গাজা থেকে ছোড়া একটি রকেট ইসরায়েলি শহর আশকেলনে আঘাত হানার পর একজন বাসিন্দা ও তার ছেলে নিরাপদে সরে যাচ্ছে। ছবি : চ্যাম গোল্ডবার্গ/ফ্ল্যাশ৯০
ইসরায়েল ও গাজার চলমান সংঘাতে দুই পক্ষের নিহতের সংখ্যা এক হাজার ৮০০ ছাড়িয়েছে বলে জানা গেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামাস পরিচালিত গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮৩০ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছেন চার হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। অন্যদিকে ইসরায়েলি মৃতের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়েছে।
শনিবার থেকে অন্তত এক হাজার আট জন ইসরায়েলি নিহত হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েলি দূতাবাস জানিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে দূতাবাস বলেছে, হামলায় তিন হাজার ৪১৮ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছে।
এদিকে ইসরায়েলের দক্ষিণের শহর আশকেলন থেকে বাসিন্দাদের স্থানীয় সময় বিকেল ৫টার মধ্যে সরে যেতে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল হামাস। কারণ সেখানে হামলা করা হবে বলে তারা ঘোষণা দিয়েছে।
ওই সময়সীমা পার হওয়ার পর জানা যাচ্ছে, আশকেলন শহর থেকে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে।
বিস্ফোরণের পর ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী গাজা উপত্যকায় হামাসের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে বলে এক পোস্টে জানিয়েছে। আশকেলন থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য হামাসের সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার এক মিনিট পর ইসরায়েলি বাহিনী বার্তাটি পোস্ট করেছে। এ ছাড়া সামরিক বাহিনী টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপে পোস্ট করে বলেছে, আশকেলনে সাইরেন বাজছে।
সংঘাতের বিষয়ে এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে :
ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন দেওয়ার কথা জানিয়েছেন সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।
হামাসের হামলার পেছনে ইসরায়েল দায়ী বলে অভিযোগ করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। তিনি বলেছেন, ‘যারা ইহুদিবাদী শাসকদের ওপর হামলার পরিকল্পনা করেছে আমরা তাদের হাতে চুম্বন করি।’ তবে তিনি হামাস যোদ্ধাদের হামলার পেছনে ইরানের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন।।
ইসরায়েলকে মার্কিন সমর্থন দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোহেনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। ব্লিনকেন বলেছেন, ‘সব জিম্মিদের মুক্তি অবিলম্বে নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।’
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ বলছে, ইসরায়েলে ও গাজা উপত্যকার আশপাশে দেড় হাজার হামাস যোদ্ধার লাশ পাওয়া গেছে।
জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান বলেছেন, ইসরায়েল থেকে অপহরণের পর গাজায় ‘১০০ থেকে ১৫০ জনকে জিম্মি করে রাখা হয়েছে।’
সোমবার সন্ধ্যায় হামাস হুঁশিয়ারি দেয়, যদি ইসরায়েল কোনো সতর্কতা ছাড়া বিমান হামলা চালিয়ে যায়, তাহলে তারা ইসরায়েল থেকে আটক করা জিম্মিদের হত্যা করবে। তাদের এই হুমকির তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন পশ্চিমা নেতারা।
যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত জিম্মিদের নিয়ে আলোচনায় যাবে না বলে জানিয়েছে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান ইসমাইল হানিয়াহ।
রাতভর হামাসের অন্তত ২০০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের বিমানবাহিনী। গাজা সীমান্তে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ৩৫টি ব্যাটালিয়ন মোতায়েন করা হয়েছে।
গাজা উপত্যকাজুড়ে এক লাখ ৮৭ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এই সংখ্যা আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জাতিসংঘের ৮৩টি স্কুলে এক লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ মানুষকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
ইউনিসেফ গাজার ভেতরে ও বাইরে একটি মানবিক করিডোর স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছে। কারণ ইসরায়েল জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে গাজার হাসপাতালগুলো।
গাজার জ্বালানি কয়েক দিনের মধ্যে ফুরিয়ে যেতে পারে, এতে বিদ্যুতের অভাবে অন্ধকারে ডুবে যেতে পারে গাজা উপত্যকা : জাতিসংঘ
ইসরায়েলি বোমা হামলার কারণে মিসরের রাফাহ ক্রসিং বন্ধ হয়ে গেছে। এটাই অবরুদ্ধ গাজা থেকে মানুষের বেরিয়ে আসার একমাত্র পথ। এ ছাড়া ইসরায়েলও গাজার সঙ্গে তাদের সীমানা বন্ধ করে দিয়েছে।
ইসরায়েল ফিলিস্তিনের মধ্যে সংঘাতের কারণে মধ্যপ্রাচ্য থেকে জ্বালানি তেলের সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে এমন উদ্বেগের কারণে তেলের দাম বেড়ে গেছে।
সূত্র : বিবিসি