বিএনপিকে চিঠি দেওয়ার সঙ্গে সরকারের যোগসূত্র নেই: সিইসি
বিএনপিকে আলোচনার আমন্ত্রণ জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দেওয়া চিঠির সঙ্গে সরকারের কোনো যোগসূত্র নেই বলে দাবি করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন মনে করে গণতন্ত্রের স্বার্থে, নির্বাচনের স্বার্থে দলগুলোর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা প্রয়োজন।
মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে আকস্মিক ডাকা সংবাদ সম্মেলনে সিইসি এসব কথা বলেন।
গত বৃহস্পতিবার বিএনপিকে চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন। ওই চিঠি দেওয়া প্রসঙ্গে আজ সংবাদ সম্মেলন করে সিইসি বলেন, বিএনপিকে আমন্ত্রণ সংলাপের জন্য জানানো হয়নি, আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনার জন্য। বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানো সরকারের কোনো কূটকৌশলের অংশ নয়, সরকারের সংশ্লেষ নেই। কূটকৌশল হলে সেটা ইসির হতে পারে, সরকারের নয়। সরকারের পরামর্শেও চিঠি দেওয়া হয়নি। ইসি কোনো কূটকৌশল থেকে এই চিঠি দেয়নি।
তিনি বলেন, মূল জিনিসটা হলো- আমরা কিন্তু সংলাপে আহ্বান করিনি। সংলাপ বিষয়টি আনুষ্ঠানিক। আমরা কোনোভাবেই ওনাদের সংলাপে ডাকিনি। আমরা সুস্পষ্টভাবে বলেছি, আনুষ্ঠানিক না হলেও, অনানুষ্ঠানিক মানে সংলাপ; অন্তত অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় আপনারা আসতে পারেন। অত্যন্ত বিনীতভাবে এ আহ্বান করেছি।
সিইসি বলেন, নির্বাচন কমিশন মনে করে গণতন্ত্রের স্বার্থে, নির্বাচনের স্বার্থে বিশেষ করে দলগুলোর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা প্রয়োজন। সংসদীয় গণতন্ত্রে দলীয় শাসনটাই হচ্ছে মুখ্য। বিদ্রোহী প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী দ্বারা কখনো সরকার গঠন করা সম্ভব নয়। সেজন্য নির্বাচন কমিশনেরও লক্ষ্য আমাদের দলগুলো চর্চার মাধ্যমে আরও সমৃদ্ধ হোক, আরও সংহত হোক। দলীয় চর্চা এবং সংস্কৃতির মাধ্যমে গণতান্ত্রিক চর্চা আরও সংহত হোক। সেটা আমাদের প্রথম দিন থেকে সদিচ্ছা। সেই সদিচ্ছার প্রতিফলন প্রথম দিন থেকে সব সময় আপনাদের (গণমাধ্যমের) মাধ্যমে ঘটানোর চেষ্টা করেছি।
গত বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) বিএনপিকে চিঠি দেওয়ার আগের দিন এক কূটনীতিক ক্ষমতাসীন দলকে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছেন। ওই ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে বিএনপিকে চিঠি দেওয়ার কোনো যোগসূত্র আছে কিনা, বা অন্য কোনো চাপ আছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, চাপ যেটা বলেছেন এটা একেবারেই একটা অমূলক ধারণা। এটা একটা অমূলক ধারণা, যে এই কতক্ষণ পরপর আমাদের চাপ দেবে আর আমরা দেবে যাব, এটা হাওয়ার কথা নয়।
তিনি বলেন, পত্রটি আমাদের এখান থেকে গেছে, সরকারের ওখান থেকে নয়। সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে আমরা কোনো কাজ করব- এমনটা মনে করায় আমরা অনেক সময় ব্যথিত হই। আমরা চিন্তা-ভাবনা ও আলোচনা করেছি। আমাদের চিন্তার মধ্য দিয়ে এটি ফুটে উঠেছে যে বিএনপির মতো একটি দলকে নির্বাচনে আনতে পারলে ভালো হয়।
ইসির চিঠির বিষয়ে বিএনপি বলেছে, এ বিষয়টি সরকার ও ইসির নাটক। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আলোচনা হতে পারে- এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সিইসি বলেন, বিএনপি থেকে আমরা কোনো চিঠি পাইনি। আমি যেহেতু চিঠি দিয়েছি। যে কোনো সাড়া আমাকে চিঠির মাধ্যমেই পেতে হবে।
বিএনপির নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দাবির বিষয়ে ইসি আলোচনা করবে কী- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি এই প্রশ্নের উত্তর এখনই দিতে চাচ্ছি না। কথা হচ্ছে বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ওনারা যদি আসেন, কী আলোচনা করব সেটা সময়ই বলে দেবে। আলোচনার মধ্যেই ফুটে উঠবে ওনারা কী বললেন আমরা কী বলব। আগাম কোনো বক্তব্য বা আগাম কোনো ধারণাও আমি দিতে পারছি না।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, চিঠি দেওয়ার বিষয়টি পুরো কমিশন জানত। সবাই চিঠি অক্ষরে অক্ষরে পাঠ করেছেন। সদস্যরা কিছু সংশোধনীও দিয়েছেন। সেটাও সবাই দেখেছেন। কাজেই এটা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পত্র নয়। এটা সিইসি লিখেছেন কমিশনের পক্ষ থেকে।
গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে অনিয়মের দায়ে ১৩৩ জনের বিরুদ্ধে ইসি যে সাজা দিয়েছিল তা বাস্তবায়ন হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আমরা ১৩৩টি চিঠি দিয়েছিলাম। ৪০টির মতো জবাব পেয়েছি যে অ্যাকশন নিচ্ছে। তিনি বলেন, অনেকের কাছ থেকে আমরা জবাব পাইনি। আমরা দ্বিতীয়বার চিঠি দেব। এরপর আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিতে আমাদের সিদ্ধান্ত জানাব। অথবা অন্য কোনো বিকল্প ব্যবস্থা আমাদের কাছে কিনা, সে বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে তাদের জানাব।