রোববার থেকে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা ঝোলানোর

মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে আগামী রোববার থেকে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা ঝোলানোর কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত মাধ্যমিকের শিক্ষক-কর্মচারীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরবেন না বলে জানিয়েছেন বিটিএ নেতারা। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে বিটিএ সভাপতি অধ্যক্ষ মো. বজলুর রহমান মিয়া বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মাত্র ১ হাজার টাকা বাড়িভাড়া, ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা এবং ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। অথচ একই কারিকুলামের অধীন একই সিলেবাস, একই একাডেমিক সময়সূচি, একইভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজে নিয়োজিত থেকেও আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছে পাহাড়সম বৈষম্য। তিনি বলেন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের বেতন স্কেল সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের বেতন স্কেলের একধাপ নিচে প্রদান করা হয়। সহকারী প্রধান শিক্ষকদের উচ্চতর স্কেল প্রদান না করার ফলে উচ্চতর স্কেলপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষকদের বেতন স্কেল ও সহকারী প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল সমান হওয়া সহকারী প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে দীর্ঘদিনের অসন্তোষ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরে যাওয়ার পর অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। ফলে অনেক শিক্ষক/কর্মচারী টাকা পাওয়ার পূর্বেই অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করছেন। তা ছাড়া কয়েক বছর ধরে কোনো প্রকার সুবিধা না দিয়েই অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট খাতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কর্তন করা হচ্ছে, যা অত্যন্ত অমানবিক। তাই অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কর্তনের প্রতিবাদে আমরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলসহ অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্ট অফিস ঘেরাও করতে বাধ্য হয়েছিলাম।
দুঃখের বিষয় এখনো পর্যন্ত এর কোনো প্রতিকার পাইনি।
বিটিএ সভাপতি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে প্রায় ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছিলেন, ঠিক তেমনিভাবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শিক্ষা ও শিক্ষকবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ২৬ হাজার বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করে জাতির কাছে স্মরণীয় হয়ে আছেন। তাই দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে দ্রুত জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ বাস্তবায়ন, শিক্ষায় বিনিয়োগে ইউনেস্কো ও আইএলওর সুপারিশসমূহ বাস্তবায়ন এবং সবার জন্য শিক্ষা গ্রহণের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ এখন সময়ের দাবি।
বজলুর রহমান মিয়া বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে সংবাদ সম্মেলন করে সরকারের নিকট আমাদের দাবিনামা পেশ করে আসছি এবং সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা অব্যাহত রেখেছি। পাশাপাশি নিয়মতান্ত্রিকভাবে উপজেলা থেকে শুরু করে জেলা ও বিভাগীয় শহরে সমাবেশ, মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, প্রতীকী অনশন, অবস্থান ধর্মঘট, কর্মবিরতি পালন ও কেন্দ্রীয়ভাবে মহাসমাবেশ করার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছি। কিন্তু দাবি আদায় না হওয়ায় গত ১১ জুলাই থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান শুরু করেছি। এরপরও সরকার আমাদের দাবির প্রতি কর্ণপাত না করায় আগামী রোববার (১৬ জুলাই) থেকে দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সারা দেশের বেসরকারি মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে সব শিক্ষক-কর্মচারীরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে চলমান লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *