ইডিসিএল থেকে ৪৭৭ কোটি টাকা লোপাট, অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশ
দেশের একমাত্র রাষ্ট্র মালিকানাধীন ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ‘এসেনশিয়াল ড্রাগস কম্পানি লিমিটেড’ -ইডিসিএল থেকে ৪৭৭ কোটি টাকা লোপাট ও ৩২ অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। দুর্নীতি দমন কমিশনকে -দুদককে এ নির্দেশ দিয়ে সংস্থাটিকে দুই মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন নজরে আসলে আজ রবিবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের দ্বৈত বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত রুলসহ এ আদেশ দেন। অনয়িম-দুর্নীতির মাধ্যমে ইডিসিএল থেকে বিপুল অর্থ আত্মসাতে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা-ব্যর্থতা কেন বেআইনি হবে না এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। দুদক, ইডিসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক, স্বাস্থ্যসচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অডিট অধিদপ্তরের নিরীক্ষা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে গত শনিবার (১২ মার্চ) ‘দুর্নীতির আখড়া এসেনশিয়াল ড্রাগস: সরকারি অডিটে ৩২ অনিয়ম, ৪৭৭ কোটি টাকা লোপাট’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত প্রতিবেদনটি আদালতে পড়ে শোনান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন। সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আন্না খানম। পরে আদালত রুলসহ আদেশ দেন।
আদালত বলেছেন, কারো বিরুদ্ধে এই দুর্নীতির প্রাথমিক সত্যতা পেলে যেকোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার স্বাধীনতা থাকবে বিবাদীদের।
পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন কালের কন্ঠকে বলেন, ‘অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক চাইলে স্বাস্থ্য সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে সহযোগিতা দিতে বলেছেন আদালত। আর এসেনশিয়াল ড্রাগস কম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল)’র বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালককে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।’
আগামী ১৪ মে এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির তারিখ রেখে এ সময়ের মধ্যে বিবাদীদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে জানান এই আইন কর্মকর্তা।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এসেনশিয়াল ড্রাগস কম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটিতে সরকারি অডিটেই আর্থিক বড় দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের অডিট প্রতিবেদনে ৩২টি গুরুতর অনিয়মে সরকারি ৪৭৭ কোটি ৪১ লাখ ৯১ হাজার ৩৭৮ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে।’
প্রতিবেদেনে আরো বলা হয়, ‘স্বাস্থ্য অডিট অধিদপ্তরের নিরীক্ষায় যেসব অনিয়ম ধরা পড়েছে, তার মধ্যে আছে নিয়োগ–বাণিজ্য, টেন্ডার–বাণিজ্য, ব্যবহৃত কাঁচামালের চেয়ে ওষুধ উৎপাদন কম দেখানো, উৎপাদিত ওষুধে সঠিক মাত্রায় কাঁচামাল ব্যবহার না করে গুণগত মানের ওষুধ উৎপাদন না করা, কনডম প্রস্তুতে কাঁচামালের ঘাটতি, বনভোজনের নামে ভ্রমণ ভাতা, করোনাকালে ক্যানটিন বন্ধ থাকলেও প্রাপ্যতা না হওয়া সত্ত্বেও কর্মকর্তা-কর্মচারী-শ্রমিকদের অনিয়মিতভাবে ক্যানটিনে সাবসিডি প্রদানের নামে টাকা আত্মসাৎ।’
২০১৪ সাল থেকে এসেনসিয়াল ড্রাগস্ কম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে আছেন এহসানুল কবির জগলুল।