অধ্যাপক ব্রিগে. জেনা. (অব.) ডা. মো. আজিজুল ইসলাম
সিজোফ্রেনিয়া মানসিক রোগটি নিয়ে আমাদের কুসংস্কার ও শ্রুতির (Stigma & Myth) অন্ত নেই। সিজোফ্রেনিয়ায় ভোগা একজন রোগীকে আমাদের সমাজে জ্বীনে ধরা, ভুতে ধরা, পরীতে ধরা, উপরিভর করা, বাতাস লাগা-আলগা লাগা, অশরীরী ভর করা ইত্যাদি কতভাবে চিহ্নিত করা হয়। ভুলে ভরা আমাদের ভাবনায় সিজোফ্রেনিয়া রোগীকে চিকিৎসার পরিবর্তে প্রতিনিয়ত অপচিকিৎসা করি (লাঠিপেটা, নাকে-মুখে মরিচ দেওয়া, তেল পড়া-পানি পড়া, ঝাড়-ফুঁক, চুল কেটে দেওয়া, পানিতে চুবানো, দড়ি দিয়ে-শেকল দিয়ে বেঁধে আলো-বাতাসহীন ঘরে আটকে রাখি)। অপচিকিৎসার মাধ্যমে শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে রোগীর মানবিক অধিকারকেও ভূলুণ্ঠিত করি। মনোরোগ চিকিৎসক হিসেবে এসব চিত্র দেখে নিজেও হতাশ বোধ করি।
আজ ২৪ মে বিশ্ব সিজোফ্রেনিয়া দিবস। সারা বিশ্বে সবার মাঝে সচেতনতা বাড়াতে এই দিবসটি উদযাপন করা হয়। আমার মতে, প্রতিদিনই আমাদের সচেতনার দিন। ডিজিটাল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তি গত উন্নতির পর আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের যুগে পদার্পণ করছি। তাই বাংলাদেশের সবাইকে বৈজ্ঞানিক চিন্তা চেতনায় সমৃদ্ধ হতে হবে।
সিজোফ্রেনিয়া রোগ সম্বন্ধে সচেতনা বৃদ্ধির জন্য নিম্নে কয়েকটি বৈজ্ঞানিক সত্য তুলে ধরছি :
১. বিশ্বে প্রায় ২৪ মিলিয়ন মানুষ এবং বাংলাদেশে প্রতি এক হাজার জনের মধ্যে ৬ জন মানুষ (প্রায় দশ লাখের ওপর) সিজোফ্রেনিয়ায় ভুগছেন।
২. নারীদের চেয়ে পুরুষের মধ্যে এই রোগের হার বেশি।
৩. সিজোফ্রেনিয়া কোন জ্বীনে-ভূতে ধরা বিষয় নয়। এই রোগের আছে বৈজ্ঞানিক কারণ/ব্যাখ্যা/বিশ্লেষণ এবং আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা।
৪. ইনসুলিন নামক হরমোনের কমতির জন্য যেমন ডায়াবেটিস হয় তেমনি ডোপামিন (Dopamine) নামক নিউরোকেমিক্যালসের অধিক মাত্রা ও কারণের ফলে সিজোফ্রেনিয়া হয়।
৫. ডায়াবেটিসের যেমন সঠিক বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা আছে, ঠিক তেমনিভাবে সিজোফ্রেনিয়ার রয়েছে সঠিক বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা।
৬. ‘The Sooner the better’ যত দ্রুত সিজোফ্রেনিয়া রোগের চিকিৎসা শুরু করা যাবে তত দ্রুত তার আরোগ্য লাভ হবে।
৭. দ্রুত সঠিক চিকিৎসায় অনেক সিজোফ্রেনিয়া সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ সম্ভব।
৮. সিজোফ্রেনিয়া রোগীর প্রয়োজন পারিবারিক-সামাজিক সহানুভূতি ও সহমর্মিতা।
৯. পরিবার-নিকটাত্মীয়দের এই রোগীদের দ্রুত চিকিৎসক/মানসিক রোগ চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে এবং ওষুধ খাইয়ে দিতে হবে। চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ এই রোগে অনেক সময় রোগী বুঝে না তিনি একটি মানসিক রোগে ভুগছেন।
১০. কুসংস্কার ভেঙে সবাইকে সিজোফ্রেনিয়া সম্বন্ধে ধারণা রাখতে হবে।
পরিবার ও সমাজ একটি মানুষের প্রথম ও প্রধান আশ্রয়স্থল। তেমনিভাবে পরিবার ও সমাজের দায়বদ্ধতাও রয়েছে। দায়বদ্ধতা রয়েছে কুসংস্কার ভেঙে সঠিক বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা গ্রহণের। আমরা সামাজিক সহানুভূতির শক্তিকে সম্মান করি কারণ সমাজই ভাঙতে পারে কুসংস্কার। আমাদের প্রয়োজন এ অবহেলিত মানসিক রোগীদের চিকিৎসা গ্রহণে সাহায্য করা ও উদ্বুদ্ধ করা।
লেখক : অধ্যক্ষ, ইউএস-বাংলা মেডিকেল কলেজ।