দিনভর গণনা শেষে পাগলা মসজিদের সিন্দুকে মিলল প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা

৩ মাস ২০ দিন পর শনিবার কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের নয়টি দানসিন্দুক খুলে মিলেছে ৬ কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা
৩ মাস ২০ দিন পর শনিবার কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের নয়টি দানসিন্দুক খুলে মিলেছে ৬ কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকাছবি: প্রথম আলো
দিনভর গণনা শেষে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্স থেকে এবার মিলেছে ৬ কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা। এটা দানবাক্স থেকে একসঙ্গে পাওয়া সর্বোচ্চ পরিমাণ টাকা।
রাত সাড়ে ১০টায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাগলা মসজিদ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ।
এর আগে শনিবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে পাগলা মসজিদের নয়টি সিন্দুক খুলে মেলে ২৩ বস্তা টাকাসহ বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার ও বৈদেশিক মুদ্রা। ৩ মাস ২০ দিন পর খোলা হয় পাগলা মসজিদের দানসিন্দুকগুলো। সকাল থেকে রূপালী ব্যাংকের ৬০ জন কর্মকর্তা, মাদ্রাসার ১৩৪ জন খুদে শিক্ষার্থী, মাদ্রাসার ১০ জন শিক্ষক ও পাগলা মসজিদের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ২২০ জন গণনার কাজ শুরু করেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ গণনা শেষ হয়।
পাগলা মসজিদে দুপুর পর্যন্ত ৪ কোটি টাকা গোনা হলো
জেলা শহরের নরসুন্দা নদীতীরের ঐতিহাসিক মসজিদটিতে নয়টি লোহার দানসিন্দুক আছে। প্রতি তিন থেকে চার মাস পরপর এই সিন্দুক খোলা হয়।
এর আগে গত ১৯ আগস্ট মসজিদের আটটি দানবাক্স খোলা হয়েছিল। তখন ২৩ বস্তায় রেকর্ড ৫ কোটি ৭৮ লাখ ৯ হাজার ৩২৫ টাকা এবং বৈদেশিক মুদ্রা, সোনার গয়না ও হীরা পাওয়া গিয়েছিল।
টাকা ছাড়াও মসজিদে নিয়মিত হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র দান করেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা অসংখ্য মানুষ।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখের নেতৃত্বে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক কাজী মহুয়া মমতাজের উপস্থিতিতে সকাল সাড়ে সাতটায় আটটি দানসিন্দুক খুলে ২৩ বস্তায় প্রচুর টাকা পাওয়া গেছে। প্রথমে টাকাগুলো লোহার সিন্ধুক থেকে বস্তায় ভরা হয়। পরে মেঝেতে ঢালা হয়। পরে চলে গণনা।
সিন্দুক খোলার সময় উপস্থিত ছিলেন কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলাম, মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শওকত উদ্দিন ভূঁইয়াসহ মসজিদ কমিটির অন্য সদস্যরা।
পাগলা মসজিদের সিন্দুক খুলে ২৩ বস্তা টাকা-স্বর্ণালংকার, চলছে গণনা
পাগলা মসজিদের সিন্দুক খুলে ২৩ বস্তা টাকা-স্বর্ণালংকার, চলছে গণনা
জানা যায়, প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এসে দান করছেন এই মসজিদে। যাঁরা দান করতে আসেন, তাঁরা বলে থাকেন, এখানে দান করার পরে নাকি তাঁদের আশা পূরণ হয়েছে। এ কারণেই দিন দিন দানের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জেলা প্রশাসক ও মসজিদ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ছয়তলাবিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন পাগলা মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য একটি মেগা প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হয়েছে। এতে মসজিদ-মাদ্রাসাসহ অর্ধলাখ মুসল্লি যাতে একত্রে নামাজ আদায় করতে পারে এ রকম আকর্ষণীয় একটি ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একসঙ্গে পাঁচ হাজার নারীরও আলাদাভাবে নামাজের ব্যবস্থা থাকবে। ইতিমধ্যে এর দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ১২টি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশগ্রহণ করেছে। সেটির পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে রুয়েট প্রকৌশলীদের। তাঁরা যাচাই-বাছাই করে ডিজাইন ও নকশা চূড়ান্ত করে দিলেই দ্রুত কাজ শুরু হয়ে যাবে। এতে প্রাথমিক খরচ ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। কাজ শুরু হলে এর কম–বেশিও হতে পারে। তিনি বলেন, তাঁদের কাছে বর্তমানে প্রায় অর্ধেকের কিছু বেশি টাকা রয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে তাঁরা কাজ ধরতে পারবেন। তবে কাজ শুরু করলে বাকি টাকাও ব্যবস্থা হয়ে যাবে বলে তিনি আশা করছেন।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, সকাল থেকে টাকার সিন্দুক খোলা, বস্তায় ভরে এনে গণনা শেষে ব্যাংক পর্যন্ত সব টাকা নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত সার্বিক নিরাপত্তার কাজে তিনিসহ পুলিশ সদস্যরা যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *