রসায়নের জনক একজন মুসলিম বিজ্ঞানী

মারুফ আবদুল্লাহ
বিজ্ঞানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ রসায়নের জনক একজন মুসলিম বিজ্ঞানী। আর তিনি হলেন জাবির ইবনে হাইয়ান। যার সম্পর্কে আমরা অনেকেই অজ্ঞ। ইউরোপীয়রা তার প্রকৃত নামকে বিকৃত করে জিবার নামে লিপিবদ্ধ করেছে। ফলে আমরা পাশ্চাত্যের জিবারকে চিনি, কিন্তু মুসলিম জাবির ইবনে হাইয়ানকে চিনি না।
তার পূর্ণ নাম আবু আবদুল্লাহ জাবির ইবনে হাইয়ান। তিনি আবু মুসা জাবির ইবনে হাইয়ান নামেও সুপরিচিত। জাবির ইবনে হাইয়ানের পূর্বপুরুষরা আরবের দক্ষিণ অংশে বসবাস করতেন। জাবির ইবনে হাইয়ানের বাবা ছিলেন একজন খ্যাতনামা চিকিৎসক। উমাইয়া শাসকদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অপরাধে তার মৃত্যুদণ্ড হয়। জাবির ইবনে হাইয়ান ৭২২ সালে তুস নগরে জন্মগ্রহণ করেন।
ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন জ্ঞানপিপাসু। খুব অল্প সময়ে তিনি গণিতের বিভিন্ন শাখায় বিশেষ পারদর্শী হয়ে ওঠেন। কর্মজীবনে জাবির ইবনে হাইয়ান বাবার মতোই চিকিৎসা পেশায় আত্মনিয়োগ করেন। তৎকালীন বিখ্যাত পণ্ডিত ইমাম জাফর সাদিকের অনুপ্রেরণায় তিনি রসায়ন ও চিকিৎসা বিজ্ঞানে গবেষণা শুরু করেন। খুব অল্প সময়ে তার সুখ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে নতুন নতুন তথ্য ও বিভিন্ন পদার্থ আবিষ্কার করতে আরম্ভ করেন এবং খুব অল্প দিনের মধ্যেই শ্রেষ্ঠ রসায়ন বিজ্ঞানী হিসাবে পরিচিত হন।
জাবির ইবনে হাইয়ান চিকিৎসাশাস্ত্র, ইউক্লিড ও আল মাজেস্টের ভাষ্য, দর্শন, যুদ্ধবিদ্যা, রসায়ন, জ্যামিতি, জ্যোতির্বিজ্ঞান ও কাব্য সম্পর্কে বিভিন্ন গ্রন্থ প্রণয়ন করেন। ইবনে নাদিমের মতে জাবির ইবনে হাইয়ান দুই হাজারেরও বেশি গ্রন্থ রচনা করেন। অতিশয়োক্তি মনে হলেও এতে আশ্চর্যের কিছু নেই তার লিখিত গ্রন্থগুলোর অনেক গড় পৃষ্ঠা ৮-১০ এর মতো। আবার কোনোগুলোর আবার মাত্র দুটি।
বিভিন্ন বিষয়ে তার লিখিত গ্রন্থাবলির মধ্যে রসায়ন ২৬৭টি, দর্শন ৩০০টি, চিকিৎসা ৫০০টি, কিতাবুত তাকদির ৩০০টি, জ্যোতির্বিজ্ঞান ৩০০ পৃষ্ঠার ১টি। তার বিখ্যাত গ্রন্থগুলোর ভেতরে অন্যতম হচ্ছে : জীবাকুশ শরকি, কিতাবুল আরকানিল আরবা, কিতাবুল আহজার, কিতাবুল কালী, কিতাবুর রাহা, কিতাবুল ফিদ্দা, কিতাবুল মিহান, কিতাবুল রিয়াদ, কিতাবুল নুহাস, কিতাবুল ইহরাক, কিতাবুল বোরহানি ইত্যাদি।
জাবির ইবনে হাইয়ানের আলকেমি সংক্রান্ত গ্রিক ভাষায় কয়েকটি গ্রন্থের সন্ধান পাওয়া যায়। তবে সব গ্রন্থের আরবি পাণ্ডুলিপির কোনো সন্ধান মিলে না। ইংরেজিতে যে কটি গ্রন্থ ভাষান্তরিত হয় তা হলঃ the sum of perfection, the investigation of perfection, the invention verity, the testament,the book of veance etc. ইংরেজ বৈজ্ঞানিক হোলমায়ার্ডের মতে, প্রায় তিনশ বছর ধরে ইউরোপীয় আলকেমির চিন্তাধারা জাবির ইবনে হাইয়ান-এর উদ্ভাবিত পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করেই সম্প্রসারিত হয়।
জাবির ইবনে হাইয়ান অনেক বড় মাপের একজন বিজ্ঞানী ছিলেন। তার জীবন ও কার্যক্রমের ওপর ইউরোপীয় বেশ কজন বিজ্ঞানী গবেষণা করেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন এইচ ই স্টাফলেটন, জে রুসকা, হোলমারড।
মূল কথা হলো, জাবির ইবনে হাইয়ান মুসলমানদের গর্ব। জাবির ইবনে হাইয়ানকে আধুনিক আলকেমির স্রষ্টা বলা হয়। তার নাম রসায়ন জগতে স্মরণীয় হয়ে রয়েছে। বিজ্ঞানের এমন কোনো শাখা নেই, যেখানে তার অবাধ বিচরণ ছিল না।
লেখক : শিক্ষার্থী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *