মানসিকভাবে সুস্থ কর্মী মানেই সুস্থ পরিবেশ

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস আজ। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে এ দিনটি। এ বছরের বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য হলো— ‘মানসিক স্বাস্থ্য সর্বজনীন মানবাধিকার’। মানসিকভাবে সুস্থ কর্মী মানেই সুস্থ পরিবেশ। আর সুস্থ পরিবেশ মানেই সুন্দর একটি প্রোডাশন বা ফলাফল। সবচেয়ে বড় কথা জীবনের সব সেক্টরেই মানসিক সুস্থতা প্রয়োজন। হোক সেটা ঘরে কিংবা বাইরে। অন্যদিকে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে অনেকের মধ্যেই ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। ফলে এ বিষয়টি নিয়ে অনেকেই নানাভাবে সংশয়ে থাকেন। তাই সবার আগে জানতে হবে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে। এক সমীক্ষায় জানা গেছে, এদেশের ১৬.০১% অর্থাৎ ১/৬ ভাগ মানুষ মানসিক রোগে ভুগছেন। এ সংখ্যাটি নেহাত কম নয় এবং চোখ বড় করার মতো। তাই আমাদের অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে হবে এ বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মৌলিক চাহিদা ও মানবাধিকার প্রশ্নে। সন্তান, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী, পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজনের জন্য আমাদের হাতকে সম্প্রসারিত করতে হবে। মানসিক রোগীকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের সুস্থ জীবনযাপনের জন্য সব ধরনের সহায়তা প্রদান আবশ্যক। তাদের নিজস্ব মতামত, দৃষ্টিভঙ্গিকে সম্মান প্রদান করা অবশ্যই উচিত। মানসিক অসুস্থতা মানেই উন্মাদগ্রস্ততা নয়। চলমান জীবনে প্রতিটি মানুষের জীবনে এ ধরনের সংকট জটিলতা acut stress disorder কিংবা reactive depression। প্রাথমিক অবস্থায় সমস্যার সমাধান না হলে দীর্ঘমেয়াদি মানসিক অস্থিরতা চলে আসতে পারে। তাই একা একা পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে না পারলে মনের চিকিৎসার জন্য সচেতনতা বাড়ানো উচিত। যেমনটি করেছেন ডায়ানা, চালর্স। মনোরোগ চিকিৎসক, থেরাপিস্ট বন্ধুর মতো হাত বাড়িয়ে দেবেন, সংকট উত্তরণের বৈজ্ঞানিক পন্থাটি খুঁজে দেবেন।
মনে রাখতে হবে, সব ধরনের মানসিক অসুস্থতা কিংবা সংকটের বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা এবং সমাধান রয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্য শব্দটিতে অনেকেই চমকে উঠেন। না, চমকানোর কোনো কারণ নেই। কারণ ‘মানসিক স্বাস্থ্য’ মানেই মানসিক কোনো রোগ নয়। জেনে রাখুন, মানসিক রোগ না থাকাকেই মানসিক স্বাস্থ্য বলে না। একটি বিষয় মনে রাখা ভালো যে, মানসিক স্বাস্থ্যের বিভিন্ন স্তর রয়েছে। এমন কোনো বৈশিষ্ট্য নেই যা মানসিক সুস্বাস্থ্যের প্রমাণ হিসেবে এককভাবে সুস্পষ্ট। বলা যায়, মানসিক সুস্থতা ও অসুস্থতার মধ্যে পরিচ্ছন্ন কোনো বিভাজন রেখা নেই। একজন সুস্থ মানসিক স্বাস্থ্যসম্পন্ন ব্যক্তির বৈশিষ্ট্যগুলো কী কী, উত্তর পেলেই সুস্থতা সম্পর্কে ধারণা লাভ করা সহজ হবে। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে মন কী, কোথায়? দেহ আমরা দেখি, মন দেখি না। আবেগ, অনুভূতি, আচার-আচরণ এবং নানাবিধ ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমেই ‘মনের’ চিত্রটি বাইরে বেরিয়ে আসে, প্রতিভাত হয়। দেহের আছে সুস্থতা, অসুস্থতা। মনেরও তেমনি রয়েছে সুখ, অসুখ। দেহ অসুস্থ হলে দেহের কলকব্জায় ওলটপালট কিছু ঘটলেই আমরা উদ্বগ্নি হই, ছুটে যাই চিকিৎসকের কাছে।
এতক্ষণে নিশ্চয় একটি স্বচ্ছ ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে, মানসিক রোগী মানেই পাগল নয়। ‘পাগল’ শব্দটি ব্যবহার করে আমরা একটি সামাজিক অপরাধ করছি। কারণ এতে সামাজিক আচরণ স্থূল হয়ে পড়ছে। এই স্থূলতার কারণে মন নিয়ে কারও সমস্যা হলে হীনম্মন্যতায় আক্রান্ত হচ্ছে, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করে সুস্থ হওয়ার পথে ভ্রান্ত একটি সামাজিক দেয়ালে বাধা পাচ্ছে। লোকলজ্জার বক্রহাসি, কটাক্ষ উপেক্ষা করে সাধারণ নিউরোটিক রোগীরা মানসিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের জন্য যেতে পারছে না। সুতরাং এ বিষয়ে বাড়াতে হবে সামাজিক সচেতনতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *