বিএনপি-জামায়াত ‘পাল্টায়নি’: কূটনীতিকদের বললেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “২৮ অক্টোবর যা ঘটেছে তাতে আমরা মর্মাহত। যদিও অতীতে বিএনপি-জামায়াতোর সহিংসতার অভিজ্ঞতা থাকায়, আমরা অতোটা বিস্মিত হইনি।
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে কূটনীতিকদের অবহিত করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনসহ সরকারের তিন মন্ত্রী ও এক উপদেষ্টা।
সোমবার বিকাল ৪টার দিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই আনুষ্ঠানিক ব্রিফিং শুরু হয়।
ব্রিফিংয়ের সূচনা বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “২৮ অক্টোবর যা ঘটেছে তাতে আমরা মর্মাহত। যদিও অতীতে বিএনপি-জামায়াতোর সহিংসতার অভিজ্ঞতা থাকায়, আমরা অতোটা বিস্মিত হইনি।
“দুঃখের সঙ্গে বলছি, আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম তারা বদলাবে, কিন্তু তারা পাল্টায়নি।”
জাতীয় নির্বাচনের আগে ‘সরকার পতনের’ এক দফা দাবিতে শনিবার সমাবেশ ডেকেছিল বিএনপি। ২০ শর্তে তাদের সমাবেশের অনুমতি দেয় পুলিশ।
শনিবার দুপুরের আগে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ শুরুর পর কাছেই কাকরাইল মোড়ে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়। শান্তিনগর, নয়াপল্টন, বিজয়নগর, ফকিরাপুল, আরামবাগ এবং দৈনিক বাংলা মোড় এলাকা রণক্ষেত্রে রূপ নেয়।
সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়। পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দেওয়া হয়, ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করা হয় আরো ডজনখানেক যানবাহন। হামলা করা হয় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে।
বিএনপি-জামায়াত ‘পাল্টায়নি’: কূটনীতিকদের বললেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
দৈনিক বাংলা মোড়ে পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সংঘাতে প্রাণ যায় যুবদলের মুগদা থানার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নেতা শামীম মোল্লার।
সংঘর্ষের মধ্যে পণ্ড হওয়া সমাবেশ থেকেই রোববার সারাদেশে হরতালের ডাক দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেই হরতালেও দেশের বিভিন্ন স্থানে যানবাহন পোড়ানো হয়, সহিংসতায় প্রাণ যায় অন্তত একজনের।
ফায়ার সার্ভিসের হিসাবে শনিবার দুপুর ১টা থেকে রোববার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সারাদেশে আগুন দেওয়ার মোট ৪৫টি ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৩৭টি ঘটনায় পোড়ানো হয়েছে যানবাহন। এছাড়া পুলিশ বক্স, বিদ্যুৎ অফিস, বাস কাউন্টার এবং রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি ও জামায়াত পরের বছর দিনটিতে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালনের কর্মসূচিতে বাধা পেয়ে লাগাতার অবরোধ ডেকেছিল।
বিএনপির নতুন কর্মসূচি: সংঘাতের পথেই রাজনীতি?
উত্তাপ গড়াল প্রাণঘাতী সংঘাতে, হরতাল বাড়াল উৎকণ্ঠা
তিন মাসের অবরোধে নাশকতায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়, পোড়ানো হয় বহু গাড়ি। আন্দোলনে সরকার হঠাতে ব্যর্থ হওয়ার পর ২০১৮ সালে তারা আবার নির্বাচনে ফেরে। কিন্তু এবার সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আবারও তারা আন্দোলন করছে।
তাদের সেই এক দফার আন্দোলনে দেশে হরতাল ফিরেছে প্রায় দুই বছর পর। রোববারের হরতাল শেষে দলটি মঙ্গল-বুধ-বৃহস্পতি তিন দিন সারা দেশে সর্বাত্মক অবরোধ ডেকেছে। আর এসব কর্মসূচি মানুষের মনে ফিরিয়ে আনছে ২০১৫ সালের স্মৃতি।
এ নিয়ে জনমনে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, সে কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বিদেশি কূটনীতিকদের বলেন, “আমরা আশা করেছিলাম, তারা শান্তিপূর্ণ হবে, কিন্তু তারা পাল্টায়নি। তারা অতীত থেকে শিক্ষা নেয়নি।”
ঢাকায় প্রায় সব বিদেশি মিশনের প্রধানদের পাশাপাশি জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানরা ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।
আর সরকারের দিক থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *