লী উন্নয়ন সমিতি’ নামে একটি এনজিও হতদরিদ্র কয়েক শ গ্রাহককে ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার জামতলা সামটা গ্রামে অবস্থিত এনজিওটির অফিসে এসে ভুক্তভোগীরা একত্রিত হয়ে এ অভিযোগ করেন।
যে ব্যক্তি পাঁচ হাজার টাকা দেবেন তাকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ, যিনি ১০ হাজার দেবেন তাকে এক লাখ ও ২০ হাজার টাকা দিলে দুই লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হবে। এই প্রলোভনে পড়ে শার্শা ও ঝিকরগাছা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রায় ২০০ মানুষ আজ পথে বসেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক সপ্তাহ আগে প্রতারক চক্রটি নিজেদেরকে ‘পল্লী উন্নয়ন সমিতি’ নামে একটি বিদেশি সংস্থার কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে সরকার অনুমোদিত এনজিও দাবি করে তারা উপজেলার সামটা গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে মনিরুজ্জামান মনিরের বাড়ি ভাড়া নিয়ে শার্শা জোনাল অফিস পরিচয়ে তাদের এনজিওর কার্যক্রম চালু করে। ওই অফিস থেকে শার্শা উপজেলার জামতলা, সামটা, টেংরা, মহিশাকুড়া, হাড়িখালি ও ঝিকরগাছা উপজেলার দেউলি, পাঁচপোতা, মাটিকোমরা, নায়ড়া ও তার আশপাশ এলাকার অন্তত দুই শতাধিক হতদরিদ্র মানুষকে ঋণ দেওয়ার কথা বলে তাদের থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। এরপর সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে অফিস উদ্বোধন করার কথা বলে ডেকোরেটর দিয়ে অফিস ও তার আশপাশ ডেকোরেশন করেন।
জামতলা বাজারের মর্ডান ডেকোরেটরের মালিক আল-মামুন বলেন, সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের অফিস উদ্বোধনের জন্য স্টেজ প্যান্ডেল তৈরি করি। সমস্ত কিছু শেষ হওয়ার পর কিছু টাকা বায়না দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রবিবার বিকেল থেকে তারা লাপাত্তা। তাদের ফোনও বন্ধ রয়েছে।
এনজিওর কর্মকর্তারা লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার সংবাদ পেয়ে ঋণ প্রত্যাশীরা সোমবার সকাল থেকে এনজিও অফিসে সামনে দাঁড়িয়ে পাওনা টাকা আদায়ের জন্য কান্নাকাটি করছেন।
এ সময় সামটা গ্রামের রবিউল ইসলাম বলেন, এক লাখ টাকা ঋণ দেবে বলে ওরা আমার কাছ থেকে ১১ হাজার টাকা আমানত নিয়েছে। সোমবার ঋণের টাকা দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু এসে দেখি সবাই হাওয়া।
শেখ আব্দুল দলিল বলেন, হাড়িখালি বাজারে আমার কাঁচামালের দোকান আছে। ওরা আমার ৫০ হাজার টাকার ঋণ দিতে চেয়েল। দু‘বছরে পরিশোধ করতি হবে। মাসিক কিস্তি ২ হাজার ৫০০ টাকা। তাই ওদের আমানত দিয়েলাম সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা।
ভুক্তভোগী হাড়িখালি গ্রামের আফরোজা বেগম জানান, তার বাড়িতে কেন্দ্র গঠন করে দুই বছর মেয়াদে দুই লাখ টাকা করে ঋণ দেওয়ার কথা বলে প্রত্যেকের থেকে ২০ হাজার করে টাকা জামানত নেয় এনজিওর কর্মকর্তারা। এখন ঋণ নিতে এসে দেখেন অফিসে ফাঁকা। এনজিও কর্মকর্তাদের ফোন নম্বরও বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে অফিস ভাড়া দেওয়া বাড়ির মালিক মনিরুজ্জামান জানান, এক সপ্তাহ আগে মাসিক ২৫ হাজার টাকায় ওই এনজিওর কর্মকর্তারা বাড়িটি ভাড়া নেয়। সোমবার অফিস উদ্বোধন করা হবে। ওই সময় অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসে তিন লাখ টাকা জামানত দিয়ে চুক্তিনামা করবেন বলে তারা বলেছিলেন। রবিবার বিকেল থেকে আমার বাড়ির রুমগুলো ফেলে রেখে এনজিওর কর্মকর্তারা পালিয়েছে।
শার্শার বাগআঁচড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক বলেন, এভাবে একটি এনজিও এসে অফিস ভাড়া করেছে, তা আমার জানা ছিল না। এ ব্যাপারে কেউ যোগাযোগও করেনি।
শার্শা থানার ওসি এস এম আকিকুল ইসলাম বলেন, এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। অভিযোগও আমরা পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্তসাপেক্ষ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *